খাওয়ার পর ঠান্ডা লাগে কেন

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

দুপুরে কয়েক পদের সবজি আর ডাল–ভাত খেলাম। খাওয়ার পর দেখি শীত লাগে। শীতের দিন হলেও বাইরে খুব শীত নেই। রোদ আছে। গায়ে সোয়েটারও চাপিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ খাওয়া শেষে শীত লাগা শুরু করল। চিন্তিত হয়ে পড়লাম। খাওয়ার পর কি আমারই শুধু শীত লাগল? না কি অন্যরাও শীত টের পাচ্ছে? পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলাম। সে জানাল, তারও খাওয়ার পর মাঝেমধ্যে শীত লাগে। জম্পেশ খাওয়াদাওয়া শেষে শীত লাগে কেন জানতে চাইল আমার বন্ধু। খোঁজখবর নিয়ে কয়েকটি কারণ জানতে পারলাম।

প্রথমেই জানা গেল, তেল বা মসলাদার কিছু খাওয়ার পরে শরীরে গরম লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিছু খাবার খেলে ঘটে উল্টা ঘটনা। যদি আইসক্রিম বা ঠান্ডা কিছু খাই, বিশেষ করে শীতকালে, তবে শীত শীত লাগতে পারে। এটি নাকি খুব সাধারণ এক ঘটনা। অনেকেরই এমন লাগে। কখনো খাবার খাওয়ার পরে কাঁপিয়ে ঠান্ডা লাগে। অনেকের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। শরীর কিছুটা কাঁপতে থাকে। এর সঙ্গে আছে খাবারের সম্পর্ক।

তুমি প্রতিদিন যে খাবার খাও, সেগুলো শরীরের তাপ উৎপাদনে কাজ করে। হজম প্রক্রিয়ার সময় শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় শরীরে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। খাবারগুলো ভেঙে যায়। এভাবে আমরা শরীরে শক্তি পাই। এসময় শরীরের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তুমি যদি গরম খাবারের পরিবর্তে ঠান্ডা খাবার খাও, তবে শীত অনুভব করতে পার। এই লেখাটি চিকিৎসাবিষয়ক কিছু না। কিছু রোগের কারণেও ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। সেগুলো এখানে আলোচনা করা হবে না। এখানে শুধু খাবারের কারণে ঠান্ডা লাগার কথা বলছি।

কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার

তোমার শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালোরির চেয়ে কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেলে শীত অনুভব করতে পারো। স্বাভাবিকভাবে নিরামিষ বা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার কম শক্তি উৎপাদন করে। যারা দীর্ঘমেয়াদী সীমিত ক্যালোরি ডায়েট করে, তাদের শরীরের তাপমাত্রা কম থাকতে পারে। অপর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। মাছ-মাংস-ডিম-দুধজাতীয় খাবার এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা ভাত-ভর্তা-ডাল দিয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করেছিলাম। এগুলো উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার না। তাই আমাদের শীত লেগেছিল।

দীর্ঘ সময় না খাওয়া

দীর্ঘ সময় ধরে উপবাস করলে বা না খেয়ে থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়। তখন শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরি পায় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমতে পারে।

ঠান্ডা খাবার এবং পানীয়

ঠান্ডা খাবার শরীরের তাপমাত্রায় সামান্য কমিয়ে দিতে পারে। তাই ঠান্ডা খাবার বা পানীয় খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক সময় শীত অনুভূত হয়। এমনিতেই খাবার পেটে যাওয়ার পর খাবারগুলো ভাঙার জন্য পাকস্থলীতে বেশি রক্ত চলাচল হয়। তখন শরীরের অন্য জায়গায় রক্তের অক্সিজেন সঞ্চালন কমে যায়। তখন শীত লাগতে পারে।

আরও পড়ুন

রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া

অ্যানিমিয়া হলে শরীরে রক্ত ​​কণিকার সংখ্যা বা রক্ত কণিকার অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কম থাকে। শরীরের চাহিদা পূরণের জন্যও রক্ত কণিকা থাকে অপর্যাপ্ত। অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝেমধ্যে ঠান্ডা অনুভব করে।

হাইপোথাইরয়েডিজম

খাবার হজমে ভূমিকা রাখে থাইরয়েড হরমোন। এই হরমোন কম তৈরি হলে হজম প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়। ফলে শরীরের তাপ কম উৎপন্ন হয়। এভাবেও খাওয়ার পরে ঠান্ডা অনুভব করে অনেকে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে নিয়মিত খাবার খাওয়ার পরেও কখনো কখনো ঠান্ডা অনুভব হয়।

আরও পড়ুন

খাওয়ার পর অনেকভাবেই ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই শীতকালে খাওয়ার পর শীত শীত লাগা অনুভব করতে না চাইলে একটু দেখে-শুনে খাওয়া ভালো। উচ্চ ক্যালরি বা প্রোটিন আছে এমন খাবার বেছে নিলে খাওয়ার পর শরীরে ঠান্ডা না–ও লাগতে পারে। তবে শর্ত হলো, অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকতে হবে। যেমন অ্যানিমিয়া বা ডায়বেটিস নেই।