সত্যিই কি চা-কফি খেলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়
পড়াশোনা বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গেলে অনেক সময় ঘুম পায় বা ক্লান্ত লাগে। এতে কাজে আর মনোযোগ দেওয়া যায় না। তখন অনেকেই চা-কফি খায় ক্লান্তি দূর করতে। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠলে ক্লান্ত লাগে অনেকের। এই ক্লান্তি তাড়ানোর জন্য অনেকেই চা বা কফি পান করে।
চা ও কফি—উভয় পানীয়েরই ক্লান্তি দূর করার কাজটি করে ক্যাফেইন (Caffeine)। ক্যাফেইন প্রাকৃতিকভাবে মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করে। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র ক্যাফেইন দিয়ে প্রভাবিত হয়। যখন আমরা চা-কফি পান করি, তখন ক্যাফেইন দ্রুত রক্তপ্রবাহে মিশে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। মস্তিষ্কে ক্যাফেইন এক ধরনের অ্যাডেনোসিন (Adenosine) নিউরোট্রান্সমিটারের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অ্যাডেনোসিন সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কে ক্লান্তির সংকেত পাঠায় এবং ঘুম ভাব তৈরি করে। ক্যাফেইন এই অ্যাডেনোসিনের রিসেপ্টরগুলোকে ব্লক করে দেয়, যার ফলে ক্লান্তি সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। এতে আমরা সজাগ ও চাঙ্গা অনুভব করি।
চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কফির চেয়ে কম থাকে। এক কাপ চায়ে সাধারণত ৩০-৯০ মিলিগ্রাম। চায়ে এল-থিয়ানিন (L-Theanine) নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিডও থাকে, যা ক্যাফেইনের প্রভাবকে কমিয়ে দেয়।
চা এবং কফি উভয়ই ক্যাফেইনযুক্ত হলেও এদের প্রভাবের ধরনে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কফিতে চায়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। এক কাপ কফিতে সাধারণত ৮০-১৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকতে পারে, যা কফির প্রকারভেদ ও তৈরির পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। এই উচ্চমাত্রার ক্যাফেইন দ্রুত প্রভাব ফেলে, যার ফলে হঠাৎ করে ক্লান্তি কমে যায় এবং মানসিকভাবে সজাগ লাগে। তবে, এর প্রভাব দ্রুত শেষ হলে অনেকের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন ক্র্যাশ হতে পারে। এতে হুট করে ক্লান্তি বা অস্থিরতা লাগে।
চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কফির চেয়ে কম থাকে। এক কাপ চায়ে সাধারণত ৩০-৯০ মিলিগ্রাম। চায়ে এল-থিয়ানিন (L-Theanine) নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিডও থাকে, যা ক্যাফেইনের প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। এল-থিয়ানিন মস্তিষ্ককে শান্ত এবং মনোযোগ বৃদ্ধির অনুভূতি তৈরি করে, যা ক্যাফেইনের অস্থিরতা সৃষ্টিকারী প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। এর ফলে চায়ের প্রভাব ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ক্যাফেইন সামাজিকভাবে আমাদের ক্লান্তি অনুভব করার ক্ষমতাকে দমন করে। অর্থাৎ, এটি ক্লান্তি দূর করে না বরং ক্লান্তি বা ঘুমের সংকেতকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে দেয় না। এর ফলে আমরা সামাজিকভাবে সজাগ অনুভব করি এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে পারি। তবে, এর প্রভাব শেষ হলে শরীরের প্রকৃত ক্লান্তি আবার ফিরে আসে। পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম না নিলে, ক্যাফেইন দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি বা অবসাদের সমাধান নয়। বরং, ক্যাফেইনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তির কারণ হতে পারে।