জেলের বড়শিতে ধরা পড়ল কমলা রঙের হাঙর
কিছু জেলে গভীর সমুদ্রে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। একপর্যায়ে জেলেদের বড়শিতে শক্তিশালী একটি মাছ ঠোকর দেয়। মাছটিকে তাঁরা টেনে তুলতে পারছিলেন না। টের পেয়েছিলেন, এটির গায়ে অনেক শক্তি। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করে এটিকে টেনে নৌকার কাছে টেনে আনা গেল। পানির ওপরে তোলার আগে তাঁরা ভেবেছিলেন, এটি বুঝি কোনো রেড স্ন্যাপার বা অ্যাম্বারজ্যাক। শক্তিশালী ও বড় আকারের এই মাছগুলো শক্তি প্রয়োগের জন্য পরিচিত। আধা ঘণ্টা পরে মাছটি যখন ভেসে উঠল, দেখা গেল এটি পুরো আলাদা একটি প্রাণী। পাওয়া গেল উজ্জ্বল কমলা-হলুদ রঙের একটি নার্স হাঙর। ছটফট করছিল।
জেলেদের নৌকায় বড়শি বাইছিলেন কয়েক প্রজন্মের জেলে ওয়াটসন। তিনি জীবনে কখনো এমন হাঙর দেখেননি। কোস্টারিকার ক্যারিবিয়ান উপকূলে অবস্থিত বারা দেল পারিসমিনা শহরের বাসিন্দা ও ফিশিং গাইড গারভিন ওয়াটসন। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা পানির নিচে একটি কমলা আভা দেখতে পেলাম। সবাই পাগলের মতো চিৎকার করছিলাম।’
ঘটনাটি গত বছরের আগস্টের। ছয় ফুটের শান্ত স্বভাবের নার্স হাঙরটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন ওয়াটসন। এরপর এটি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। ইতিহাসে প্রথম কোনো কমলা রঙের হাঙর রেকর্ড করা হয়েছে। গবেষকেরাও কখনো এমন রঙিন হাঙরের কথা শোনেননি। কোস্টারিকার সেন্টার ফর ইনডেঞ্জার্ড মেরিন স্পিসিসের নির্বাহী পরিচালক ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ড্যানিয়েল আরাউজ নারানজো বলেছেন, ‘ছবিগুলো দেখে আমি মুগ্ধ। আমি ভাবছিলাম, ওয়াও, এটা তো খুবই অদ্ভুত।’
এ মাসে মি. আরাউজ নারানজো ও তাঁর সহকর্মীরা মেরিন বায়োডাইভার্সিটি জার্নালে হাঙরটি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত হলো, হাঙরটির শরীরে আছে অদ্ভুত রং। উজ্জ্বল হলুদ-কমলা রঙের আভা। চোখে কোনো দৃশ্যমান আইরিস নেই। আছে শুধু সাদা রং। সম্ভবত দুটি বিরল জেনেটিক অবস্থার কারণে এমন হয়েছে। একটি জেনেটিক অবস্থাকে বলে অ্যালবিনিজম বা রঞ্জক পদার্থের অভাব। পাশাপাশি এর আছে জ্যানথিজম। এই অবস্থায় হলুদ রঞ্জক পদার্থ বেশি থাকে। এই দুটি অবস্থা একসঙ্গে কোনো প্রাণীর মধ্যে দেখতে পাওয়া খুব বিরল ঘটনা। কারণ, এমন রঙের প্রাণী সহজেই শিকারির সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়।
নার্স হাঙর সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে থাকে। বাদামি রং ব্যবহার করে পানির নিচে লুকিয়ে থাকে। এক রকম ছদ্মবেশ থাকে বলে শিকারির চোখ থেকে সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। শিকারকে হুট করে চমকে দিতেও কাজে লাগে এদের ছদ্মবেশ।
তবে হাঙরটির বেঁচে থাকতে কোনো সমস্যা হয়নি। মি. আরাউজ নারানজো ধারণা করেন, হাঙরটি যে এলাকায় থাকে, সেখানকার ঘোলাটে পানি হয়তো এটিকে সাহায্য করেছে। ঘোলা পানিতে উজ্জ্বল রং দেখা যায় না। ফলে এটি সহজেই লুকিয়ে থাকতে পেরেছে।
বিজ্ঞানীদের মনে হাঙরটি নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। এটি কি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নাকি এটি নার্স হাঙরের স্থানীয় প্রজাতির মধ্যে নতুন কোনো প্রবণতা?
হাঙরটি এখন কোথায় আছে, তা কেউ জানে না। একদল জীববিজ্ঞানী আগামী বছর এই এলাকায় অনুসন্ধান চালাতে চান। তাঁদের আশা, তাঁরা এটিকে আবার খুঁজে পাবেন। হাঙরটিকে ধরে রাখার কথা ওয়াটসন বা তাঁর দলের জেলেদের মাথায় আসেনি। এটিকে ছেড়ে দেওয়ার আগে তিনি এটির পিঠে চুমু খেয়েছিলেন। মাছ ধরার সেই দিনটি সুন্দর করে তোলার জন্য হাঙরটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস