আইনস্টাইন আমার আইনস্টাইন

১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ আইনস্টাইনের জন্ম। মাত্র ২৬ বছর বয়সে, ১৯০৫ সালে, একসঙ্গে চারটি গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশ করে তিনি আমাদের জানা দুনিয়াকে ওলট–পালট করে দেন। পরে ১৯১৫ সালে সাধারণ তত্ত্বের আঙিনায় পৌঁছে দেন মানবজাতিকে। সেই থেকে আমরা আইনস্টাইনের দুনিয়ারই মানুষ। মহামতি আইনস্টাইনের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বিশ শতকের একেবারে শুরুতে দুটি নতুন তত্ত্ব দুনিয়া (Universe) সম্পর্কে আমাদের জানাশোনাকে একেবারেই পরিবর্তন করে ফেলে। তত্ত্বের ঠেলায় এমনকি বদলে যায় বাস্তবতার সংজ্ঞাও। সেই থেকে প্রায় এক শতাব্দী পরও আমরা সেই দুই তত্ত্বের ভেতরের খবর আরও বিশদভাবে যেমন জানতে চাই, তেমনি চাই ওই দুই তত্ত্বকে একসুতায় বাঁধতে, ছাদনাতলায় নিয়ে গিয়ে তাদের গাঁটছড়া বেঁধে দিতে। এ দুই তত্ত্ব হলো, আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (জেনারেল থিউরি অব রিলেটিভিটি) আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যা (কোয়ান্টাম মেকানিকস)।

বস্তুজগতের বড় স্কেলের কারবারে সাধারণ আপেক্ষিকতার বাহাদুরি। স্থান ও সময়ের আচরণ এবং বস্তুর কারণে স্থান–কালের বেঁকে যাওয়া এ তত্ত্বের আসল কথা। অপর দিকে বস্তুর ভেতরের যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জগৎ, তার রাজাধিরাজ হলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। এ কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় রয়েছে অনিশ্চয়তার নীতি (আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপল)। এ নীতি বলছে একটি বস্তুকণার অবস্থান ও ভরবেগ যুগপৎ সঠিকভাবে মাপা যায় না; একটিকে যত নিখুঁতভাবে মাপবেন, অন্যটির সঠিকত্ব ততই কমে যাবে! ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুজগতে সব সময় অনিশ্চয়তা বা সম্ভাবনা থেকেই যাবে। অনিশ্চয়তার এ মৌলিক প্রভাব থেকে বস্তুজগতের কোনো মুক্তি নেই।

আইনস্টাইন বলতে গেলে একাই সাধারণ আপেক্ষিকতা সংজ্ঞায়িত ও তাকে তত্ত্বে পরিণত করেছেন। আবার আইনস্টাইন অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উন্নয়নে। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যা সম্পর্কে তাঁর ধারণাকে একবাক্যে প্রকাশ করা যায় এভাবে—‘ঈশ্বর পাশা খেলেন না’। কিন্তু সব তথ্য–প্রমাণ বলছে, ঈশ্বর সেটি ভালোই খেলেন এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি পাশা ছুড়ে থাকেন!

ঈশ্বরের পাশা খেলার বিষয়ে আইনস্টাইনের আপত্তি তাঁর জীবনধারা থেকে আঁচ করা যায়। আইনস্টাইন বেহালা বাজাতেন, সুরের জগতের মানুষ। ভাবতেন সবকিছু হবে নিয়মমাফিক। এতালবেতালের জায়গা নয় এই দুনিয়া। সাধারণ তত্ত্বের আগে, আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সময় আইনস্টাইনের চিন্তার জগৎ ছিল সে সময়ের সবার চেয়ে আলাদা, বলা ভালো, একজন থাকে সবার চেয়ে এগিয়ে। আইনস্টাইন ছিলেন সে রকম। আরেকটি বড় কারণ, আমার সব সময় মনে হয় ওই সময় আইনস্টাইনের কোনো সুপারভাইজার ছিলেন না। ফলে কেউ তাঁকে বলেননি যে ‘তোমার চিন্তাটা ঠিক নয়।’ ফলে তিনি একা একা নতুন চিন্তা করতে পেরেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, সে সময় আইনস্টাইন বিশের ঘরের যুবক। পরে যখন তিনি সাধারণ তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন, তখনো তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট ছিল।

মনে আছে? ১৯১৯ সালে স্যার আর্থার এডিংটন ব্রাজিল থেকে সূর্যগ্রহণ দেখে নিশ্চিত হন সাধারণ তত্ত্বের ব্যাপারে। তখন এক সাংবাদিক আইনস্টাইনের কাছে জানতে চান, যদি পরীক্ষার ফলাফল তাঁর অনুকূলে না আসত, তাহলে তিনি কী করতেন?

