টিনটিন সব সময়ের

তুমি কি ইদানীং মনে করতে শুরু করেছ যে কমিক বই হলো পুঁচকে পড়ুয়াদের জিনিস? আর তোমার বয়স এখন শার্লক হোমসে ডুবে যাওয়ার? তবে যা-ই বল না কেন, টিনটিনের কথা বোধহয় একেবারেই আলাদা। কথা বলা কুকুর স্নোয়ি, যার বাংলা নাম কুট্টুস, ক্যাপ্টেন হ্যাডকের অদ্ভুত ঘরানার বকাঝকা, হ্যাডক আর মিলানের কোকিলকণ্ঠী গায়িকা বিয়াংকা কাস্তাফিওরের টক-ঝাল সম্পর্ক, থমসন আর থম্পসনের (রনসন আর জনসন) রসে ভরা বোকামি কিংবা দুষ্টু ছেলে আবদুল্লার নিত্যনতুন কুকীর্তি—এ সবকিছুর সঙ্গী হওয়ার ভাবই আলাদা। আর পাঁচ কি ছয় বছর আগে পড়ে ফেলা টিনটিন কমিকসগুলো আবার পড়তেও যেন নতুনের মতোই মজা পাওয়া যায়।

আমরা টিনটিন কিনতাম টিফিনের পয়সা জমিয়ে। জন্মদিন বা অন্য কোনো উপলক্ষে কেউ পেয়ে যেত সেলোফেন মোড়ানো চকচকে নতুন টিনটিন। বন্ধুমহলে কয়েক দিন তার ভাবই অন্য রকম! এখন অবশ্য খঁুজলে বন্ধুর বড় ভাই বা কাজিনের পুরোনো আলমারিতে পেয়ে যাবে পুরোনো টিনটিন। বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধুর বাসায় ডিকশনারির গাদায় একবার পেয়ে গিয়েছিলাম লাল মলাটে বাঁধাই করা প্রায় ২৪টি কমিকসের ভলিউম। খুলে দেখার আগে অবশ্য পেট মোটা একটা ডিকশনারি ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছিল না! নাকে একটা রুমাল বেঁধে তাই পুরোনো বইয়ের স্তূপে শুরু করে দিতে পারো টিনটিনের খোঁজে অভিযান। না পেলেও বাজি ধরে বলা যায়, অভিযান একদম বৃথা যাবে না। বড় ভাইয়ের তিন বিষয়ে লাল দাগসহ ক্লাস সেভেনের রিপোর্ট কার্ড, বোনের কাছে প্রাইভেট টিউটরের প্রাইভেট চিঠিসহ ‘প্রয়োজনীয়’ অনেক কিছুই পেয়ে যেতে পারো। একবেলার পিৎজা অথবা ফ্রায়েড চিকেনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে!

নিজের মালিকানায় টিনটিন পেতে চাইলে সোজা চলে যাও নিউমার্কেট। ৪০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবে আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশিত বাংলায় আনকোরা কমিকের বই। ইংরেজি কমিকের দাম অবশ্য আরেকটু বেশি পড়বে। সোবহানবাগ, কলাবাগানের বইয়ের দোকানগুলোতে পাবে। আর পুরোনো টিনটিনের জন্য নীলক্ষেত তো আছেই। ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় মিলবে আস্ত একেকটা টিনটিন কমিক। পড়ে আবার ফেরত দিতেও পারো। তাতে তিন ভাগের এক ভাগ দাম ফেরত পাবে। আর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লাইব্রেরিতে বসে একেবারে বিনা পয়সায় পড়তে পারো টিনটিন কমিক। অবশ্য সে জন্য তোমাকে ফরাসি ভাষা জানতে হবে। সেখানেই পাবে হার্জের আঁকা টিনটিনের খসড়া সংস্করণ। নেড়েচেড়ে দেখে নিতে পারবে সেটাও।

কুট্টুসকে সঙ্গে নিয়ে চলছে টিনটিনের অভিযান
কাটু‌র্ন: হার্জ

ওয়েব থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারো। একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবে অনেক সাইট, যেখান থেকে তুমি পিডিএফ হিসেবে ডাউনলোড করতে পারবে টিনটিন। www.tintin.eugraph.com সাইটটি ঘুরে বেশ মজা পাবে। টিনটিন কমিক নিয়ে অসংখ্য কুইজ পাবে এখানে। ক্যাপ্টেন হ্যাডক রেগে গেলে কী কী বলে বকাঝকা করেন, প্রফেসর ক্যালকুলাস কেন হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন না—এ জাতীয় প্রশ্ন করে ভড়কে দিতে পারো বন্ধুদের। আর টিনটিনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট www.tintin.com-এ পাবে টিনটিন নিয়ে অনেক মজার জিনিস।  

বেলজিয়ামের এক তরুণ সাংবাদিক নিজের ফক্স টেরিয়ার কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে যে ঘুরে বেড়াবে সারা দুনিয়া—এমন আইডিয়া থেকেই হার্জ আঁকতে শুরু করেন টিনটিন। ১৯২৯ সালে বেলজিয়ামের একটি পত্রিকায় বের হয় প্রথম টিনটিন কমিক টিনটিন ইন দ্য ল্যান্ড অব দ্য সোভিয়েতস নামে। টিনটিন নিয়ে মোট ২৩টি কমিক বই করেছিলেন হার্জ। জো, জেত্তে অ্যান্ড জোকো এবং কুইক অ্যান্ড ফ্লাপকে নামে আরও দুটি কমিক সিরিজ করেছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে মারা যান তিনি।

টিনটিনকে নিয়ে অ্যানিমেটেড, লাইভ অ্যাকশন—দুই ধরনের ফিল্মই তৈরি হয়েছে। ২০১১ সালে মুক্তি পেল স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অব টিনটিন চলচ্চিত্রটি। ১৯৮৩ সাল থেকে এর আইডিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন স্পিলবার্গ। তখনই কিনেছিলেন এর প্রয়োজনা স্বত্ব। দ্য ক্র্যাব উইথ দ্য গোল্ডেন ক্লজ, দ্য সিক্রেট অব দি ইউনিকর্ন ও রেড রাখামস ট্রেজার কমিক দুটি অবলম্বনে স্ক্রিপ্ট লিখছেন স্টিভেন মোফাট, এডগার রাইট ও জো কর্নিশ। আর টিনটিন চরিত্রে অভিনয় কণ্ঠ দিয়েছেন জেমি বেল। ভিলেন শাখারিনের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস বন্ডখ্যাত ড্যানিয়েল ক্রেগ। বসুন্ধরা সিটি, রাইফেলস স্কয়ারে বা অন্য কোনো বড় ডিভিডির দোকানে পেয়ে যাবে সেসব।

টিনটিন কমিকসের প্রিয় চরিত্রগুলো
কাটু‌র্ন: হার্জ