চাঁদে বিধ্বস্ত রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা ২৫

একেই বুঝি বলে তীরে এসে তরি ডোবা। প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের অপেক্ষায় ছিল রাশিয়া। আরও একটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল রুশরা। গুনছিল দিনক্ষণ। কিন্তু সম্ভব হলো না। ২০ আগস্ট চাঁদে অবতরণের আগেই বিধ্বস্ত হয় রাশিয়ার নভোযান লুনা ২৫।

মানুষবিহীন এই নভোযান চাঁদকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্ষপথ থেকে কিছুটা এগিয়ে যায় নভোযানটি। এতেই বাঁধে যত বিপত্তি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকেই আছড়ে পড়ে এটি। ৮০০ কেজি ওজনের ল্যান্ডারটি চাঁদের বুকে ‘নেই’ হয়ে গেছে। কিন্তু কেন লুনা ২৫ কক্ষপথের বাইরে চলে গেল, সে ব্যাপারে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস কিছু জানায়নি। তবে রাশিয়া ইতিমধ্যে এ ব্যর্থতার কারণ খতিয়ে দেখার জন্য একটি দল গঠন করেছে।

শেষ ১৯৭৬ সালে চাঁদে অবতরণ করেছিল রাশিয়া। লুনা ২৪ নভোযানের সাহায্যে সেবার চাঁদের আলোকিত অংশে (মানে আমরা সব সময় যে পাশ দেখি) নেমেছিল। পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিল চাঁদের মাটির নমুনা। কিন্তু এরপর কেটে গেছে ৪৭ বছর। চাঁদে আর কোনো অভিযান চালায়নি রুশরা। তবে দেরিতে হলেও আবার আদাজল খেয়ে নেমেছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার জন্য। চাঁদে যাওয়ার এ পরিকল্পনা রাশিয়া শুরু করেছিল ২০১০ সালে। ১৩ বছরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ হয়ে গেছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি রাশিয়ান রুবল। কিন্তু সবটাই ব্যার্থ হলো। ১০ আগস্ট চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল লুনা ২৫ নভোযানকে।

রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতে চন্দ্রাভিযান চালনা করা কঠিনই বটে। যুদ্ধের কারণে রাষ্ট্রীয় তহবিলের বেশির ভাগ টাকাই বরাদ্দ দেওয়া হয় সামরিক বাহিনীতে। ফলে সবকিছু ঠিক করে আবার কবে রাশিয়া চন্দ্রাভিযান চালাবে, তা বলা মুশকিল।

তবে আশার কথা হলো, ভারতের চন্দ্রযান-৩ পৌঁছে গেছে চাঁদে। ২৩ আগস্ট, বুধবার বাংলাদেশ সময় ৬টা ৩৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ভারতের ল্যান্ডার 'বিক্রম'। বিজ্ঞানীদের আশা, এই অভিযানের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাওয়া যাবে পানির সন্ধান। কারণ, ভবিষ্যতে চাঁদে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে পানির বিকল্প নেই। পাশাপাশি এ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়াও গবেষণা করবে নভোযানটি। একই আশা নিয়ে অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়াও। কিন্তু তারা একটুর জন্য ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করায় আদতে লাভ বিজ্ঞানের ও বিশ্ববাসীর। হয়তো এ অভিযানের সাহায্যে জানা যাবে চাঁদের অন্ধকার পাশের আরও অনেক অজানাকে।

সূত্র: স্পেস ডটকম, ইসরো ও বিবিসি