হঠাৎ এত গরম কেন?

গরম বেশি পড়লে দেশের সবখানে গরম নিয়ে আলাপ শুরু হয়। যেমন এ বছর বৈশাখ আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল ‘হিট ওয়েভ’। মানে উত্তপ্ত আবহাওয়া সারা বাংলাদেশে বয়ে গেছে। ফ্যান ছাড়লে গরম বাতাস টের পাওয়া যায়। খুব গরম পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরম নিয়ে শোরগোল শুরু হলো। একটা গ্রাফিক ছবি সবাই শেয়ার করল। যেখানে দেখা গেল, এক লোক বিছানায় শুয়ে আছে। গরমে উত্তপ্ত হয়ে টকটকে লাল হয়ে গেছে তার শরীর। সঙ্গে গলে গলে বিছানায় মিশে যাচ্ছে। গরমে সবার কেমন অবস্থা, এই মিম দিয়ে তা বোঝা যায়। এত গরম, যেন শরীর গলে যাবে!

এর মধ্যে পত্রিকায় খবর এল, গত ৫৮ বছরে এত গরম পড়েনি! এই তথ্য জানা গেল বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে। তাঁরা বহু বছর ধরে পৃথিবীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছেন। আবহাওয়াবিদেরা ২০০ বছর ধরে আবহাওয়ার রেকর্ড রাখছেন। এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। ২০০ বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা জানেন, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বর্তমান আবহাওয়ার রেকর্ড রাখতে হয়। ২০০ বছরের মধ্যে প্রথম ১০০ বছরে কোনো জায়গার স্থানীয় আবহাওয়া কয়েক ঘণ্টা বা এক দিন আগে বলে দিতে পারতেন তাঁরা। রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, ঝড়ের পূর্বাভাস, বরফ কতটুকু পড়বে এসব। আর ১০০ বছর ধরে আবহাওয়া অনুমান মডেলগুলো এত উন্নত হয়েছে, কয়েক দিন আগেই সুনিশ্চিতভাবে যেকোনো জায়গার আবহাওয়া কেমন হবে বলে দেওয়া যায়। বলে দেওয়া হচ্ছে। একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে। সবখানেই আবহাওয়াকেন্দ্র আছে। কেন্দ্র থেকে তথ্য নিয়ে মডেলগুলো এই ভবিষ্যদ্বাণী করে।

নাসা পৃথিবীর ভূমি, বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর ও বরফ সম্পর্কে অনেক ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার করে। নাসার দেওয়া তথ্যমতে, পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ হয়ে উঠছে। কখনো আবহাওয়া, কখনো জলবায়ু বললে গোলমাল লেগে যেতে পারে। সহজ করে বললে, ৩০ বা তার বেশি বছরের কোনো স্থানের গড় আবহাওয়া হলো জলবায়ু। আবহাওয়া বিভিন্ন মাত্রায় দেখা যায়। কখনো খুব ঝড়, কখনো অতিবৃষ্টি, আবার অস্বাভাবিক গরমকে চরম আবহাওয়া বলা যেতে পারে। আর জলবায়ু চট করে বড় পরিবর্তন হয় না। আবহাওয়া হয়। দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা। জলবায়ুর পরিবর্তন হয় ধীরে ধীরে। সাধারণত এক দিকে ঝুঁকতে থাকে। যেমন বর্তমানে পৃথিবীর জলবায়ু ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে।

