বিমানের ভেতর লাইব্রেরি!

একটা ভবনের ভেতর চেয়ার, টেবিল, বুকশেলফ—লাইব্রেরি দেখতে মূলত এমনই। পৃথিবীর সব দেশের লাইব্রেরিই এই আদলে তৈরি করা। কিন্তু বিমানের ভেতরেই একটা গোটা লাইব্রেরি হলে কেমন লাগবে? সত্যি সত্যি তৈরি হচ্ছে একটা লাইব্রেরি। আলাদা কোনো ভবনে নয়, বিমানটাই হয়ে যাবে একটা আস্ত লাইব্রেরি!

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ গ্লস্টারশায়ারে অবস্থিত সেন্ট হেলেনস সিই প্রাথমিক বিদ্যালয় হাতে নিয়েছে এমনই এক উদ্যোগ। ৬ জানুয়ারি বিমানটি বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করা হবে বিমানটিকে।

বিমানটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের ফিলটনে, ১৯৯৩ সালে। বিএই-১৪৬ এয়ারক্রাফটটি প্রথমে কাতার এয়ারলাইনস এবং পরে লিবিয়া এয়ারলাইনসের হয়ে আকাশে উড়েছে প্রায় ২৫ বছর। অবশেষে ২০১৭ সালে ব্যবহারের অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয় বিমানটিকে। সাধারণত যখন কোনো বিমান আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না, তখন সেটাকে স্যালভেজ ইয়ার্ডে বিক্রি করে দেওয়া হয়। অনেক সময় বিভিন্ন অংশ তোলা হয় নিলামেও। এই বিমানটির কথা শুনতেই লাফ দিয়ে ওঠে সেন্ট হেলেনস কর্তৃপক্ষ। তারা যে অপেক্ষায় ছিল এমন কিছুরই।

২০২২ সালের মে মাসে সেন্ট হেলেনস বিদ্যালয়কে লাইব্রেরি তৈরি বাবদ বেশ বড় একটা অনুদান দেওয়া হয়। শর্ত ছিল, লাইব্রেরিটা হতে হবে বিদ্যালয় ভবনের বাইরে, যেখানে সহজেই যেতে পারবে শিশু-কিশোর এবং বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। ফলে বিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকেরা একটু ভিন্নধর্মী লাইব্রেরি বানানোর কথা ভাবছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। অনেক চিন্তাভাবনা করেও কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। ঠিক এমন সময়ে বিমানটির কথা কানে আসে তাঁদের। তখনই মাথায় বুদ্ধি খেলে সবার, বিমানটিও তো হতে পারে তাঁদের লাইব্রেরি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর দেরি না করে দ্রুত কিনে ফেলে বিমানটির সামনের কিছু অংশ।

বিমানের ভেতর লাইব্রেরি হবে, এটা শুনে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত সেন্ট হেলেনস বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেথ নামের একজন শিক্ষার্থী জানায়, এমন দারুণ লাইব্রেরি বই পড়তে আগ্রহী করবে অনেক মানুষকে, ‘বই পড়া এখন অনেকের জন্য বেশ কঠিন। কিন্তু বই পড়ার জায়গা যদি হয় বিমানের ভেতর, তাহলে এতে অনেকেই মজা পাবে। বিমানে ঢুকে বই নেওয়া যাচ্ছে—বিষয়টি আনন্দ দেবে সবাইকে!’

আরেক শিক্ষার্থী এমিলির মতে, এই লাইব্রেরি বই পড়তে বিদ্যালয়ের সবাইকে আরও উৎসাহিত করবে, ‘বিমানের ভেতর লাইব্রেরি থাকার বিষয়টা বেশ দারুণ। আমি মনে করি বিদ্যালয়ের অনেকেই এখানে আসবে বই পড়তে।’

একই সুরে কথা বলেন সেন্ট হেলেনসের সহকারী প্রধান শিক্ষক রিচার্ড অ্যাডামসও, ‘শিশুদের জন্য এমন একটি জায়গা তৈরি করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার হবে এটা। বাচ্চারা এখনই বিমানের ভেতরটা এক নজর দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। লাইব্রেরিটা খোলার অপেক্ষায় আছে সবাই।’

প্রযুক্তির এই যুগে বই পড়া এখন সবার জন্যই বেশ কঠিন। খুব অল্প বয়স থেকেই সবাই আসক্ত হয়ে পড়ে মুঠোফোন বা কম্পিউটারে। কিন্তু সেন্ট হেলেনস বিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগ বাচ্চাদের বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলবে—এমনই আশা সবার।