কেন পৃথিবীতে ফিরে আসছে না ডাইনোসর

বেশিরভাগ ডাইনোসর দেখতে অতিকায়, আকারে দানবীয়।ছবি: সংগৃহীত

অ্যানিমেশন মুভি রিওর প্রধান চরিত্র একটি পাখি। স্পিক্স’স ম্যাকাও প্রজাতির এই পাখির নাম ব্লু। বাস্তবে বনে ব্লুর মতো নীলরঙা স্পিক্স’স ম্যাকাওদের বিলুপ্তি হয়েছিল ২০১৮ সালে। তখন হাতে গোনা কয়েকটি পাখি খাঁচাবন্দী অবস্থায় বেঁচে ছিল। অনেকটা ভাগ্যের জোরে গত বছর স্পিক্স’স ম্যাকাওগুলো আবার অরণ্যে ফিরে আসতে পেরেছে। কিন্তু একসময় পুরো পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করা ডাইনোসররা এই পাখির মতো ‘কামব্যাক’ করতে পারল না। কেন?

৬.৬ কোটি বছর আগে একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবী তছনছ হয়ে গিয়েছিল। ডাইনোসরদের বিলুপ্তির জন্য প্রধানত এই গ্রহাণু দায়ী। গ্রহাণুটি আসলে মহাকাশে ঘুরতে থাকা কোনো ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রহের টুকরো। গ্রহাণুর ধ্বংসযজ্ঞ শেষে পৃথিবীতে অন্য প্রজাতির প্রাণীরা টিকে গেলেও চিরতরে বিদায় নিয়েছে ডাইনোসররা। এককালে পৃথিবীজুড়ে আধিপত্য করা এই প্রাণী নিচের ছয় কারণে আর ফিরতে পারেনি।

পৃথিবী বদলে গেছে

ঘন রেইনফরেস্ট আর খোলা তৃণভূমিতে ভরপুর ছিল ডাইনোসরের পৃথিবী। প্রায় ৫৫ ফুট লম্বা হতে পারত এরা। দানবীয় আকৃতির তৃণভোজী ডাইনোসরদের বাঁচার জন্য বিশাল আকারের অনেক গাছ প্রয়োজন হতো। কিন্তু গ্রহাণুর আঘাতের পরে পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ শুরু হয়। একের পর এক দাবানল, ভূমিকম্প আর অ্যাসিড–বৃষ্টি বনে-জঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। কোনো এক সময় পৃথিবীর ক্ষত সেরে উঠেছে। কিন্তু ডাইনোসরদের পরিচিত বিস্তীর্ণ বনভূমি আর ফিরে আসেনি।

আরও পড়ুন

প্যানজিয়ার ভাঙন

এখনকার সময়ের সাতটি মহাদেশেই ডাইনোসররা পা রেখেছে। যেমন সিলেটে পাওয়া গেছে ডাইনোসরের ফসিল। প্রায় ২৩ কোটি বছর আগে ডাইনোসরদের যুগের শুরুতে সাতটি মহাদেশ ছিল একসঙ্গে একটি সুপারমহাদেশ হিসেবে। এই সুপারমহাদেশের নাম ছিল প্যানজিয়া। ফলে পুরো পৃথিবীতে ডাইনোসরের বিভিন্ন প্রজাতির বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু প্যানজিয়া ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। গ্রহাণুর তাণ্ডব শেষে প্রতিটি মহাদেশের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। তার জন্য জীববৈচিত্র্য ভিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর ডাইনোসরের মতো কোনো প্রাণীর পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কঠিন হয়ে যায়।

দানবীয় আকৃতির খেসারত

ডাইনোসরদের মধ্যে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে আছে মাংসাশী টাইরানোসরাস-রেক্স। প্রায় ৭০০০ কেজি ওজনের ১২ ফুট লম্বা টি রেক্সদের ছাড়াও প্রায় ১০০০ প্রজাতির ডাইনোসর শনাক্ত করেছেন গবেষকেরা। আকারে মুরগির মতোও ডাইনোসর ছিল। এমনকি ১০০ টন ওজনের ডাইনোসরদের চিহ্নিত করা গেছে। কিন্তু এসব প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর আকার সাধারণত এখনকার প্রাণীদের থেকে বহুগুণ বেশি। বিপদের সময় ছোট জায়গায় লুকিয়ে থাকতে পারত ছোট্ট প্রাণীরা। তাই বিশাল আকৃতির ডাইনোসরদের জন্য মোটেও সুবিধাজনক ছিল না।

শিল্পীর কল্পনায় ডাইনোসর
ছবি: সংগৃহীত

জিনের দুর্বলতা

মানুষের উচ্চতা, ওজন থেকে শুরু করে চুলের রঙে পর্যন্ত পার্থক্য দেখা যায়। জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে হয় এসব ভিন্নতা। একটি প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য থাকা খুব জরুরি। যেকোনো নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে জিনগত বৈচিত্র্য। গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে গ্রহাণুর আঘাতের অনেক আগে থেকে বেশির ভাগ ডাইনোসর প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য কমে এসেছিল। ফলে বড়সড় দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ডাইনোসররা।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মুখোমুখি

ডাইনোসরদের বিলুপ্তিতে শূন্যস্থান তৈরি হয় প্রকৃতিতে। সময়ের সঙ্গে সেই শূন্যস্থান পূরণ হয় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায়। ডাইনোসরদের ফিরে আসার আগেই স্তন্যপায়ী প্রাণীরা পৃথিবীতে নতুন করে রাজত্ব শুরু করে। স্থায়ীভাবে বদলে যাওয়া নতুন পরিবেশে বেশি সুবিধা পায় স্তন্যপায়ী প্রাণীরা। ফলে ক্ষীণ হয়ে যায় ডাইনোসরদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা।

আরও পড়ুন

কিছু প্রজাতির ডাইনোসরের সঙ্গে পাখির অনেক মিল পাওয়া গেছে। চীনে পাওয়া গেছে ডানাওয়ালা একটি ডাইনোসরের ফসিল। এই জীবাশ্ম থেরোপড ডাইনোসরের, যেগুলো পাখিসদৃশ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ডাইনোসররা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তবে কল্পনা করা যায়, ডাইনোসররা রেখে গেছে বংশধর।