লাইক দিলে সমস্যা কী

বন্ধুদের নিয়ে দুই দিনের জন্য ঘুরতে গেলাম সিলেটে। বাসে উঠতেই ফোনে টুং করে বেজে উঠল মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন। ঢুকে দেখি, দারুণ মজার এক মিম পাঠিয়েছে আমার ছোট বোন। বাসে বসেই হেসে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মিমের উত্তরে কী লিখব বুঝতে না পেরে সহজ সমাধান হিসেবে পাঠালাম লাইক। আর তখনই তো ঘটে গেল কাণ্ড! কেন লাইক পাঠালাম, তা নিয়ে তার মাথায় আগুন। কী হচ্ছে কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করলাম, সমস্যা কোথায়? উত্তর এল, ‘তুমি আমার মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে লাইক পাঠালে কেন? এমন রুড (রূঢ়) আচরণের মানে কী?’ শুনে তো আমারই মাথায় হাত।

অন্যদিকে এক বিকেলে বসে গল্প করছিলাম বান্ধবীর সঙ্গে। হঠাৎ লক্ষ করলাম ফোনে চোখ রাখতেই কেমন যেন চুপ হয়ে গেল সে। কারণ জানতেই বলল, ‘কাল রাতে একটা ছবি আপলোড করেছি। সবাই লাভ রিয়েকশন দিয়েছে, কিন্তু দুজন বাদে। তারা দিয়েছে লাইক। এর কোনো মানে আছে? এখনকার দিনে লাইক দেয় কেউ?’

এই দুই ঘটনার পর যা বুঝলাম তার সারমর্ম হলো, ‌‍‍‍‍জেন জি-দের কাছে এই লাইক বাটন অনেকটা তাচ্ছিল্যের সমান! অনেকে আবার মনে করে এই ইমো শুধুই বয়স্কদের জন্য। কিন্তু কারা এই জেন জি? জেন জি বা জেনারেশন জেড হলো তারা, যাদের জন্ম ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। এই প্রজন্মের বড় একটি গোষ্ঠী ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের লাইক বাটনের ব্যবহার নিয়ে বেশ সংবেদনশীল। রেডিটসহ অন্যান্য বেশ কিছু জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই লাইককে কেন্দ্র করে হচ্ছে নানা আলোচনা। বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে যুক্তিতর্ক পেশ করে যাচ্ছে দুই দলে বিভক্ত জেন জি-রা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই লাইক দেওয়াকে তুলনা করছে অসংগতিপূর্ণ আচরণের সঙ্গেও।

গত বছর রেডিটে শেয়ার করা একটি পোস্টের কথাই বলা যাক। সেখানে একজন লিখেছে, ‘আমার কর্মস্থলে কাজের জন্য সহকর্মীরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মাইক্রোসফট টিম ব্যবহার করে থাকে। সেখানে তারা প্রায় সময়ই লাইক রিয়েকশনটি ব্যবহার করে। কিন্তু আমি এর সঙ্গে খুব একটা অভ্যস্ত নই। মেসেজের উত্তরে লাইক ব্যবহার করার ব্যাপারটি স্বাভাবিক হলেও আমার কাছে কখনো কখনো এটিকে বেশ অস্বস্তিকর মনে হয়। অন্যরাও কি তাই মনে করে?’

এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে আবার এমনই আরেকজনের দেখা মিলল। তার ভাষ্যমতে, ‘আমার মতো অল্প বয়স্কদের (জানিয়ে রাখি, আমার বয়স ২৪ বছর) কাছে লাইক, ইমোজি আক্রমণাত্মক আচরণের থেকে কম কিছু নয়। কেউ যদি আপনার মেসেজের উত্তরে লাইক পাঠায়, তাহলে সেটি অবশ্যই রূঢ় আচরণ। কর্মস্থলে এমন সব আচরণ স্বাভাবিক করতে আমার বেশ অদ্ভুত সময় পার করতে হয়েছে।’

এমনকি টুইটারেও এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। তাদের কথায়, এই লাইক বাটন দেখলেই নাকি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে কেউ কেউ। কেউ কেউ লাইক শুধু তখনই ব্যবহার করে, যখন তারা কারও ওপর রেগে থাকে। এত সব রাগ, ক্ষোভের মাঝেও জেন জি দলের আরেক অংশ ব্যস্ত লাইক বাটনের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে। তারা মনে করে, সোশ্যাল মিডিয়ার যেকোনো কথোপকথন চালানোর মূল ভিত্তিই হচ্ছে এই লাইক বাটন। একজন বলেছে, ‘লাইক বাটনটি না থাকলে কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হতো।’

আচ্ছা, এ বিষয়ে তোমার কী মতামত? মেসেজের উত্তরে কিংবা পোস্ট করা ছবিতে লাইক দেখলে তোমারও কি মেজাজ বিগড়ে যায়? জানাতে ভুলো না কিন্তু!

ফেসবুকে লাইক বাটন এল যেভাবে

লাইক বাটনটি ডিজাইন করা হয় হাতের থাম্বস আপকে অনুকরণের মাধ্যমে। তবে ফিচার ডেভলপমেন্টের শুরুর দিকে লাইকের বদলে ‘স্টার’ কিংবা ‘প্লাস’ চিহ্ন আনবে বলে পরিকল্পনা করেছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমনকি এই লাইকের নামও ‘লাইক’ ছিল না, কথা ছিল ‘অসাম’ নামে যাত্রা শুরু হবে এই ফিচারের। অবশেষে নানান আলোচনার পর ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যোগ হয় ‘লাইক’ ফিচারটি। তখন এটি যেকোনো পোস্ট কিংবা মতামতের সমর্থনে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন অনেকেই এর ব্যবহারকে ভিন্ন চোখে দেখে।