স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিংয়ের এ টু জেড

প্রোগ্রামিং ভাষা

আমরা খেয়াল করলে দেখবো, দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটারকে আমাদের মতো করে কাজের নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমরা আগামী পর্বগুলোতে বিভিন্ন প্রোজেক্ট তৈরি করব। এগুলো কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে আলোচনা করব।

প্রোগ্রামিং ভাষা

কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলতে হবে কম্পিউটারের ভাষাতে, আর এটিই হলো প্রোগ্রামিং ভাষা। পৃথিবীতে প্রায় ৫০০ প্রোগ্রামিং ভাষা আছে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অসংখ্য প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভাবন হয়েছে। একটি প্রোগ্রামিং ভাষা অপর একটি প্রোগ্রামিং ভাষা থেকে কঠিন বা সহজ মনে হতে পারে। তবে নিয়মিত চর্চা করলে কঠিন কাজও সহজ মনে হবে। প্রোগ্রামিং ভাষা অসংখ্য হলেও জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করেই অধিকাংশ প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।

যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা একগুচ্ছ নির্দেশাবলি বা নির্দেশাবলির একটি সেটকে প্রোগ্রাম বলা হয়। অনেকগুলো ভাষার মধ্য থেকে আমরা বিশেষ কিছু বা প্রচলিত কিছু প্রোগ্রামিং ভাষার পরিচয় জানব এই লেখায়। পাশাপাশি জানব প্রোগ্রামিং জগতের কিছু প্রচলিত শব্দ এবং এর অর্থ।

C (সি)

কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ বা নির্দেশ দেওয়ার জন্য অধিকাংশ সময় সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে সি প্রোগ্রামিং ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে এই সি প্রোগ্রামিং দিয়ে।

C++ (সি প্লাস প্লাস)

সি প্রোগ্রামিং ভাষার ওপর ভিত্তি করেই এই সি প্লাস প্লাস ভাষা তৈরি করা হয়েছে। ওয়েব ব্রাউজার, ওয়ার্ড প্রসেসর এবং অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন অংশ তৈরি করার কাজে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

Java (জাভা)

বিশাল আকারের অ্যাপলিকেশন ও গেম তৈরির কাজে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গেম মাইনক্রাফ্‌ট (Minecraft) তৈরি করা হয়েছিলো জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে।

Scratch (স্ক্র্যাচ)

ছোট বড় যে কোন বয়সী কেউ প্রোগ্রামিং শিখতে চাইলে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করতে পারে। অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষা থেকে এটির বিশেষ পার্থক্য হলো, এটি ব্লকভিত্তিক প্রোগ্রামিং ভাষা। অন্যান্য ভাষাগুলোতে যেখানে টাইপ করে করে প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয়, এখানে সেই কাজগুলো করা যায় আগে থেকেই তৈরি করা ব্লক ব্যবহার করে।

Python (পাইথন)

পাইথন ব্যবহার করে প্রায় সব ধরনের কাজের প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়। স্ক্র্যাচ দিয়ে প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে পবর্তর্তীতে অনেকেই পাইথন প্রোগ্রামিং শেখে। এআইভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরির জন্য পাইথন বর্তমানে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।

PHP (পিএইচপি)

বর্তমানে পৃথিবীতে যত ওয়েবসাইট রয়েছে, তার ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি করা হয়েছে পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে। পিএইচপি দিয়ে সাধারণ ওয়েবসাইট যেমন তৈরি করা যায়, তেমনি জটিল ও কঠিন, নানা ধরনের অ্যাপলিকেশন তৈরি করা যায়।

JavaScript (জাভা স্ক্রিপ্ট)

জাভা এবং জাভাস্ক্রিপ্ট একেবারেই আলাদা দুটি প্রোগ্রামিং ভাষা। ওয়েবসাইট এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের নানা কাজে জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ অ্যাপলিকেশন তৈরিতেও এটি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

প্রোগ্রামিং এর সাথে প্রচলিত কিছু শব্দ

প্রোগ্রামিং জগতে কিছু শব্দ খুবই প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, ‘কোড’ বলতে বোঝানো হয় প্রোগ্রাম লেখার নির্দিষ্ট নির্দেশনা। ‘বাগ’ হলো কোনো প্রোগ্রামে থাকা ত্রুটি বা সমস্যা। ‘ডিবাগিং’ হলো সেই ত্রুটি খুঁজে বের করে ঠিক করার প্রক্রিয়া। এছাড়া ‘অ্যালগরিদম’ শব্দটি দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধানের ধাপসমূহ বোঝানো হয়। ‘ফাংশন’, ‘লুপ’, ‘ক্লাস’, ‘অবজেক্ট’ ইত্যাদিও খুবই সাধারণ শব্দ, যেগুলো প্রোগ্রামিং শিখতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই ব্যবহৃত হয়। এই শব্দগুলোর সঠিক অর্থ ও ব্যবহার জানা প্রোগ্রামিং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যালগরিদম (Algorithm)

একটি নির্দিষ্ট কাজ বা কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য ধারাবাহিকভাবে যে নির্দেশনা অনুসরণ করা হয় সেটিই হলো অ্যালগরিদম। অ্যালগরিদম ব্যবহার করেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য একাধিক পদ্ধতি বা অ্যালগরিদম থাকতে পারে। কাজের গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়।

কোড (Code)

কোড এবং প্রোগ্রামিং সমার্থক শব্দ। কম্পিউটারে টাইপ করে করে লিখে বা ব্লক জোড়া দিয়ে প্রোগ্রাম তৈরির কাজটিকে অনেকে কোডিং বলে। সেই টাইপ করে লেখা নির্দেশনাগুলোকে কোড বলে। কোডিং এবং প্রোগ্রামিং একই জিনিস!

ভেরিয়েবল (Variable)

ভেরিয়েবল হচ্ছে প্রোগ্রামিং এবং কোডিংয়ের বিশেষ একটি ধারণা, যেখানে আমরা কোনো সংখ্যা, তথ্য বা মান সংরক্ষণ করতে পারি। এটি একটি বক্সের মতো, যেখানে তথ্য রাখা যায় এবং প্রয়োজনে পরিবর্তনও করা যায়। প্রোগ্রামে বিভিন্ন ধরনের তথ্য ব্যবহারে ভেরিয়েবল অপরিহার্য।

লুপ (Loop)

লুপ হলো এমন একটি বৈশিষ্ট্য বা কাঠামো যা কোনো কাজ বারবার করার নির্দেশ দেয়। যখন কোনো নির্দিষ্ট কাজ একাধিকবার করতে হয়, তখন লুপ ব্যবহার করা হয়। এটি সময় বাঁচায় এবং কোডকে সহজ করে তোলে।

কন্ডিশন (Condition)

কন্ডিশন বা শর্ত হলো প্রোগ্রামিংয়ের বৈশিষ্ট্য বা কাঠামো, যা নির্ধারণ করে কোন কাজটি হবে আর কোনটি হবে না। এটি ‘যদি–তবে’ (If-Else) ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

বাগ (Bug)

প্রোগ্রামে কোনো ভুল হলে সেটাকে বাগ বলে। কোন কোন বড় প্রোগ্রামে বাগ বা ভুল থাকার পরেও সেটি কাজ করতে পারে, তবে সব ক্ষেত্রেই কাজ করবে এমন নয়। একেবারে শুরুর দিকের কম্পিউটারগুলোর সার্কিটে সত্যি সত্যি পোকার আক্রমণে সমস্যা তৈরি হতো এবং প্রোগ্রামগুলো কাজ করতো না। সেই থেকেই কি বাগ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে?

ডিবাগ (Debug)

ডিবাগ অর্থ হলো প্রোগ্রামে যেসব ভুল বা ত্রুটি (বাগ) রয়েছে, সেগুলো খুঁজে বের করে ঠিক করা। এটি প্রোগ্রামিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, কারণ কোনো কোড সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে ডিবাগ করতে হয়।

ইনপুট (Input)

ইনপুট হলো এমন একটি তথ্য বা নির্দেশ, যা ব্যবহারকারী প্রোগ্রামকে দেয়। যেমন কিবোর্ড দিয়ে কিছু টাইপ করা বা মাউস দিয়ে কোনো বাটনে ক্লিক করা। প্রোগ্রাম সেই ইনপুট অনুযায়ী কাজ করে।

আউটপুট (Output)

আউটপুট হচ্ছে প্রোগ্রামের ফলাফল বা প্রক্রিয়াকৃত তথ্য, যা ব্যবহারকারী দেখতে পারে। যেমন, যদি ইনপুট দেওয়া হয় ২ ও ৩, আর কাজটি যোগ করা হয়, তাহলে আউটপুট হবে ৫।

ফাংশন (Function)

ফাংশন হচ্ছে এমন একটি কোড ব্লক যা কোনো নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং প্রয়োজনে একাধিকবার ব্যবহার করা যায়। এটি কোডকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্রোগ্রামকে সহজ ও পরিষ্কার রাখে। এক একটি ফাংশন এক একটি নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য তৈরি করা হয়। যেমন যোগ করার জন্য একটি ফাংশন তৈরি করা যেতে পারে। যে তথ্য/উপাত্ত নিয়ে ফাংশন কাজ করে সেগুলোকে বলা হয় ফাংশন প্যারামিটার।

চলবে…

আরও পড়ুন