আমাদের বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীর জলবায়ুকে উষ্ণ করে তুলছে। গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং মিথেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সূর্যের তাপ আটকে রাখে। বায়ুমণ্ডলে কিছু গ্রিনহাউস গ্যাস থাকা স্বাভাবিক। পৃথিবীতে প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উষ্ণতা প্রয়োজন আছে। কিন্তু অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস অতিরিক্ত উষ্ণতা সৃষ্টি করে। কয়লা ও তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। বেশ কয়েকটি মিশনে নাসার এমন যন্ত্র রয়েছে, যা বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড মাপে। এ ছাড়া পৃথিবীতে ২০০ বছরের আগে (কত আগে তুমি কল্পনা করতে পারো?) জলবায়ু কেমন ছিল, তা দীর্ঘকাল ধরে পরিবেশ-প্রকৃতিতে থাকা বস্তু থেকে জানা যায়। বিজ্ঞানীরা জীবিত বয়সী গাছগুলো নিয়ে গবেষণা করে শত শত বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু কেমন ছিল, তা বলতে পারেন। কয়েক হাজার থেকে মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর জলবায়ু কেমন ছিল, জানতে বিজ্ঞানীরা পলি ও বরফের কোর বিশ্লেষণ করেন। পলি কোর হ্রদ বা সমুদ্রের তল থেকে আসে। অ্যান্টার্কটিকার মতো জায়গায় বরফের পৃষ্ঠের একদম নিচে কখনো কখনো মাইলখানেক গভীর থেকে বরফের কোর খুঁড়ে বের করা হয়। বরফের কোরে প্রতিবছর স্তরে স্তরে বাতাসের বুদ্‌বুদ আটকে থাকে। প্রতিটি স্তরের বুদ্‌বুদকে বিশ্লেষণ করে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ দেখা হয়। যে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ু গবেষণার জন্য গাছ, বরফের কোর, হ্রদ এবং সমুদ্রের পলি ব্যবহার করেন তাদের প্যালিওক্লাইমেটোলজিস্ট বলা হয়। তাদের কাছে রেফারেন্স ভ্যালু থাকে। নিজেদের পরীক্ষায় পাওয়া ভ্যালুর সঙ্গে রেফারেন্স ভ্যালু মিলে গেলে গবেষণা সফল বলে ধরা হয়। আর যদি না মেলে, তখন আরও পরীক্ষা করা হয়।

জলবায়ুতে অল্প পরিমাণ উষ্ণায়ন হলে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কারণ, পানি অনেক বেশি তাপ শোষণ করে। দেখা যায় পানি গরম করতে প্রচুর শক্তি খরচ করতে হয়। মহাসাগরগুলো তাপ শোষণ করে উষ্ণ হয়। এই উষ্ণতার কারণে আর্কটিকে সমুদ্রের বরফ গলে যায়। নাসার আর্থ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, প্রতি গ্রীষ্মে কিছু আর্কটিক এলাকার বরফ গলে এবং বরফের আকার ছোট হয়। সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে ছোট হয়ে যায়। এরপর যখন শীত আসে, বরফ আবার বাড়ে। কিন্তু ১৯৭৯ সাল থেকে সেপ্টেম্বরে বরফ ছোট থেকে ছোট এবং পাতলা থেকে পাতলা হচ্ছে। তাই অল্প পরিমাণ উষ্ণায়ন কয়েক বছর ধরে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।

গরমে বিপর্যস্ত হয় জনজীবন

কোনো জায়গার তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার্থক্য হলে পুরো আবহাওয়া অনেকটা পরিবর্তিত হতে পারে। ঢাকায় বোঝা যায় না। ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও মানুষের গরম লাগে, ৩৮ ডিগ্রিতেও গরম লাগে। কিন্তু প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে আছে বড় রকমের পার্থক্য। প্রতি ডিগ্রিতেই পার্থক্য বোঝার দৃশ্যমান উদাহরণ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে কোনো এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মাত্র ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে সামান্য প্রভাব পড়ে। কিন্তু পুরো পৃথিবীতে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারে। মনে করা যাক, সাধারণত, ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পানি কঠিন বরফ। কিন্তু ৩৩ ডিগ্রিতে বরফ গলে তরল হবে। এর মানে কোনো বরফ ছিল না ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এলাকায়। ধরা যাক কলোরাডোতে। হুট করে জিরো ডিগ্রিতে বরফ পড়া শুরু করল। একটু নিচে নামলেই এলাকা বরফে ছেয়ে গেল। তো ঢাকার ৩২ থেকে ৩৮ ডিগ্রিতে তেমন পার্থক্য মনে না হলেও কলোরাডোতে এই পার্থক্য বোঝা সহজ। ঘটনা দুই জায়গার জন্য একই। ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট নিয়ে গোলমাল লেগে গেলে, অসুবিধা নেই। দুই স্কেলে পার্থক্য একই। জিরো ডিগ্রি সেলসিয়াস ৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের সমান। আর ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সমান ৩৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বরফ পড়ার উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রের। ওখানে ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবর্তে ফারেনহাইট ব্যবহার হয়।

