ফেনী শহরে আবার বন্যা কেন?
গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাড়ছে নদ-নদীর পানির প্রবাহ। অনেক এলকায় বন্যার আশঙ্কাও দেখে দিয়েছে। বিশেষ করে ফেনী অঞ্চলে দ্রুত বাড়ছে পানি। তোমরা দেখেছ, ২০২৪ সালে ফেনী শহর ডুবে গিয়েছিল বন্যার পানিতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, দোকানপাট, ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছিল মানুষ। এ বছরও এরকম দুযোর্গে আশঙ্কা আছে। তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে—বারবার কেন ডুবছে এই শহর?
এর একটা বড় কারণ হলো, ফেনী নদী ও এর আশেপাশের খালগুলোর প্রাকৃতিক পথ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শহর বড় হচ্ছে, নতুন নতুন রাস্তা, দালান, বাঁধ বানানো হচ্ছে। কিন্তু এইসব দালান বানানোর আগে নদী, খাল আর জলাধারের জায়গাগুলো ঠিক আছে কি না সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে না ।
অনেক খাল ভরাট হয়ে গেছে। যে খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো, সেখানে এখন দোকান কিংবা বাড়ি। যার ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পানি আর বের হতে পারছে না। শহরের ভেতরেই তা জমে থাকছে।
আবার ফেনী নদীতে যে ক্লোজার (এক ধরনের বাঁধ) আছে, সেটাও সব সময় পানি বের করতে পারে না। অনেক সময় বর্ষা উল্টো পানি আটকে ফেলে। ফলে শহরের ভেতরের পানি বের হতে না পেরে প্লাবন ঘটায়।
আরেকটা বড় ব্যাপার হচ্ছে—জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। আগে যেখানে মাসে একবার ভারি বৃষ্টি হতো, সেখানে এখন হঠাৎ দিনে দুই-তিন বার বৃষ্টি হচ্ছে। শহরের ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা বা খাল দিয়ে এত পানি দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
শুধু শহর বানানোই কি উন্নয়ন? না কি নদী, খাল আর জলাধার বাঁচিয়ে রেখে টিকে থাকার পথ তৈরি করাই উন্নয়ন? এবার সময় এসেছে এই প্রশ্ন করার। তরুণদের বুঝতে হবে—এই পৃথিবী আমাদেরই। আমরা না চিনলে, কে চিনবে?
মুনসুর রহমান: পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়