জবাবে আইনস্টাইন বলেছিলেন, তিনি ঈশ্বরের জন্য দুঃখ বোধ করতেন!

এই আইনস্টাইনই কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বের সঙ্গে যখন আপেক্ষিকতার মেলবন্ধন করতে গেলেন, তখন কিন্তু এই সাহস আর রাখতে পারলেন না। একটা বড় কারণ, তিনি তত দিনে পরিণত হয়েছেন, বৃদ্ধ হয়েছেন, নতুন কোনো কিছু মেনে নেওয়ার সাহস হারিয়েছেন। তবে এটিই একমাত্র কারণ নয়।

যখন কেউ এ দুই তত্ত্বকে মেলাতে যান, তখন একটা ‘কেমন যেন’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একদিকে দেখা যায়, দেড় হাজার কোটি বছর আগে সময়ের নিজের সূচনা। আবার কোনো কোনো গবেষণায় মনে হয়, এ দুনিয়ার কোনো শুরু বা শেষ নেই!

আপেক্ষিকতা দিয়ে শুরু করা যাক। বাংলাদেশের আইনকানুন (এবং বেআইনি কারবার) কেবল বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মনীতি সব জায়গার জন্যই প্রযোজ্য। এমনকি সূর্য ও অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জেও এর ব্যতিক্রম হয় না। শুধু তা–ই নয়, নিয়মগুলো আমার আপনার গতির সঙ্গে সম্পর্কহীন। অর্থাৎ জেট প্লেনে যা, মাটিতেও তা–ই।

গতির এ প্রভাবহীনতা প্রথম আবিষ্কার করেন গ্যালিলিও। একটি কাঠের পাটাতনের ওপর থেকে একটা লোহার বল গড়িয়ে দিয়ে তিনি গতিবিদ্যার সূত্রগুলো আবিষ্কার করে ফেলেন! খুঁজে পান কামানের গোলা কিংবা গ্রহগুলোর গতির সূত্র। কিন্তু মুশকিল দেখা গেল, যখন মানুষ গতির এ প্রভাবহীনতা আলোর গতির বেলায় প্রয়োগ করতে গেল। আঠারো শতকেই জানা হয়েছে যে আলো এক লহমায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায় না, এরও নির্দিষ্ট গতি রয়েছে—সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। তাহলে এ গতি কার সাপেক্ষে? কাজেই, ধারণা করা হলো, দুনিয়াজুড়ে রয়েছে একটি বিশেষ মাধ্যম—ইথার। মানে হলো, ইথারে আলোর গতি ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। কেউ যদি ইথারের সাপেক্ষে স্থির থাকে, তাহলে সে আলোর এই গতি দেখবে। কিন্তু ইথারের সাপেক্ষে চলমান কেউ আলোর ভিন্ন গতি দেখবে। কিন্তু ১৮৮৭ সালে মাইকেলসন-মর্লি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক পরীক্ষা করে দেখালেন, আলোর গতি দর্শকের গতির ওপর মোটেই নির্ভরশীল নয়। এটি ধ্রুবক। নিশ্চিতভাবে ধ্রুবক!!!

এটা কীভাবে সম্ভব? কীভাবে বিভিন্ন গতিতে চলমান দর্শকের কাছে আলোর একই গতি হবে? উত্তর হচ্ছে—না, এটি সম্ভব নয়, যদি আমরা স্থান ও কালের প্রচলিত ধারণায় থাকি। ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর একটি লেখায় দেখালেন, এ বিষয় সত্য হতে পারে, কেবল যদি আমরা সময়ের চিরন্তন ও সনাতনী ধারণাকে ত্যাগ করি। তার বদলে প্রত্যেক দর্শকের নিজের আলাদা সময় থাকবে, নিজ নিজ ঘড়ি অনুযায়ী। তবে তাদের ঘড়ি প্রায় একই সময় দেখাবে, যদি পরস্পরের সাপেক্ষে তাদের গতি হয় শ্লথ, ধীর। কিন্তু দুই ঘড়ির সময় তাত্পর্যপূর্ণভাবে পার্থক্য দেখাবে, যদি তাদের গতির মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকে। বাণিজ্যিক বিমানে করে যদি আপনি পৃথিবীর চারপাশে ৪০ কোটিবার ঘুরে আসতে পারেন, তাহলে আপনি ১ সেকেন্ড আয়ু বাড়াতে পারবেন। অবশ্য, তত দিন বিমানের খাওয়ায় আপনার আয়ু অনেক বেশি কমে যাবে!