তো এভাবে পৃথিবীর বৈশ্বিক তাপমাত্রায় সামান্য বৃদ্ধির মানে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে বরফ গলে যায়। যার ফলে বাড়ছে সামুদ্রিক এলাকা। কিছু জায়গায় বন্যা হচ্ছে, আবার কিছু জায়গায় খরা দেখা যাচ্ছে। ফলে কিছু গাছপালা এবং প্রাণী সুবিধা পাচ্ছে। একই সময় ভিন্ন জায়গায় অন্য প্রাণীরা খাদ্যের অভাবে ভুগছে। মানুষের জন্যও এই পরিবর্তন বড় প্রভাব বয়ে আনতে পারে।

আবহাওয়ার দিক দিয়ে ভাবলে গরমকালে কোনো কোনো শহর তাপ-দ্বীপের মতো হয়ে যেতে পারে। তাপ–দ্বীপ হলো এমন এক দ্বীপ, যেখানে তাপ আটকে আছে। এই দ্বীপের কাছাকাছি গ্রামীণ এলাকার তুলনায় এখানে অনেক বেশি উষ্ণতা অনুভব করতে হয়। শহর এবং স্বল্প উন্নত গ্রামীণ এলাকার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য তৈরি হওয়ার কারণ, ভূপৃষ্ঠ কত ভালোভাবে তাপ শোষণ করে এবং ধরে রাখতে পারে, তার ওপর। শহরকে ঘিরে একটি বুদ্‌বুদের ছবি দিয়ে শহুরে তাপ–দ্বীপের অনুমান করা যায়। সূর্যের তাপ ও আলো একইভাবে শহরে ও গ্রামে পৌঁছায়। গ্রামে গেলে দেখা যায় বেশির ভাগ এলাকা গাছপালা দিয়ে ভরা। যত দূর চোখ যায় ঘাস, গাছ আর ফসলে ঢাকা কৃষিজমি। গাছপালা তাদের শিকড় দিয়ে মাটি থেকে পানি টানে। এরপর ডালপালা ও পাতায় পানি জমা করে। শেষে পাতার নিচের দিকে ছোট গর্তে পরিচালিত হয়। সেখানে তরল পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় এবং বাতাসে চলে যায়। এই প্রক্রিয়াকে ট্রান্সপিরেশন বলে। এটি প্রকৃতির এয়ার কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।

গাছপালা কেটে ফেলা একটি বড় সমস্যা। গাছ না থাকলে ছায়া এবং বাষ্পের পরিমাণ কমে উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ে আসতে পারে। প্রত্যেক শহরেই এমন কিছু রাস্তা আছে। যে রাস্তার পাশে বা আইল্যান্ডে গাছ আছে আর যে রাস্তায় গাছ নেই, এমন রাস্তা দিয়ে একদিন হাঁটলে স্পষ্ট পার্থক্য বোঝা যাবে। স্কুলে গরমের ছুটি বলতে একটি বিষয় ছিল। যদি পাওয়া যায় তবে ছুটি শহরের বাইরে গাছপালাযুক্ত জায়গায় কাটানো যেতে পারে। কারণ, গরমে শহুরে ফুটপাতের তুলনায় একটি ঘাসভরা মেঠো পথে হাঁটা সহজ। শ্বাস নেওয়া স্বস্তির। মানুষ গরম অনুভব করে ত্বক দিয়ে। গাছপালা যুক্ত এলাকায় থাকলে ত্বকে শীতল বোধ হবে। আর শ্বাসপ্রশ্বাসও গরম অনুভবের কারণ! গরম বায়ুতে শ্বাস নিলে বোঝা যায়।

শহরে নিশ্চিতভাবেই অনেক গাছপালা দেখা যায় না। ফুটপাত, রাস্তা আর উঁচু ভবন শহরের স্বাভাবিক দৃশ্য। এগুলো ইট, সিমেন্ট, কাচ, ইস্পাতের মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি। সাধারণত খুব গাঢ় রঙের হয়। কালো, বাদামি আর ধূসর রং দেখা যায়। কালো বস্তু আলোক শক্তির সব তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে তাপে রূপান্তরিত করে। বিপরীতে সাদা বস্তু আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত করে। আলো তাপে রূপান্তরিত হয় না এবং সাদা বস্তুর তাপমাত্রা তেমন বাড়ে না। শহরের রাস্তা কালো পিচের তৈরি। ছাদগুলো ধূসর আবরণ দেওয়া। উত্তাপের বড় অংশ আসে এসব স্থাপনা থেকে। বিল্ডিংয়ের উপকরণ শহর এলাকায় তাপ আটকানোর আরেকটি কারণ। অনেক আধুনিক বিল্ডিং উপকরণের কারণে পৃষ্ঠতল থেকে পানি ইট বা সিমেন্টের প্যাঁচে পড়ে ওপর থেকেই বাষ্প হয়ে যায়। ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হতে পারে না। গ্রামে উদ্ভিদের মাধ্যমে যেমন এলাকা ঠান্ডা হয়, শহরে বড় জলাধার তৈরি আর মাটি দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা কমতে পারে।

