এসি ও ফ্যান একসঙ্গে চালালে কি ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়
ভ্যাপসা গরমে স্কুল–কলেজ কিংবা বাইরে থেকে ফিরে সোজা ঘরে ঢুকে অনেকেই এসিটা অন করে দেন। তাপমাত্রা দ্রুত কমাতে এসির সঙ্গে ফ্যানও ছেড়ে দিতে দেখা যায় কাউকে। কিন্তু প্রশ্ন জাগতে পারে, এভাবে কি সত্যি ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে? নাকি বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে? অনেকে আবার মনে করেন, এসি চালু করে ফ্যান ছাড়লে ঠিকমতো ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায় না। কিন্তু আসল সত্যিটা কী? এসি ও ফ্যান একসঙ্গে চালালে কি সত্যি ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে? নাকি এটা ভুল ধারণা?
গরমের দিনে যখন তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন অনেকের মনে হয়, এসির তাপমাত্রা একেবারে কমিয়ে দেওয়াটাই বুঝি একমাত্র উপায়। কিন্তু এর চেয়েও ভালো কৌশল আছে। এসির সঙ্গে সিলিং ফ্যানটিও একসঙ্গে চালিয়ে দেওয়া। এসি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, এসি ও সিলিং ফ্যান একসঙ্গে চালাতে। এই পদ্ধতি এত কার্যকর যে কিছুটা জাদুর মতো মনে হতে পারে। কারণ, এসি ও ফ্যান একসঙ্গে চালালে ঘরে দ্রুত আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। অথচ বাড়ির বিদ্যুতের বিল তেমন একটা বাড়ে না।
অনেকেই মনে করেন, ফ্যান চালু করলে ঘরের তাপমাত্রা কমে। কিন্তু সিলিং ফ্যানগুলো নিজে থেকে বাতাসকে ঠান্ডা করতে পারে না; বরং এগুলোর আসল কাজ বাতাসকে সচল রাখা ও এসি থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসকে ঘরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দেওয়া। এসি ঘরের ভেতরের গরম বাতাস থেকে তাপ শোষণের পর ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে ঘর ঠান্ডা করে। যখন ফ্যানের ব্লেডগুলো ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরে, তখন শীতল বাতাস নিচের দিকে নেমে আসে। যেখানে আমরা বসি, ঘুমাই বা থাকি, সেখানেও ঠান্ডা বাতাস পৌঁছে যায়। এর ফলে আমরা সতেজ বাতাস অনুভব করতে পারি।
মূলত সিলিং ফ্যান শীতলকরণ প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তোলে। এসি থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসকে এক জায়গায় জমা হতে না দিয়ে ঘরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দেয়। ফলে এসিকে পুরো ঘর ঠান্ডা করার জন্য বেশিক্ষণ চালাতে হয় না, যা বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফ্যান থেকে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, তা শরীরের ঘামকে দ্রুত বাষ্পীভূত করতে সাহায্য করে। যার ফলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই আরও ঠান্ডা অনুভব করি।
এসি ও সিলিং ফ্যান একসঙ্গে ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ–সাশ্রয় ও আরাম দুটি সুবিধা পেতে পারি। এর জন্য একটি সহজ কৌশল মেনে চলা জরুরি। এসির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি বাড়িয়ে ব্যবহার করতে হবে; সঙ্গে ফ্যানটি চালু রাখতে হবে। যদি গরমের সময় এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এখন থেকে এটিকে ২৮ ডিগ্রিতে রাখতে হবে। যখন ফ্যানটি চলবে, তখন এটি দ্রুত শীতল বাতাসকে পুরো ঘরে সমানভাবে ছড়িয়ে দেবে। এর ফলে পুরো ঘর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাবে। এতে এসিকে কম সময় চালাতে হবে। ফলে আরামের কোনো কমতি হবে না, কিন্তু বিদ্যুতের বিল অনেকটাই সাশ্রয় হবে।
এসি ও সিলিং ফ্যান একসঙ্গে ব্যবহার করলে সত্যিই বিদ্যুতের খরচ কমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এতে ঠিক কত টাকা সাশ্রয় হতে পারে? তাহলে এখানে একটা সাধারণ হিসাব করা যাক। ধরা যাক, একটি এসি চালাতে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০ টাকা খরচ হয়। যেখানে একটি ফ্যান চালাতে লাগে মাত্র এক টাকা। এসির তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে দিলে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০ টাকা পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব। ফ্যান চালানোর খরচ বাদ দিয়েও প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৯ টাকা সাশ্রয় হয়। গরমের সময় প্রতিদিন গড়ে ছয় ঘণ্টা এসি চলে। সে হিসাবে মাসে প্রায় তিন হাজার টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব।
সিলিং ফ্যান কেবল গরমের সময় কার্যকর এমন নয়, শীতেও ফ্যান ঘরকে আরামদায়ক রাখতে পারে। আমরা জানি, গরম বাতাস হালকা বলে ওপরের দিকে ওঠে। তাই ঘরের উত্তপ্ত বাতাস সিলিংয়ের কাছে জমা হয়। ফ্যানটিকে যদি ঘড়ির কাঁটার দিকে কম গতিতে ঘোরানো যায়, তাহলে সেই উষ্ণ বাতাস নিচের দিকে নেমে আসে। ঘরের নিচের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এ জন্য শীতপ্রধান দেশে গরমের সময়ও ফ্যান থাকে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, ভেটেরান এয়ার