পিরিয়ডের সময় ভালো থাকব যেভাবে

মা-বাবার মতো ‘বড় মানুষ’ হয়ে উঠতে উঠতে একজন কিশোরী এবং একজন কিশোরের দেহে আসে নানান পরিবর্তন। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মেই একজন কিশোরীর পিরিয়ড শুরু হয়, যা জীবনের একটা লম্বা সময় পর্যন্ত প্রতি মাসের এক স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। ক্লাস, পরীক্ষা, খেলাধুলা, বেড়ানো—এ সময় সবই চলতে পারে অনায়াসে। পিরিয়ড নিতান্ত সহজ এবং স্বাভাবিক একটি বিষয় হলেও এ সময়টা নিজের একটু বাড়তি খেয়াল রাখা চাই-ই চাই। না হলে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় থাকে।

স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাস্‌সুম বলেন, ‘পিরিয়ড নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারণার প্রচলন রয়েছে। পিরিয়ডকে অত্যন্ত গোপনীয় এক বিষয় মনে করেন অনেকেই। অনেক কিশোরীই তাই বিষয়টি নিয়ে মন খুলে কথা বলতে পারে না। জানতে পারে না বহু প্রয়োজনীয় বিষয়। আর এসব বিষয় সঠিকভাবে জানা না থাকার কারণে জীবাণুর সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে তারা।’

পিরিয়ডের সময়ের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই।

পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই

পিরিয়ডের সময় অবশ্যই চাই স্যানিটারি ন্যাপকিন। খুব একটা রক্তক্ষরণ না হয়ে থাকলেও চার-ছয় ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলে নেওয়া জরুরি। ব্যবহৃত ন্যাপকিনটি কোনো কাগজ বা টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলতে হবে। মনে রাখবে, স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনো টয়লেটে বা জলাশয়েও ফেলতে নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ ন্যাপকিন ব্যবহার করবে না। আরও মনে রাখবে, কাপড় কখনোই স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিকল্প নয়। পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন বা এ ধরনের যা কিছুই ব্যবহার করা হয়, এগুলো স্পর্শ করার আগে এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে ভুলো না।

আরও পড়ুন

পরিচ্ছন্নতায় আরও যা

পিরিয়ডের সময় সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। না হলে ঘামে ভিজে জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে। এ সময় রোজ গোসল করা উচিত। স্বস্তি পেতে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে গোসলের জন্য। যোনিপথ বা এর আশপাশে কখনোই সাবান বা কোনো রাসায়নিক প্রয়োগ করতে নেই। তাতে এই অংশের স্বাভাবিক সুরক্ষা নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে বাড়বে সংক্রমণের ঝুঁকি। বরং দেহের এই অংশ কেবল পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যথেষ্ট। যেকোনো সময়ই দেহের এই অংশ পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখবে, পানির প্রবাহ বা পরিষ্কারের কাজটি যেন সামনে থেকে পেছনের দিকে হয়। উল্টোটা, অর্থাৎ পেছন থেকে সামনের দিকে পরিষ্কার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

উচ্ছলতা হারিয়ো না

পিরিয়ড নিয়ে মন খারাপ বা ভয়ের কিছু নেই। পিরিয়ডের সময়ও তুমি বিশ্ব জয় করতে পারো অনায়াসে। ঘরের কোণে মনমরা হয়ে বসে থেকো না, খুব বেশি সময় শুয়েও থেকো না। হাঁটাচলা করবে, রোজকার কাজও করবে। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যেকোনো ধরনের খেলাধুলা আর শরীরচর্চা করতে পারবে তুমি এ সময়েও। তাতে ব্যথাও কমবে, মন খারাপ ভাবটাও কমবে। বিশেষত রোজ ৪০-৫০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস খুব ভালো। তবে যেকোনো ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই শরীরের কথা শুনতে হবে। শরীরকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার ক্ষেত্রে দড়িলাফ করতে নিষেধ করা হয়। মাসিকের সময় ভারী ব্যায়াম করবে না, অতিরিক্ত ভারী ওজন তুলবে না। পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন এ সময়। মিষ্টিজাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড এড়িয়ে হোক সুষম পুষ্টি। তাতে সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়বে। হরমোনের প্রভাবে এ সময়টায় মন হতে পারে উচাটন। আসতে পারে অবসাদ। এমন সমস্যা এড়াতে নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ধ্যানের অভ্যাস করতে পারো। কাছের মানুষদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারো। রাত না জেগে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমানোও প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

যা কিছু সমস্যা

পিরিয়ড হলে মাথাব্যথাও হতে পারে
ছবি: সংগৃহীত

তলপেট বা কোমরব্যথা হলে দুবেলা করে উষ্ণ সেঁক দেওয়া যেতে পারে মিনিট কুড়ির জন্য। এ সময় মাথাব্যথাও হতে পারে। যেকোনো ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারবে। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে কিংবা মাসিক অনিয়মিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

আরও পড়ুন