বাঘের ১০ ভয়ংকর তথ্য

বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় পশু। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ মোট ৬টি দেশের জাতীয় পশু বাঘ। অ্যানিমেল প্ল্যানেট চ্যানেলের জরিপ অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণীও বাঘ। সংস্কৃত শব্দ ব্যাঘ্র থেকে বাঘ শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে। এ শব্দের মাধ্যমে বড় শিকারি প্রাণীকে বোঝায়। জলে ও স্থলে উভয় জায়গায় বাঘের বিচরণ। বাংলাদেশের সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলে। আজ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই প্রাণী সম্পর্কে তোমাদের কিছু মজার তথ্য জানাব।

১. বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্য বিড়াল

বাঘ বিড়াল-জাতীয় প্রাণী। তবে বড় বিড়াল-জাতীয় প্রাণীর মধ্যে বাঘ সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের ওজন প্রায় ৩৬৩ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

২. বাঘ শুধু মাংস খায়

বাঘের প্রধান ও একমাত্র খাবার মাংস। মাংস আর পানি ছাড়া এরা অন্য কিছু খায় না। প্রধানত হরিণ, বন্য শূকর ও মহিষ খায় বাঘ। তবে মাঝেমধ্যে এরা নিজেদেরও আক্রমণ করে বসে।

৩. নিঃসঙ্গ শিকারি বাঘ

বাঘ একা শিকার করতে পছন্দ করে। তবে এরা সাধারণত রাতেই বেশি শিকার করে। দূর থেকে শিকার দেখলে ধীরে ধীরে চুপিসারে কাছে এগিয়ে যায়। নিজের আয়ত্তে আসার পর ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ঘাড়ে। মাথার পেছনে, ঘাড় বা গলার কাছে কামড়ে হত্যা করে শিকারিকে।

৪. বাঘ ভালো সাঁতারু

বাঘ ভালো সাঁতারু
ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

বিড়াল-জাতীয় প্রাণী পানি পছন্দ না করলেও বাঘ এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। শিকার ধরতে এদের হরহামেশাই পানিতে নামতে দেখা যায়। সাঁতরে নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়েও যায় বাঘ। নিজেদের শরীর শীতল করার জন্যও বাঘ পানিতে নামে।

৫. বাঘের গর্জন শোনা যায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে

বাঘের গর্জন যে ভয়ংকর, তা না বললেও তোমরা জানো। এদের গর্জন শুনলে পিলে চমকে যায়। চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘের গর্জন শুনলেই তুমি ভয় পেয়ে যাবে। আর যদি জঙ্গলের মধ্যে বাঘের গর্জন শোনো, তাহলে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারো। এদের গর্জন শোনা যায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকেও।

৬. বাঘ ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে

প্যান্থারা গণের চারটা প্রজাতি আছে। সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ ও জাগুয়ার। চিতাবাঘ অনেক দ্রুত দৌড়াতে পারে, এটা তোমরা সবাই জানো। সে তুলনায় বাঘ অতটা দ্রুত দৌড়াতে পারে না। ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে প্রাণীটি। সেটাও কিন্তু কম নয়। মানুষের দৌড়ের গড় গতি ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার।

৭. বাঘ অনেক পুরোনো প্রাণী

পৃথিবীতে বাঘ টিকে আছে লাখ লাখ বছর ধরে। চীনের কিছু জীবাশ্ম থেকে পাওয়া নমুনা প্রমাণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সেগুলো প্রায় ২০ লাখ বছরের পুরোনো।

৮. প্রতিটি বাঘের গায়ের ডোরাকাটা দাগ আলাদা

সুন্দরবনের বাঘ
ফাইল ছবি

বাঘের গায়ের সাদা, কালো আর হলদেটে ডোরাকাটা দাগ সম্পর্কে তোমরা সবাই জানো। মূলত এই ডোরাকাটা দাগের কারণে বাঘ সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে জঙ্গলে। শিকার ধরতে সুবিধা হয়। তবে প্রতিটি বাঘের এই ডোরাকাটা দাগ ভিন্ন ভিন্ন। দুটি বাঘের মধ্যে তুমি কখনোই একই প্যাটার্ন পাবে না। সব বাঘ এ ক্ষেত্রে অনন্য। অনেকটা মানুষের হাতের ছাপের মতো।

৯. বাঘের পাঁচ উপপ্রজাতি

সাউথ চায়না টাইগার
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

বাঘের মোট পাঁচটি উপপ্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো বেঙ্গল টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার, ইন্দো-চায়নিজ টাইগার, সুমাত্রান টাইগার ও আমুর টাইগার। শেষেরটি অবশ্য সাইবেরিয়ান বাঘ নামেও পরিচিত। দুর্ভাগ্যবশত বাঘের আরও তিনটি উপপ্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেগুলো হলো কাস্পিয়ান, বালি ও জাভান প্রজাতির বাঘ।

১০. শত বছর আগেও সম্পূর্ণ এশিয়াজুড়ে ছিল বাঘের বিচরণ

বাঘ
ছবি: আশরাফুল আলম

বর্তমানে এশিয়ার সব দেশে বাঘের দেখা মেলে না। বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে ১০০ বছর আগেও এই চিত্র ছিল অন্য রকম। সম্পূর্ণ এশিয়ার বনে-জঙ্গলে দেখা মিলত বাঘের। শিকারিরা শখ করে বাঘ শিকার করতেন। কে কতটা বাঘ শিকার করতে পেরেছেন, তা হিসাব করে তাঁর সাহস ও শক্তি প্রমাণিত হতো। বিভিন্ন রাজাদের এই শক্তি প্রদর্শনের কারণে আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বাঘ। একসময় মধুপুর বনে বাঘ ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশে সুন্দরবন ও চিড়িয়াখানা ছাড়া বাঘের দেখা পাওয়া যায় না সে রকম।

তাই আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। বাঘ রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা না করলে অচিরেই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে বাঘ। আইইউসিএনের তথ্যমতে, বর্তমানে বাঘ বিপন্ন প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা টাইগ্রিস।