১৯০৫ সালে আপেক্ষিকতার প্রথম নিবন্ধ, যাকে আমরা এখন আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলছি, প্রকাশ পায়। তাতে আইনস্টাইন বিভিন্ন গতির বস্তুর জন্য জগতের নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করেন। বলেন, সময় স্থাননিরপেক্ষ কোনো ব্যাপার নয়। বরং ভবিষ্যৎ আর অতীত হলো বাম-ডান, সামনে-পেছনে বা ওপর-নিচের মতো দিকের ব্যাপার, যা বিদ্যমান স্থান-কালের মধ্যে। তবে, আপনি কেবল ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারবেন, অতীতে নয়।

এভাবে আপেক্ষিকতায় বিশেষ তত্ত্ব স্থান ও কালকে একীভূত করল। কিন্তু তারপরও স্থান-কাল রয়ে গেল ঘটনার স্থির প্রেক্ষাপট হিসেবে। আপনি স্থান-কালের মধ্যে বিভিন্ন পথ বেছে নিতে পারেন, কিন্তু খোদ স্থান-কালকে পরিবর্তন করতে পারেন না। কিন্তু ১৯১৫ সালে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বে আইনস্টাইন এ সবই পাল্টে দিলেন। বললেন, ‘স্থান-কালের মধ্যে কাজ করা মহাকর্ষ আসলে কোনো বল নয়, বরং এ হলো স্থান-কালের বক্রতা, ভর ও শক্তির কারণে এটি হয়।’ গ্রহ কিংবা কামানের গোলা আসলে সোজা-সরল পথে চলতে চায়, কিন্তু পারে না। কারণ, তাদের যাত্রাপথটাই বাঁকা। পৃথিবী সোজাই চলত, কিন্তু সূর্যের কারণে স্থান-কাল বেঁকে যাওয়ায় বেচারা সূর্যের প্রেমে পড়ে গেছে। একইভাবে সূর্যের পাশ দিয়ে আসার সময় আলোকরশ্মিও বেঁকে যাবে, ওই বক্রতার কারণেই। ১৯১৯ সালে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হয়ে যায়।

এটি ছিল আইনস্টাইনের এক মহান বিজয়!

আইনস্টাইনের আবিষ্কার স্থান ও কাল সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে একেবারেই পাল্টে দিল। ঘটনার নিষ্ক্রিয় প্রেক্ষাপট হিসেবে স্থান-কাল কিনা একেবারেই অক্কা পেল; বরং তারাও হয়ে উঠল সক্রিয় অংশগ্রহণকারী—ঘটনা ঘটাতে কিংবা ঘটনার প্রভাবে পরিবর্তিত হতে!

ভর ও শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, দুটিই ধনাত্মক। এ জন্যই মহাকর্ষ কেবল আকর্ষণ করে, বিকর্ষণ করে না। [পাদটীকা—অর্থাৎ মহাকর্ষ আসলে ছোট প্রেম, বড় প্রেম নয়!]

সাধারণ আপেক্ষিকতায় এর একটি প্রভাব আমাদের একেবারে হতচকিত করে দিতে পারে। ভর যদি সব সময় ধনাত্মক হয়, তাহলে স্থান-কাল নিজের দিকে বেঁকে যেতে পারে, পৃথিবীর উপরিভাগের মতো। যদি তা ঋণাত্মক হতো, তাহলে তা ঘোড়ার লাগামের মতো ছড়িয়ে যেত।

সে সময় ধারণা করা হতো, দুনিয়া (Universe) স্থির। ফলে নিজের তত্ত্ব নিয়ে আইনস্টাইন নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। আইনস্টাইনের তত্ত্বে বোঝা যাচ্ছিল যে দুনিয়া হয় সম্প্রসারিত হচ্ছে নতুবা সংকুচিত হচ্ছে! তা কী করে হবে? কাজেই আইনস্টাইন সমীকরণে মহাকর্ষবিরোধী একটা কসমোলজিক্যাল ধ্রুবক বসিয়ে দিলেন, যেন–বা এতে দুনিয়া স্থির হয়ে যাবে! (এই সময় আইনস্টানের বয়স কত?)