প্রচণ্ড গরমের ভুক্তভোগী শিশুরাও

এ বছর বৈশাখ আসার আগেই বাংলাদেশে গরম আবহাওয়া অনুভব করা গেছে। সপ্তাহ ধরে তপ্ত আবহাওয়া অনুভব করতে হয়েছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণকে দায়ী করা যেতে পারে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি আলাপ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন। সারা বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপপ্রবাহ এবং খরা খুব সাধারণ হয়ে উঠেছে এ ছাড়া এমন প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে, যা বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় অবদান রাখছে। যেমন বায়ুর ধরনে ঋতুগত পরিবর্তন বা সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তন। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল মৌসুমি বায়ু দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই বায়ু ভারত মহাসাগর থেকে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু বয়ে আনে। আর্দ্রতা বাড়লে একই তাপমাত্রায় যে গরম লাগে তার তুলনায় বেশি গরম অনুভব হয়। মৌসুমি বায়ুর পাশাপাশি সাগরের স্রোতও এর জন্য দায়ী। গ্রীষ্মকালে বঙ্গোপসাগরে উষ্ণ পানির স্রোত উপকূলীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বাড়িয়ে তোলে।

এবার কেন এত গরম পড়ল? প্রশ্ন করলে চিন্তা করেই উত্তর বের করা যায়। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং বিশ্লেষণ ছাড়া ৫৮ বছর আগের উত্তপ্ত দিনে কী ঘটেছিল, তা বলা কঠিন। আবহাওয়া উত্তপ্ত হওয়ার যে কারণগুলো এখন বলা হচ্ছে, যেমন মৌসুমি বায়ু বা স্রোতের প্রভাব, এগুলো তখনো ছিল। অন্য কোনো ফ্যাক্টর যুক্ত হওয়ায় সেই সময় আবহাওয়া চরম অবস্থায় গিয়েছিল। ১৫ এপ্রিল ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে। ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শহরবাসীকে ভুগতে হয়েছে সেদিন। এখানে সাধারণত এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। কখনো ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রিতেও ওঠে। এর কারণ, জেট স্ট্রিম নামে বড় আকারের বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গস্রোত ভারতীয় উপমহাদেশে বয়ে চলা। জেট স্ট্রিম বায়ুপ্রবাহের একটি সরু ব্যান্ড। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যায়। এই ব্যান্ডটি বাংলাদেশের ওপরে থাকায় এত গরম।

জেট স্ট্রিম কোন এলাকার ওপরে স্থির হয়ে গেলে ঠান্ডা এবং শুষ্ক বায়ু ওপর থেকে নিচে নামে। ঠিক একই সময়ে ভূপৃষ্ঠের কাছের বায়ু সংকোচন বলের কারণে উষ্ণ হয়ে ওঠে। ফলে নিচের বায়ু মেঘ তৈরি করতে বাধা পায়। তরঙ্গ সরে গেলে তাপমাত্রা কমে যায়। পাঠকের হাতে কিশোর আলো পৌঁছে যাওয়ার সময় তাপমাত্রা কমে গেছে। বৃষ্টি পড়ায় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। এটি বলা গেল, কারণ আবহাওয়াবিদেরা জানিয়েছেন, ২১ এপ্রিল থেকে গরম কমে আসবে। কিন্তু গ্রীষ্মকাল তো কেবল শুরু। পরে প্রতিবছরই গ্রীষ্মকাল আসবে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা, জলাশয়, জলাভূমি, বনভূমির কাছাকাছি বাস করলে উত্তাপ থেকে বাঁচা যাবে। সম্ভব না হলে বেশি করে গাছ লাগানো, গাছ না কাটা আর জলাভূমি ভরাট না করাই তপ্ত পৃথিবীতে বাঁচার উপায় বলে বিবেচিত হবে।