গাণিতিক ধাঁধা সমাধান করতে পারে বন্য হাতি

বুনো হাতিফাইল ছবি

প্রচলিত আছে, হাতি কখনো কিছু ভোলে না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর চেয়ে চমকপ্রদ একটি তথ্য জানিয়েছেন। হাতি গাণিতিক ধাঁধা সমাধান করতে পারে। হাতির সামনে বিজ্ঞানীরা কী ধরনের গাণিতিক ধাঁধা সমাধান করতে দিয়েছিল? চলো জানা যাক, বন্য হাতি এই কঠিন কাজটি কতটা সফলভাবে করতে পারল।

দরজা খোলা তোমার জন্য খুব সহজ কাজ। হ্যাঁ, অবশ্যই হাত দিয়ে। কিন্তু কাজটা যদি শুঁড়ের সাহায্যে করতে বলে? না, তোমার তো শুঁড় নেই, তা আমি জানি। কিন্তু হাতির তো আছে। হাতিকে তাই শুঁড় দিয়ে দরজা খোলার পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবে এই দরজা খোলার মধ্যেই ছিল কিছুটা ধাঁধা। কয়েকটি বুদ্ধিমান বন্য হাতি সেই ধাঁধা সমাধানও করতে পেরেছে।

এমনিতে হাতি খুব বুদ্ধিমান প্রাণী। একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতির মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ৫ কেজি। যেকোনো স্থলজ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মানুষের মস্তিষ্কের আকারের চেয়ে প্রায় তিন গুণ। বুদ্ধিমান না হয়ে উপায় আছে! দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করা, মৃত হাতির জন্য শোক প্রকাশ কিংবা পানির উৎস খুঁজে পেতে সাধারণত হাতিরা বুদ্ধি ব্যবহার করে।

যা–ই হোক, থাইল্যান্ডের সালাকাপ্রা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে এশিয়ান হাতির ওপর বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষা চালান। তাঁরা গাছের সঙ্গে পাশাপাশি তিনটি বাক্স লাগিয়ে রাখেন। বাক্সের ভেতরে ছিল হাতির অন্যতম প্রিয় খাবার কাঁঠাল। তবে বাক্স খুলে কাঁঠাল খেতে চাইলে দিতে হবে পরীক্ষা। ধাঁধা সমাধান করে খুলতে হবে বাক্সগুলো। বাক্স তিনটি ভিন্ন তিন উপায়ে খোলা যেত। একটি বাক্সটি খুলতে হলে বাক্সের দরজা ভেতরের দিকে পুশ করতে হয়। মানে হালকা ভেতরের দিকে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলে বাক্স খুলে যায়। একটি বাক্সের দরজা নিজের দিকে টেনে খুলতে হয়। আর অন্যটি খুলতে হলে বাঁ থেকে ডানে স্লাইড করতে হয়।

মোট ৭৭টি হাতি বাক্সের কাছাকাছি গিয়েছিল। এর মধ্যে গাণিতিক ধাঁধা সমাধান করতে আগ্রহী হয় ৪৪টি হাতি (আসলে কাঁঠাল খেতে আগ্রহী)। পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, ৫টি হাতি তিনটি বাক্সই খুলতে সক্ষম হয়েছে। ৮টি হাতি দুটি করে বাক্স খুলতে পারে আর ১১টি হাতি খোলে একটি বাক্স। অর্থাৎ মোট ২৪টি হাতি এই ধাঁধা সমাধান করতে পেরেছে। তবে পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে শুধু কাঁঠাল!

এ সম্পর্কে অ্যানিমেল বিহেভিয়ার জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুসারে, যে ৫টি হাতি সব কটি বাক্স খুলতে সক্ষম হয়েছে, সেগুলো ছিল বয়স্ক ও পুরুষ হাতি। তবে পুরুষ হওয়ার কারণে হাতিগুলোর বুদ্ধি বেশি ছিল কি না, এ ব্যাপারে গবেষণা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু যে হাতি যত বেশি সময় চেষ্টা করেছে, সেগুলো তত ভালো ফল করেছে।

গবেষকেরা একই পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিড়িয়াখানায় করেছিলেন। সেখানে ৬০ শতাংশ (১৪টির মধ্যে ৮টি) জাম্বো হাতি তিনটি দরজা খুলেছিল। গবেষকেরা মনে করেন, ওই হাতিগুলোর থাকার পরিবেশ এবং খাবারের কারণে তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। কারণ, চিড়িয়াখানায় তাঁদের যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হয়। নিয়ম করে ঠিক সময়ে প্রতিদিন খাবার দেওয়া হয়।

গবেষকেরা বলেছেন, হাতিদের ধাঁধা সমাধানের এই দক্ষতা তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কীভাবে জঙ্গলে সারভাইভ করতে হয়, তা হাতিরা বুঝতে পারে।