মানুষের শরীরে কী কী মৌল আছে

বিলিয়ন বিলিয়ন পরমাণুর সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত। আমাদের পরিচিত মৌল আছে প্রকৃতিতে ১১৮টি। এর মধ্যে মানবদেহে আছে প্রায় ৬০ ধরনের মৌল। তবে ২০ ধরনের মৌল আমাদের শরীরে বেশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবেচেয় বেশি পাওয়া যায় চার ধরনের মৌল। আমাদের শরীরে কোন মৌল কতটুকু আছে? ধরে নিই, একজন ব্যক্তির ভর ৮০ কেজি। সে হিসাবে তাঁর শরীরে কোন মৌলটি কতটুকু থাকতে পারে, চলো তা জানা যাক।

অক্সিজেন: ৫২ কেজি

আমাদের শরীরের মোট ভরের অর্ধেকের বেশি থাকে অক্সিজেন। তবে পরমাণুর হিসেবে অক্সিজেন কিন্তু অর্ধেক নয়। আরেকটু বুঝিয়ে বলি। ধরো, তোমার ভর ৮০ কেজি। তাহলে ৫২ কেজি থাকবে অক্সিজেন। কিন্তু তোমার শরীরে যদি মোট ৮০টি পরমাণু থাকে, তাহলে ৫২টি অক্সিজেন থাকবে না। সে ক্ষেত্রে অক্সিজেনের সংখ্যা হবে এক–চতুর্থাংশ। অর্থাৎ ২০টি। শরীরের মোট পরমাণু ৮০টি শুধু বোঝানোর জন্য ধরেছি। আসলে পরমাণু থাকে বিলিয়ন বিলিয়ন।

কার্বন: ১৪.৪ কেজি

আমাদের শরীর গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কার্বন। পৃথিবীতে যত জীব আছে, সব জীবের প্রাথমিক উপাদান এটিই। আমাদের দেহের মোট পরমাণুর ১২ শতাংশ কার্বন। অর্থাৎ শরীরে মোট ৮০টি পরমাণু থাকলে কার্বন থাকবে প্রায় ৯টি।

হাইড্রোজেন: ৮ কেজি

আমাদের শরীরে থাকা হাইড্রোজেন তৈরি হয়েছিল মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাংয়ের সময়। অন্যান্য মৌলগুলো পরে কোনো নক্ষত্রের কেন্দ্রে তৈরি হয়েছে। যেগুলো পরে কোনো সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাকাশে ছড়িয়ে গেছে। পৃথিবী যেহেতু মহাকাশেরই অংশ, তাই এ গ্রহেও মৌলগুলো পাওয়া যায়। আমরাও মহাবিশ্বের অংশ। তাই হাইড্রোজেন পাওয়া যায় আমাদের শরীরেও।

নাইট্রোজেন: ২.৪ কেজি

মানবদেহে যে চারটি মৌল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি নাইট্রোজেন। প্রাচুর্যের দিক থেকে এটার অবস্থান চতুর্থ। শরীরের ৯৯ শতাংশ পরমাণুই এই চারটি মৌল দিয়ে গঠিত। আমাদের শরীরের সব যায়গায় এ মৌলটি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

ক্যালসিয়াম: ১.১২ কেজি

বেশির ভাগ ক্যালসিয়ামই থাকে আমাদের হাড়ে ও দাঁতে। ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের প্রোটিনও নিয়ন্ত্রণ করে।

ফসফরাস: ৮৮০ গ্রাম

এ মৌলটিও পাওয়া যায় মানুষের হাড়ে।

সালফার: ২০০ গ্রাম

এটি ভিটামিন এইচ ও থায়ামিনের মতো আমাদের শরীরে কাজ করে।

পটাশিয়াম: ২০০ গ্রাম

মানবদেহের তরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

সোডিয়াম: ১২০ গ্রাম

মানবদেহের তরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ক্লোরিন: ১২০ গ্রাম

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড আকারে ক্লোরিন আমাদের পেটে পাওয়া যায়। এটি শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে।

ম্যাগনেশিয়াম: ৪০ গ্রাম

ম্যাগনেশিয়াম মানুষের বিপাকে সাহায্য করে। পাশাপাশি কাজ করে হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায়।

আয়রন বা লোহা: ৪.৮ গ্রাম

এ মৌলটি হিমোগ্লোবিন আকারে লোহিত রক্তকণিকায় অক্সিজেন পরিবহনে ভূমিকা রাখে।

ফ্লোরিন: ৩ গ্রাম

এটি জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়। তবে দাত শক্ত করতে ফ্লোরিনের ভূমিকা আছে।

এ ছাড়া নিচের মৌলগুলো সামান্য পরিমাণে হলেও শরীরে পাওয়া যায়—

  • জিঙ্ক: ২.৬ গ্রাম

  • স্ট্রনশিয়াম: ০.৩৭ গ্রাম

  • আয়োডিন: ০.০১২৮ গ্রাম

  • কপার: ০.০৮ গ্রাম

  • ম্যাঙ্গানিজ: ০.০১৩৬ গ্রাম

  • মলিবডেনাম: ০.০১০৪ গ্রাম

এ ছাড়া আরও অনেক মৌল আছে, যেগুলো শরীরে অতি সামান্য পরিমাণে থাকে। সেগুলো আর এখানে উল্লেখ করলাম না। কারণ, সেগুলোর বেশির ভাগই শরীরের জন্য অপরিহার্য নয়। মানে শরীরে থাকলে ভালো আবার না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই।

সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট