চলন্ত গাড়ি দেখলে কুকুর কেন ধাওয়া করে
তোমার কি কখনো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, কোনো গলি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছ, হঠাৎ একটি কুকুর তোমার পেছনে দৌড়াতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রাস্তায় এমন দৃশ্য খুবই সাধারণ। কুকুরগুলো চলন্ত গাড়ি, মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেলকে ধাওয়া করে। কখনো কখনো দৃশ্যটা রিলসে দেখতে মজাদার মনে হলেও সব সময় এটা মজাদার নয়। কিন্তু কুকুরগুলো এমন করে কেন? এটা কি রাগ থেকে, নাকি নিছক উত্তেজনা, নাকি এর পেছনে সম্পূর্ণ অন্য কোনো কারণ আছে?
চলন্ত গাড়ি, মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেলকে দেখলে ধাওয়া করে গলি কিংবা রাস্তার কুকুরেরা। এমনটা সচরাচর দেখা যায় আমাদের দেশে। কিন্তু জার্মানি, কানাডা, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে যখন বাইকাররা পাহাড় কিংবা জঙ্গলে সাইকেলিং করে, তখন তারা বন্য কুকুর দিয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়। বেশ কয়েকটি কারণে এরা এমন আচরণ করে। এর মধ্যে একটি হলো এদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বা শিকারের প্রবৃত্তি থেকে।
কুকুর আমাদের আশপাশে থাকলেও এরা কিন্তু শিকারি প্রাণী। বনজঙ্গলে শিকার করা এদের সহজাত স্বভাব। বাসাবাড়িতে লালন–পালন করা কুকুরগুলোর চেয়ে রাস্তার কুকুরদের মধ্যে গাড়িঘোড়া ধাওয়া করার প্রবণতা এ জন্য বেশি দেখা যায়।
কুকুরদের মধ্যে সহজাতভাবেই নড়াচড়া করা জিনিসের পেছনে ছোটার ও ধরার একটি প্রবৃত্তি কাজ করে। এর প্রমাণ আমরা পাই যখন ওদের দিকে কোনো বল ছুড়ে দেওয়া হয় এবং ওরা সেটা খুঁজে নিয়ে আসে। চলন্ত গাড়ি, সাইকেল, এমনকি দৌড়ানো মানুষকেও এরা একধরনের সম্ভাব্য শিকার হিসেবে দেখে। চলন্ত গাড়ির চাকার দ্রুত ঘোরা বা গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ এদের শিকারের প্রবৃত্তিকে আরও জাগিয়ে তোলে। এরা গাড়িটিকে তাড়া করে থামাতে চায়, ঠিক যেমন কোনো প্রাণী শিকারকে তাড়া করে।
কুকুরেরা দল বেঁধে চলে। অনেকগুলো কুকুর মিলে নিজেদের একটি এলাকা দখল করে রাখে। এই এলাকাকে এরা নিজেদের রাজত্ব মনে করে। এরা সব সময় সজাগ থাকে যেন অন্য কোনো কুকুর বা অপরিচিত প্রাণী এদের এই এলাকায় প্রবেশ না করে। যখন কোনো চলন্ত গাড়ি বা সাইকেল এদের এই এলাকার মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে যায়, তখন এরা সেটিকে অনুপ্রবেশকারী বা হুমকি হিসেবে দেখতে পারে। এই হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এরা ধাওয়া করে বা ঘেউ ঘেউ করে জানিয়ে দিতে চায় যে এটি এদের এলাকা এবং এখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটি এদের অঞ্চলের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার একটি সহজাত উপায়। মূলত এসব কারণে কুকুর ধাওয়া করে থাকে চলন্ত যানবাহনকে।
এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কী করা উচিত, সেটি জেনে রাখা দরকার। যেহেতু কুকুরের এটি সহজাত স্বভাব এবং এটা করে ওরা আনন্দ পায়, সেহেতু এটা থেকে কুকুরদের বিরত রাখার কোনো উপায় নেই। এর মানে এই নয় যে কিছুই করা যাবে না। ফাঁকা রাস্তা বা জঙ্গলের নির্জন পথে সাইকেল চালানোর সময় হঠাৎ দলবদ্ধ কুকুরের ধাওয়া করাটা ভয়ের হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে না গিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। কুকুর যখন ধাওয়া করে, তখন ভয় পাওয়া বা গতি বাড়ানো কুকুরদের আরও উত্তেজিত করতে পারে। এরা এটিকে শিকারের পালানোর চেষ্টা মনে করতে পারে এবং আরও জোরে ধাওয়া করতে পারে। তাই সবচেয়ে জরুরি হলো শান্ত থাকা এবং গতি না বাড়ানো। যদি সম্ভব হয়, সাবধানে ধীরে ধীরে সাইকেলের গতি বাড়ানো। আর বারবার পিছে না তাকানো। না থেমে একটানা কিছু পথ গেলে কুকুর ধাওয়া দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
অনেক সময় জোরে শব্দ করলে কুকুরেরা চমকে যায় এবং ধাওয়া করা বন্ধ করে। যদি সাইকেলের হর্ন থাকে, তবে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি হর্ন না থাকে, তবে জোরে ‘যা’ ‘যা’ বা ‘থাম’ বলে আওয়াজ করতে হবে। আর কুকুরের চোখে সরাসরি তাকানো উচিত নয়। কুকুররা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে। তাই কুকুর ধাওয়া করলে এদের দিকে সরাসরি তাকানো যাবে না।
দলবদ্ধ কুকুর অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে। যদি দেখো অনেক কুকুর একসঙ্গে ধাওয়া করেছে, তবে সাইকেল থেকে নেমে যাও। সাইকেলটিকে তোমার ও কুকুরদের মধ্যে ঢাল হিসেবে ব্যবহার কর। ধীরে ধীরে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার চেষ্টা করো।