দাবানলে জ্বলছে সিরিয়া, আগুন নেভাতে কাজ করছে হোয়াইট হেলমেটস

ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

গৃহযুদ্ধের ক্ষত থেকে মাত্র সেরে উঠছে সিরিয়া। এরই মধ্যে দেশটিতে আঘাত হেনেছে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা। ফলে ১০ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৬ জুলাই রোববার সন্ধ্যায় সিরিয়ার লাটাকিয়া অঞ্চলের রাবিয়া শহরের কাছে সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আগুন নেভাতে কাজ করতে দেখা গেছে।

ছয় দিনের দাবানলে সিরিয়ার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে ১৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমি। এই জমির আয়তন প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির আয়তনের সমান। দাবানলের আগুন মূলত জ্বলছে ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর পার্বত্য এলাকা লাটাকিয়া অঞ্চলে। এই এলাকায় মাসের পর মাস ধরে তাপপ্রবাহ চলছিল। বৃষ্টিও তেমন পড়েনি। এ কারণে ঘন বন শুকিয়ে গিয়েছিল। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এই বছরের খরা কয়েক দশকের মধ্যে সিরিয়ায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ। লাটাকিয়ায় দাবানল ঠেকানোর জন্য সিরিয়ার সব জায়গা থেকে জরুরি কর্মীদের আনা হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, হাজার হাজার সিরিয়ান এই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১৩ বছর গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়া সম্প্রতি স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই চেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াল এই দাবানল।

এই বছরের খরা কয়েক দশকের মধ্যে সিরিয়ায় আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ
ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

সিরিয়ার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী হোয়াইট হেলমেটস নামে পরিচিত। একসময় এই বাহিনী বাশার আল-আসাদ সরকারের বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বোমা হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিতদের বের করে আনত। এখন তারা দাবানল ঠেকাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বাশার আল-আসাদ সরকারের ওপর বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই সিরিয়ায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। এই বাহিনীর হাতে পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। ফায়ার ট্রাকের যন্ত্রাংশের ঘাটতি আছে। ফলে আগুন নেভানোর কাজে বাধা পড়ছে। এ ছাড়া যুদ্ধের ক্ষত ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। অবিস্ফোরিত বোমা, এবড়োখেবড়ো ভূমিও আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে।

উপকূলীয় এই অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে সাবেক সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ অনুগতদের শক্ত ঘাঁটি। এটি সিরিয়ার আলাউইত সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত। এই এলাকার বাসিন্দারা বর্তমানে শান্তিতে নেই। গত মার্চ মাসে এখানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার ফলে এখানে মারা গেছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মানুষ। যাদের বেশির ভাগই আলাউইত।

কয়েক দশকের মধ্যে এবার দেখা দিয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা। শুষ্ক আবহাওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবার আর্দ্র মৌসুমে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কম ছিল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) জানিয়েছে, এবার সিরিয়ান কৃষিজমিতে গমের আবাদ তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই পরিমাণ গম ১ দশমিক ৬৩ কোটি মানুষের এক বছরের খাদ্যের জন্য যথেষ্ট।

দাবানল ঠেকানোর জন্য প্রতিবেশী দেশগুলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং বিমান পাঠিয়েছে। জর্ডান, লেবানন, তুরস্কসহ প্রতিবেশী দেশগুলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছেও সহায়তা চেয়েছে।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী আগুন নেভাতে কাজ করছে
ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

হোয়াইট হেলমেটস গ্রুপ জানিয়েছে, আগুন নেভানোর জন্য তারা দিনরাত কাজ করছে। কিন্তু জরুরি কর্মীরা ডিজেল জ্বালানি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের মতো জিনিসপত্রের ঘাটতিতে পড়েছেন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো টের পাওয়া যাচ্ছে।

হোয়াইট হেলমেটসের উপকূলীয় বিভাগের পরিচালক আবদুল কাফি কায়াল বলেছেন, প্রবল বাতাসের কারণে পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে। ফলে আগুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই আগুন পাশের অঞ্চল হোমস এবং টারতুসের কিছু অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বনে আগুন লাগায় পুড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গাছ।

সিরিয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার দাবানল আঘাত হেনেছে। গত বছরও এই দুর্যোগ থেকে দেশটি রক্ষা পায়নি। গত বছর দাবানলে ১ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি ধ্বংস হয়েছিল।

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন