দশমিক গুণ ও ভাগে শূন্য

গত পর্বে গুণ ও ভাগের একটি কৌশল দেখিয়েছি। আজ দশমিক গুণ ও ভাগ কীভাবে সহজে করা যায়, সেই কৌশল শিখব। মাঝেমধ্যে আমাদের দশমিকের গুণ ও ভাগ করতে হয়। পরীক্ষার জন্য তো দশমিকের অঙ্ক করতেই হয়। কিন্তু বাস্তব জীবনেও আছে দশমিকের নানা ব্যবহার। যেমন তুমি হয়তো ক্রিকেট পছন্দ করো। বাংলাদেশ ব্যাট করবে। টিভির পর্দায় দেখলে বড় বড় করে লেখা, বাংলাদেশের রিকোয়্যার রান রেট ৮.৫। এর মানে কী? অর্থাৎ বাংলাদেশকে জিততে হলে প্রতি ওভারে সাড়ে ৮ রান করতে হবে। রানের তো অর্ধেক হয় না। সুতরাং প্রতি দুই ওভারে বাংলাদেশকে করতে হবে ১৭ রান। এখন তুমি বলতে পারো, ২০ ওভারের খেলায় বাংলাদেশের টার্গেট কত? খুব সহজ। ২০-কে ৮.৫ দিয়ে গুণ করলেই পেয়ে যাবে উত্তর।

কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখার সময় তো আর তুমি খাতা–কলম নিয়ে বসবে না। তাহলে মাথার মধ্যে গুণটা কীভাবে করবে? কল্পনা করো, ৮.৫-এর মাঝখানে দশমিক চিহ্নটা নেই। অর্থাৎ ওটা ৮৫। তাহলে ৮৫-কে গুণ করো ২০ দিয়ে। ভয় পেয়ো না। এই গুণ কঠিন নয়। ২০-এর শূন্যটা বাদ দিয়ে দাও। তাহলে রইল মাত্র ২। এবার প্রথমে ৮৫-কে ২ দিয়ে গুণ করো। সেটাও যদি কঠিন লাগে, তাহলে ৮৫-এর সঙ্গে ৮৫ যোগ করো। এটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তাহলে ৮৫ + ৮৫ = ১৭০।

এবার খেয়াল করো, ২০ থেকে একটা শূন্য বাদ দিয়েছিলাম। এখন সেই শূন্য এখানে বসাও। তাহলে উত্তর হলো ১৭০০। কিন্তু উত্তর এখনো পাইনি আমরা। কারণ, একটা দশমিকের কাজ বাকি আছে। এখন মনে মনে কল্পনা করে বের করো, দশমিকের পর মোট কয়টি সংখ্যা ছিল। ৮.৫ ছিল। অর্থাৎ দশমিকের পরে ছিল একটি সংখ্যা। তাহলে উত্তরের বাঁদিক থেকে একটি সংখ্যার আগে দশমিক বসাও। মানে উত্তর পেয়েছি ১৭০০। এক ঘর বাঁয়ে দশমিক বসালে পাব ১৭০.০। সুতরাং, উত্তর হলো ১৭০। অর্থাৎ বাংলাদেশ ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছে।

দেখলে? বাস্তব জীবনেও দশমিকের গুণ কত কাজে লাগে! এখানে শুধু ক্রিকেটের একটা উদাহরণ দিলাম। এ রকম আরও ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। উদাহরণ বাদ দিয়ে বরং আমরা আবার কৌশলে ফিরে যাই।

সমস্যা: ১

১.২ × ১.৩

ধাপ ১: মনে করো, দশমিক নেই। অর্থাৎ আমাদের ১২ × ১৩ করতে হবে।

ধাপ ২: ১২ × ১৩ = ১৫৬।

ধাপ ৩: এখন হিসাব করো, দশমিকের পর মোট কয়টি অঙ্ক আছে। মোট দুটি সংখ্যা আছে। ১.২-এ দশমিকের পর একটা ও ১.৩-এ দশমিকের পর একটা, মোট দুটি অঙ্ক।

ধাপ ৪: এবার উত্তরের দুইটি অঙ্ক বাঁয়ে দশমিক বসালেই সমাধান হয়ে যাবে। তাহলে উত্তর পাবে ১.৫৬।

