ভাড়াটে যোদ্ধারা

ভাগনার গ্রুপ

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে কে জিতবে, কে হারবে, সে আলোচনার চেয়ে সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি যা নিয়ে আলোচনা হলো, সেটি হলো ভাগনার গ্রুপ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে গ্রুপটি ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ করেছে। ইউক্রেনে বেশ সফলও হয়েছে এই ভাগনার গ্রুপ। কিন্তু তারাই কি একমাত্র ভাড়াটে যোদ্ধা? আর কোনো প্রতিষ্ঠান কি নেই, যারা ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ করে? আছে।

রাশিয়া যেমন ইউক্রেন যুদ্ধে ভাড়াটে যোদ্ধা নিয়েছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও আফগানিস্তান বা ইরাক যুদ্ধে ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহার করেছে। এর একটির নাম ব্ল্যাকওয়াটার। ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ব্ল্যাকওয়াটারকে অন্যতম ভয়ংকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি সামরিক নীতি নিয়ে কাজ করে মিলিটারিস্ট মনিটরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৯৭ সালে ব্ল্যাকওয়াটারের যাত্রা শুরু।

ব্ল্যাকওয়াটার কত বড়

যাত্রা শুরুর পর এই প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের ছয় হাজার একর জায়গা আছে। সক্রিয় অস্ত্র চালানো শিখতে প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। উড়োজাহাজ বা জাহাজ—সব আছে। একটি বাহিনীর যা যা থাকা দরকার, তার সবই আছে ব্ল্যাকওয়াটারের। এমনকি এই বাহিনীর প্রশংসা একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও করেছে।

ব্ল্যাকওয়াটার যে শুধু যুদ্ধ করে, এমনটা নয়। তারা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে। এনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, কারও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে সেটাও দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠান। আবার কারও নিরাপত্তার দরকার হলে অর্থের বিনিময়ে তারা সেটাও দিয়ে থাকে। আর এসব কাজের জন্য যাঁরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাঁদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। তবে ব্ল্যাকওয়াটারে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তারাও কাজ করে থাকেন। তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বাহিনীর ডগ স্কোয়াডের প্রশিক্ষণও তারা দিয়ে থাকে।

ব্ল্যাকওয়াটারের পেছনে যিনি

ভাগনার গ্রুপের পেছনে রয়েছেন ইয়েভগেনি প্রিগোশিন। এই গ্রুপের প্রধান তিনি। ব্ল্যাকওয়াটারের পেছনেও একজন আছেন। তাঁর নাম এরিক প্রিন্স। তিনি এই ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৬৯ সালে জন্ম নিয়েছেন এই ব্যবসায়ী। ১৯৯১ সালে মিশিগানের হিলসডেল কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৯২ সালে হোয়াইট হাউসে ইন্টার্ন করেন। তাঁর বাবা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মিলিটারিস্ট মনিটর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে তিনি কাজ করেছেন মাত্র চার বছর। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কাজ করে তিনি বাহিনী থেকে ইস্তফা দেন। এরপরই তিনি গড়ে তোলেন ব্ল্যাকওয়াটার।

রাজনৈতিক বিবেচনায় এরিক প্রিন্স একজন রিপাবলিকান সমর্থক। তাঁর বোন বেটসি ডিভোস রিপাবলিকান নেতা। এই দলের হয়ে বেটসি নির্বাচনও করেছেন। এ ছাড়া এও বলা হয়ে থাকে, এরিক প্রিন্স রিপাবলিকান পার্টির অর্থদাতাদের একজন। কিন্তু এই এরিক প্রিন্স ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলেও ইরাক, আফগানিস্তানে যুদ্ধে কাজ করেছেন আমেরিকার হয়ে।

নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে তিনি নিজেই বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন মূলত নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। তাঁর মতে, এই নিরাপত্তা দিতে গিয়ে ব্ল্যাকওয়াটার বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়েছেন। এতে বাহিনীটি যুক্তরাষ্ট্রে সুনাম কুড়িয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

এরিক প্রিন্স তাঁর বায়োগ্রাফি ওয়ারিয়রস ওয়ারিয়রস বইয়ে লেখেন, তাঁর বাহিনীর হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তানে প্রায় এক লাখ মানুষ কাজ করেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সাবেক সদস্য যেমন ছিলেন, তেমনি অন্য কাজে পারদর্শী ব্যক্তিরাও ছিলেন। তবে এই বইতে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, তাঁর বাহিনীর হয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।