তা, এই ধ্রুবক নিয়ে দুনিয়ার বাড়া-কমার কোনো সমস্যা হতো না। তবে সবাই ওই ধ্রুবককে মেনে নিয়েছিলেন সেই ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল জেনে ফেললেন, সমীকরণে আইনস্টাইন যা খুশি তা–ই করুন, দুনিয়া আসলেই প্রসারিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আইনস্টাইন কসমোলজিক্যাল ধ্রুবককে তাঁর জীবনের ‘মহা ভুল’ বলেছিলেন।

কিন্তু কসমোলজিক্যাল ধ্রুবক থাকুক বা না থাকুক, স্থান-কালের বক্রতা কিন্তু একটা অস্বস্তি বজায় রাখল। কারণ, এমনভাবে স্থান-কাল বেঁকে যেতে পারে যে স্থান-কালের কোনো অংশ ওই অংশের থেকে নিজেকে পৃথক করে ফেলতে পারে। সৃষ্টি হতে পারে কৃষ্ণবিবরের—ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোল থেকে কোনো বস্তুকে বের হতে হলে তাকে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে ছুটতে হবে। কাজেই, ব্ল্যাকহোলের ভেতর বস্তুর আরও ভাঙন হবে, যা আমরা জানতে পারব না।

আইনস্টাইন বস্তুর এই সংকোচন মেনে নিতে পারেননি। মনে করতেন, এটা সম্ভব নয়। কিন্তু ১৯৩৯ সালে ওপেনহাইমার প্রমাণ করে ফেললেন যে এটা সম্ভব। তবে ওই সময়ে বাইরের দুনিয়ার চেয়ে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিষয়-আশয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৬০ সালের দিকে আবার মহাকাশে আমরা ফিরলাম আর আশ্চর্য হয়ে দেখতে থাকলাম আইনস্টাইনের তত্ত্বের মহিমা। সে সময় স্টিফেন হকিং আর রজার পেনরোজ মিলে দেখালেন সিঙ্গুলারিটি থেকে স্থান-কালের শুরু অথবা শেষ। বিগব্যাং থেকে সূচনা আর ব্ল্যাকহোলে গিয়ে সমাপ্তি। কিন্তু সিংগুলারিটিতে গেলেই সাধারণ আপেক্ষিকতা হার মেনে যায়। অর্থাৎ তখন বোঝা যায়, এটি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব নয়, ওর বাড়তি কিছু দরকার।

এই বাড়তিটাই হলো, অনেকে বলেন, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের হাতে যার সূচনা। আর ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আলোর তড়িৎক্রয়া ব্যাখ্যা করে কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেন। এই কাজের জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কার পান ১৯২২ সালে। (আপেক্ষিকতা ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ করা যায় না। গণিতবিদেরা যাতে নোবেল পেতে না পারেন, সে জন্য ‘ল্যাবরেটরি’ তত্ত্ব নোবেল পুরস্কারের অংশ! অনিশ্চয়তা তত্ত্বের বেলায় কোয়ান্টাম তত্ত্বের যে ধারণা প্রকাশ পায়, সেটি আইনস্টাইনের ওই কাজেরই ফসল। অনিশ্চয়তার নীতির বেলায় আইনস্টাইন বেঁকে বসলেন। বললেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব অসম্পূর্ণ। কিন্তু যত দিন গেল, দেখা গেল কোয়ান্টাম বলবিদ্যাই ঠিক, আইনস্টাইন নন। ১৯৭৩ সালে ব্ল্যাকহোলের আশপাশে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রয়োগ করে হকিং বললেন, ব্ল্যাকহোল আসলে ব্ল্যাক নয়। এ থেকে বের হয়ে আসে কণাস্রোত।

আইনস্টাইনের সঙ্গে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা অনিশ্চয়তার তত্ত্বের বিরোধের মূল কারণ, তত দিনে আইনস্টাইন বুড়ো হয়েছেন। তিনি প্রচলিত ধারণা, যেকোনো ঘটনার একটিমাত্র ইতিহাস থাকে, এটি মেনে নিতে চাচ্ছিলেন। এ জন্য ফাইনম্যানের দেখানো সামওভার হিস্ট্রির ব্যাপারটা তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

এখন আমরা বুঝি, আইনস্টাইনের যতই আপত্তি থাকুক, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং অনিশ্চয়তা নীতিকে বাদ দিয়ে কোনো একীভূত তত্ত্ব পাওয়া যাবে না। নানা দেশের বিজ্ঞানীরা নানাভাবে ওই একীভূত তত্ত্বের তালাশ করছেন। একদিন পেয়েও যাবেন।

তবে শেষ পর্যন্ত আইনস্টাইন তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন। কারণ, বিশ শতকের সেরা দুই তত্ত্বে আইনস্টাইনের অবদান তাবৎ মানবকুলের চেয়ে বেশি।

আর এ কারণেই বিশ্বের সব মানুষের তিনি হবেন, ‘আইনস্টাইন আমার আইনস্টাইন’।