নিচের ছবি থেকে একনজরে দেখে নাও।

সমস্যা: ২

৪৮ ÷ ২.৪

ধাপ ১: ধরো, দশমিক নেই। অর্থাৎ আমরা ৪৮কে ২৪ দিয়ে ভাগ করব।

ধাপ ২: ভাগফল হবে ৪৮ ÷ ২ = ২৪।

ধাপ ৩: এবার দশমিকের পর যেহেতু একটি অঙ্ক আছে, সুতরাং এক ঘর ডানে দশমিক বসবে। গুণের ক্ষেত্রে দশমিক বসে বাঁয়ে। কিন্তু ভাগের ক্ষেত্রে দশমিক বসবে ডানে। কিন্তু আমাদের তো ২-এর পর আর কোনো অঙ্ক নেই। তাহলে উপায়? একটা শূন্য ডানে নিয়ে তারপর দশমিক বসাতে হবে। অর্থাৎ ২০.। এখন ২০-এর পর দশমিক থাকা বা না থাকা একই কথা। তাই উত্তর হলো ২০।

তুমি চাইলে ২০-এর সঙ্গে ২.৪ গুণ করে দেখতে পারো। যদি উত্তর ৪৮ হয়, তাহলে তোমার উত্তর ঠিক আছে। নিজেই গুণটি করে দেখো তো, ঠিক আছে কি না।

একনজরে দেখে নাও

৪৮ ÷ ২.৪ ৪৮ ÷ ২৪ = ২ ২০

সমস্যা: ৩

৯৩০ ÷ ৩.১

ধাপ ১: দশমিক বাদ দিয়ে চিন্তা করলে হবে ৯৩০ ÷ ৩১। এবার ৯৩০-এর সঙ্গে যে শূন্যটা আছে, ওটা বাদ দিয়ে দাও। অর্থাৎ ৯৩ ÷ ৩১।

ধাপ ২: এখন ৯৩-কে ৩১ দিয়ে ভাগ করলে হয় ৩।

ধাপ ৩: যে শূন্য বাদ দিয়েছ, ওটা ভাগফল ৩-এর ডানে বসাও। অর্থাৎ ৩০। আর দশমিকের পরে আছে একটা অঙ্ক। সুতরাং, আরও একটা শূন্য বসবে। অর্থাৎ উত্তর হলো ৩০০।

একনজরে দেখে নাও

৯৩০ ÷ ৩.১ ৯৩ ÷ ৩১ = ৩ ৩০০

আশা করি দশমিকের এই গুণ ও ভাগে এখন তোমাদের আর সমস্যা হবে না। নিচের সমস্যাগুলো নিজে সমাধান করার চেষ্টা করো। খাতা–কলম ব্যবহার না করে মাথার মধ্যে করার চেষ্টা করো। তাহলে আরও দ্রুত সমাধান করতে পারবে।

অনুশীলন

১. ৪.৬ × ২০০

২. ৭০০ × ০.৫

৩. ০.৩১ × ৩০

৪. ৯৬০ × ৩.২

৫. ১৮০০ × ০.০৩

৬. ৭২০ ÷ ১.২

৭. ৯৬০ ÷ ৩.২

৮. ৫৬০০ ÷ ১.৪

৯. ৫১০ ÷ ১.৭

১০. ১৫০ ÷ ০.৫

সমাধান

১. ৯২০

২. ৩৫০

৩. ৯.৩

৪. ৩,০৭২

৫. ৫৪

৬. ৬০০

৭. ৩০০

৮. ৪,০০০

৯. ৩০০

১০. ৩০০

শেষ করার আগে তোমাদের একটা মজার তথ্য দিই। একটি সংখ্যার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। নাম গুগল সংখ্যা। সংখ্যাটা হলো ১০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০। না, ভয় পেয়ো না। একে সহজেও লেখা যায়। ১০১০০। মানে ১০-এর পাওয়ার ১০০। অর্থাৎ ১-এরপর ১০০টা শূন্য বোঝায়। এই ইয়াআআআআ… বড় সংখ্যাটি আসলে কত বড়, তা কি তুমি অনুমান করতে পারছ? পারার কথা নয়। কারণ, সংখ্যাটি এত্ত বড় যে তুমি সারা জীবন গুনেও শেষ করতে পারবে না। পৃথিবীতে যত বালুকণা আছে, তার চেয়ে বড় সংখ্যা গুগল। শুধু পৃথিবী কেন বলছি? এই মহাবিশ্বেও আসলে এত কণা নেই। কারণ, মহাবিশ্বের সব কণা মিলে হয় মোট ১০৮০। এবার বোঝো, গুগল সংখ্যাটা আসলে কত বড়!