বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি আইকন অব দ্য সিজ

‘বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ কোনটি’ জিজ্ঞেস করলে টাইটানিকের কথাই বলেন অনেকে। কারণ, এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের সবচেয়ে বিশাল এবং বিলাসবহুল জাহাজ। ১৯১২ সালে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যাওয়ার পর থেকে ইতিহাসের ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িয়ে আছে টাইটানিকের নাম। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। দিনে দিনে জাহাজ নির্মাণের প্রযুক্তি হয়েছে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ। যার জন্য আজকের দিনে টাইটানিকের চেয়েও অনেক বড় জাহাজ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ কারিগরির মাধ্যমে মানুষ নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে টাইটানিকের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বড় জাহাজ। যাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি। এর নাম রাখা হয়েছে ‘আইকন অব দ্য সিজ’। চলো জেনে আসা যাক কী জন্য একে বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি তকমা দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ২৭ জানুয়ারির আগপর্যন্ত ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ’ ছিল বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি। কিন্তু ‘আইকন অব দ্য সিজ’-এর আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এটি অবস্থান হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মায়ামি বন্দর থেকে সমুদ্রে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এই দানবাকৃতির জাহাজ। এ কারণে ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাহাজে পরিণত হয়েছে। ওয়ান্ডারস অব দ্য সিজ এবং আইকন অব দ্য সি্জ দুটি ভিন্ন জাহাজ হলেও দুটিই রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি মার্কিন ক্রুজ লাইন কোম্পানির মালিকানাধীন। জাহাজের নামকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফুটবলার লিওনেল মেসি।

আয়তনের দিক থেকে আইকন অব দ্য সিজ-এর দৈর্ঘ্য ৩৬৫ মিটার বা ১২০০ ফুট এবং ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। অন্যদিকে ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ-এর আয়তন ৩৬২ মিটার বা ১১৮৮ ফুট এবং ওজন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৭ টন। টাইটানিকের দৈর্ঘ্য ছিল ২৬৯ মিটার বা ৮৮২.৫ ফুট এবং ওজন ছিল ৪৬ হাজার ৩২৮ টন। এই তিনটি বিশাল দানবের দৈর্ঘ্য এবং ওজন থেকেই অনুমান করা যায় আইকন অব দ্য সি জাহাজটি আসলে কতটা প্রকাণ্ড। আইকন অব দ্য সি ৭,৬০০ জন যাত্রী ও ২,৮০৫ জন ক্রুসহ সর্বমোট প্রায় ১০ হাজার জন নিয়ে যাত্রা করতে সক্ষম। আর ওয়ান্ডার অব দ্য সিজ জাহাজটি একসঙ্গে ৬,৩০০ যাত্রী ও ২,১০০ ক্রু ধারণ করতে পারে। টাইটানিকে সে সময় মোট যাত্রী ছিল কয়েক শ কর্মীসহ ২২০০ জন।

আইকন অব দ্য সি

বিলাসিতার প্রতিটি জিনিসই আছে আইকন অব দ্য সিজ-তে। ২০ তলাবিশিষ্ট জাহাজটিতে যাত্রীদের জন্য রাখা আছে বিনোদনের ব্যবস্থা। এই বিলাসবহুল জাহাজের যাত্রীরা চাইলেই গা ভাসাতে পারবে বিশাল ওয়াটার পার্কে। এই জাহাজে রয়েছে বিশাল আকৃতির সাতটি সুইমিংপুল, ৯টি বিশেষ উষ্ণ পানির পুল, বিশাল বিশাল ওয়াটার স্লাইডার, পানির কৃত্রিম ঝরনাধারা ও আন্ডারওয়াটার পার্ক। জাহাজটিতে ভোজনরসিকদের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ৪০ ধরনের ডাইনিং মেন্যু পাওয়া যাবে জাহাজটিতে। এ ছাড়া অন্যান্য খাবারের সুবিধা তো থাকবেই। জাহাজটি মোট আটটি আলাদা অংশে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগের বৈশিষ্ট্য আলাদা। কোনোটি তরুণ যুগলদের জন্য, আবার কোনোটি বৃদ্ধদের জন্য। শিশুদের জন্যও আছে আলাদা এলাকা, যেখানে কেবল শিশুদের জন্য নির্ধারিত সেবাই মিলবে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে গেমিং ওয়ার্ল্ড। ১৮ তলাবিশিষ্ট ওয়ান্ডার অব দ্য সি জাহাজে যেসব বিনোদনব্যবস্থা ও সুবিধা ছিল সেগুলোকেই আরও উন্নত করে উপস্থাপন করা হয়েছে আইকন অব দ্য সি জাহাজে। আর সেই যুগের টাইটানিক জাহাজে ছিল কেবল দুটি সুইমিংপুল, তিনটি ভিন্ন শ্রেণির যাত্রীদের জন্য তিনটি ভিন্ন ডাইনিং।

নিরাপত্তাব্যবস্থাতেও বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম আইকন অব দ্য সিজ। এত রকমের বিলাসিতার আয়োজন রয়েছে যে প্রমোদতরিতে, সেই ‘আইকন অব দ্য সি’ বানানো হয়েছে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে, দাবি রয়্যাল ক্যারিবীয় গ্রুপের। তারা জানিয়েছে, জাহাজটির ইঞ্জিন চলছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মাধ্যমে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই পদ্ধতিতে বাড়তে পারে দূষণের মাত্রা। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে টাইটানিক জাহাজ ছিল কয়লাচালিত।

জাহাজে ওয়াটার পার্ক

এত সব বিনোদন, আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা যে জাহাজে সেখানে ভ্রমণের জন্য খরচ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক। আইকন অব দ্য সি-র সাত দিনের যাত্রায় জনপ্রতি খরচ নির্ধারণ করেছে ২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা কিছু কম বেশি। যে কেউ চাইলেই সেই যুগের টাইটানিকের অনুভূতি পেতে ঘুরে আসতে পারে বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরি ‘আইকন অব দ্য সিজ’ জাহাজে।