ইরাক যুদ্ধের সময় ব্ল্যাকওয়াটারের কাজ ছিল সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরাকের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সামরিক বিভিন্ন জিনিস স্থাপন করা, ইরাকের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে সাহায্য করা। এসব কাজ করার জন্য প্রথমে ব্ল্যাকওয়াটারের সঙ্গে দুই কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছিল। পরের বছর সেই অর্থ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির আয় বাড়তে থাকে।

ব্ল্যাকওয়াটারের যোদ্ধারা

কিন্তু বিতর্ক তাদের পিছু ছাড়েনি। ইরাক যুদ্ধের সময় ইরাকিদের হত্যার অভিযোগ উঠেছিল ব্ল্যাকওয়াটারের বিরুদ্ধে। কারাগারে বন্দী নির্যাতনের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি রাস্তায় গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা। এই ঘটনার জেরে তদন্ত হয়েছে। দোষীও সাব্যস্ত হয়েছিলেন ব্ল্যাকওয়াটারের যোদ্ধারা। ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের চারজনকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তবে এর আগেই ভাড়াটে যোদ্ধার তকমা ঘোচানোর চেষ্টা করে ব্ল্যাকওয়াটার। ২০০৮ সালে তারা ঘোষণা দেয়, তারা আর নিরাপত্তার কাজ করবে না। কারণ, এতে ঝুঁকি বেশি। এরপর ২০০৯ প্রতিষ্ঠানটি নাম বদলে ফেলে। এর নাম দেওয়া হয় জি সার্ভিসেস এলএলসি। এরপরই এরিক প্রিন্স এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজ থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। এরপর প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী। পরে আবারও নাম বদল হয়। এখন এর নাম একাডেমি। এই নামেই কাজ করছে তারা। এখনো মানুষকে অস্ত্র চালানোসহ নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তারা।

প্রতিষ্ঠানের নাম বদল হয়েছে। মালিকানাও বদল হয়েছে। তবে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ করে বেশ অর্থ কামিয়েছেন এরিক প্রিন্স। বলা হয়, তিনি এখন ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক।

এখনো এরিক প্রিন্স

আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, এরিক প্রিন্স এখন ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ থেকে দূরে, আসলে তা নয়। ব্ল্যাকওয়াটারের কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তিনি চলে যান আবুধাবিতে। সেখানকার ক্রাউন প্রিন্সের জন্য এমন একটি ভাড়াটে বাহিনী তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া নিজের ব্যবসা বাড়িয়েছেন আফ্রিকায়। সেখানে তেল ও খনিজ সম্পদের ব্যবসা করছেন তিনি। এরপর ইউক্রেনে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালে এই খবর প্রকাশ করেছিল টাইম সাময়িকী। অর্থাৎ ভাড়াটে যোদ্ধা তৈরির নেশা তাঁর কাটেনি।

এরিক প্রিন্স

ডাইনকর্প

ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের সঙ্গে আরেকটি ভাড়াটে যোদ্ধা গ্রুপের নাম জড়িয়ে আছে। এটি ডাইনকর্প ইন্টারন্যাশনাল। এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লেখার আগে তিনটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে লিখতে হয়। একটি ‘ল্যান্ড এয়ার ইনকরপোরেটেড’। আরেকটি ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইস্টার্ন এয়ারওয়েজ’। দুটি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৪৬ সালে। উড়োজাহাজসংক্রান্ত ব্যবসা করত। কোরীয় যুদ্ধের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাজ করা শুরু করে তারা। ধারণা করা হয়ে থাকে, প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ ছিল। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠান দুটি একত্র হয়। এরপর ‘এয়ারকার’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৯৫২ সালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর ১৯৬১ সালে এর নাম দেওয়া হয় ‘ডাইনল্যাকট্রন করপোরেশন’। সেই সময় প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ বিক্রি করত। এ ছাড়া যন্ত্রাংশ বিক্রি করত। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করত তারা। একটা সময় গিয়ে তারা নানা ব্যবসা শুরু করে।

এরপর ১৯৮০-এর দশকে প্রতিষ্ঠানটি ডাইনকর্প নামে যাত্রা শুরু করে। বলা হয়ে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হয়ে সোমালিয়া, অ্যাঙ্গোলা, কলম্বিয়া, কসোভো, বলিভিয়া, বসনিয়া, কুয়েত, হাইতিতে কাজ করে ডাইনকর্প। এরপর ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হলে সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর হয়ে কাজ শুরু করে তারা। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা আঘাত হানলে সেই সময় উদ্ধারকাজে ডাইনকর্পকে কাজে লাগানো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কাজ করে থাকে তারা। সিআইএ ও এফবিআইয়ের আইটি সেবা দিত তারা। ইরাক যুদ্ধের সময় উদ্ধার অভিযান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোথাও বাহিনী মোতায়েন, তল্লাশি অভিযানে কাজ করত ডাইনকর্প।

একসময় উগান্ডা, মালাউই, মাদাগাস্কার, নাইজেরিয়ায় শান্তি রক্ষার কাজ করেছে তারা।

ফার্স্ট পোস্টের খবরে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় দেশটির পুলিশ, বিমানবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছ থেকে ২৫০ কোটি ডলার পেয়েছিল তারা। সে সময় আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তারা।

২০২০ সালে অ্যামেনটম নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডাইনকর্প কিনে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ৩৪০ কোটি ডলার। এতে কাজ করেন ১০ হাজারের বেশি কর্মী। অন্য সব বাণিজ্যের পাশাপাশি গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তারা।

যুদ্ধক্ষেত্রে ডাইনকপের যোদ্ধারা

এসবের পাশাপাশি বিতর্ক কম নেই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে। ১৯৯০–এর দশকে শিশু পাচার ও শিশু যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ উঠেছিল আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়। ২০০০ সালে হার্জেগোভিনা ও বসনিয়া থেকে নারী পাচারের অভিযোগও রয়েছে ডাইনকর্পের বিরুদ্ধে। সে সময় অনেককে চাকরিচ্যুত করেছিল ডাইনকর্প। তবে তাঁদের কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এ ঘটনা স্বীকারও করেছিল।

ফেরা যাক ভাগনারে

ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনেরও জন্ম এ শহরেই। ১৯৭৯ সালে প্রিগোশিন প্রথম যখন অপরাধী সাব্যস্ত হন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। চুরির দায়ে আড়াই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। অর্থাৎ পরবর্তী সময় যদি আবার একই অপরাধ করেন, তাহলে কারাভোগ করতে হবে। এর ২ বছর পরই চুরি ও ডাকাতির দায়ে তাঁকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সময় ৯ বছর কারাভোগ করতে হয় প্রিগোশিনকে।

কারাভোগ শেষে খাবারের ব্যবসা শুরু করেন প্রিগোশিন। এর কয়েক বছর পর নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে শুরু হয় অরাজকতা। এই সময় কৌশলে শহরে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি। তখন থেকেই সেন্ট পিটার্সবার্গের বিত্তবান, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় প্রিগোশিনের। পরে আরও কয়েকটি রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি। এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁর নাম ছিল নিউ আইল্যান্ড। ভাসমান এ রেস্তোরাঁ নেভা নদীতে ভেসে বেড়াত। পুতিনের বেশ পছন্দের রেস্তোরাঁ ছিল এটি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও পুতিন তাঁর বিদেশি অতিথিদের নিয়ে এই ভাসমান রেস্তোরাঁয় যেতেন। এভাবে একসময় পুতিনের ঘনিষ্ঠ হন প্রিগোশিন। পরে ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের মধ্য দিয়ে ‘পুতিনের পাচক’ পরিচিতি পান প্রিগোশিন।

ভাগনারের যাত্রাটা আরেকটু পরে। ২০১৪ সালে প্রিগোশিন প্রতিষ্ঠা করেন ভাগনার গ্রুপ। সামরিক অভিযান চালিয়ে রাশিয়া যখন ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিল, তখন আলোচনায় আসেন প্রিগোশিন। ওই অভিযানে ভাগনার যোদ্ধারা ছিলেন।

এরপর ২০২৩ সালে প্রিগোশিন স্বীকার করেন, তিনি ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি চালান। মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রভাবিত করেছিল এই প্রতিষ্ঠান। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছিল তারা। এসব কারণেই ট্রাম্পের জয় সহজ হয়েছিল।

এখানেই শেষ নয়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার যে বাহিনী কাজ করছে, সেখানেও ভাগনার যোদ্ধাদের অংশগ্রহণ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আফ্রিকায় পুতিনের বন্ধু নেতাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেও কাজ করে তারা।

সম্প্রতি ভাগনার বাহিনীকে রাশিয়ার মূল সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করতে চেয়েছিল সরকার। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। আবার ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংকট দেখা দিয়েছিল। এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েন প্রিগোশিন। মূলত তাঁদের শায়েস্তা করতে জুনের শেষে বিদ্রোহ করেন তিনি। তবে তাঁর এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছে। এখন বেলারুশে অবস্থান করছে ভাগনার বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, এবার আফ্রিকার দিকে ছড়িয়ে পড়বে তারা।

ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহের এই ইতিহাস বহু পুরোনো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, খ্রিষ্টপূর্ব ১২৯৪-এ এমন ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়। সে সময় মিসরের সঙ্গে হাইতির যুদ্ধের সময় মিসরের দ্বিতীয় রামসেস এমন ভাড়াটে যোদ্ধা ডেকেছিলেন।