জঞ্জাল থেকে লাইব্রেরি!

‘যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন!’ কবি তো আর কথাটি এমনি এমনি বলেননি। ছাই বা জঞ্জালের আড়ালেও যে অমূল্য রতন থাকতে পারে, সে বিষয়টিই প্রমাণ করেছেন তুরস্কের কিছু পরিচ্ছন্নতাকর্মী। খুলেই বলি বিষয়টি।

রাস্তাঘাট-এলাকা পরিষ্কার রাখতে একদল পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়মিতই কাজ করেন তুরস্কের কেনকিয়া শহরে। প্রতিদিন জঞ্জাল সাফ করতে গিয়ে দেখতে পান গাঁট্টি গাঁট্টি বই। পুরোনো হলেও এমন বইও পান তাঁরা, যা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে পড়া যায়। রোজ এমন অবস্থা। তখনই তাঁদের মাথায় বুদ্ধি আসে, এসব বই নিয়ে একটা লাইব্রেরি করে ফেললে কেমন হয়?

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। রাস্তাঘাট কিংবা আবর্জনার স্তূপ থেকে শুরু হয় বই সংগ্রহ। ৩২ বছর বয়সী সেরহাত বাইতিমুরও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের এই দলে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর বেশ শখ ছিল, একটা লাইব্রেরি যদি বাসায় থাকত! পর্যাপ্ত বইয়ের অভাবে নিজের বাসায় লাইব্রেরি তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু এ রকম উদ্যোগে সে দুঃখ বেমালুম ভুলে গেলেন। সবাই বই পড়তে পারবে—এই আনন্দটাই বা কম কিসে?

এমন একটা খবর শহরজুড়ে বেশ হইচই ফেলে দিল। লাইব্রেরিটা যেন সত্যিই তৈরি হয়, তাই কেনকিয়া শহরের মেয়র আলপার তাসদিলেনও এগিয়ে এলেন। এক দল বই ফেলে দিচ্ছে, আরেক দল বই পড়ার জন্য বই খুঁজে মরছে। লাইব্রেরিই হতে পারে এর সমাধান। এমনটাই ভাবছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষও তখন লাইব্রেরিতে বই দিতে শুরু করল। শহরটির পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার হেডকোয়ার্টারের একটা পুরোনো ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়ে গেল লাইব্রেরিটি।

রাস্তাঘাট থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বই, ভাবতেই পারো কী ধরনের বই-ই বা থাকবে সেখানে? বোরিং বই হবে হয়তো। একদম ভুল! কল্পকাহিনি থেকে শুরু করে গুরুগম্ভীর গবেষণার বই। কী নেই? বাচ্চাদের জন্য আছে কমিক বই। বইয়ের সংগ্রহ কত, শুনলেও চমকে উঠবে। সব মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার! তুরস্কজুড়েই এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের স্কুলশিক্ষকেরা তাঁদের স্কুলের জন্য বই চেয়ে পাঠান। তুরস্কের জেলগুলোও বই ধার নেয় এখান থেকে। মিউনিসিপ্যাল কর্মীদের সন্তানেরা ছাড়াও স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই ভিড় করছে বই পড়ার জন্য। সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন সাইক্লিস্টরা। যাওয়া-আসার পথে বিরতি নিয়ে তাঁরা বইয়ের পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতে চা খান এখানে। চা খাওয়ার জন্য ছোট্ট একটা লাউঞ্জও তৈরি করা হয়েছে লাইব্রেরিতে। শুধু তা-ই নয়, লাইব্রেরিতে বুদ্ধির চর্চার জন্য রাখা হয়েছে দাবাও। সবকিছু সামাল দিতে ইতিমধ্যে একজন দক্ষ লাইব্রেরিয়ানকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

লাইব্রেরির সদস্যরা দুই সপ্তাহের জন্য ধার নিতে পারেন বই। গত বছর সেপ্টেম্বরে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় লাইব্রেরিটি। শুধু তুরস্কের ভাষার বই নয়, পর্যটকদের মনোযোগ কাড়া লাইব্রেরিটিতে আছে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার বইও।

তোমার যদি পুরোনো বই ফেলে দেওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে ফেলে না দিয়ে কোনো লাইব্রেরিতে দিয়ে দিতে পারো। অথবা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে নিজেই তৈরি করতে পারো এমন লাইব্রেরি!

তথ্যসূত্র: সিএনএন

(কিশোর আলোর ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত)