যে বিমানভ্রমণে লাগে মাত্র দুই মিনিট

বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। এক মহাদেশ থেকে যাত্রী নিয়ে আরেক মহাদেশে পৌঁছে দেয় বিমানগুলো। ছোট-বড় নানা রকম দৈর্ঘ্যের দূরত্বে এগুলো ভ্রমণ করে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বা ছোট দূরত্বের বিমানযাত্রা কোনটি? এই লেখায় শুধু সবচেয়ে ছোট দূরত্বের বিমানযাত্রার কথা পাওয়া যাবে। যাত্রাটির কথা জানলে তোমার অবাক লাগতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বাণিজ্যিক ফ্লাইট মাত্র ১ দশমিক ৭ মাইল দূরত্ব পাড়ি দিতে আকাশে ওড়ে। এইটুকু যেতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট।

এই ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ছোট প্লেনগুলোর একটি। ছয় আসনের একটি ব্রিটেন-নরম্যান আইল্যান্ডার বিমান। এমনিতেই সবচেয়ে কম দূরত্বের যাত্রা, তার ওপর সবচেয়ে ছোট বিমান। এই দুই কারণে বিমানযাত্রাটি অনন্য হয়ে উঠেছে।

বিমানে উঠতে হবে স্কটল্যান্ডের দ্বীপ ওয়েস্ট্রে থেকে। দুই মিনিট পরে গিয়ে নামা যাবে পাশের দ্বীপ পাপা ওয়েস্ট্রেতে। দ্বীপ দুটি অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের অংশ। সাতটি দ্বীপ আছে এখানে। তো ওয়েস্ট্রে থেকে পাপা ওয়েস্ট্রেতে যদি তুমি যাও, তবে যাত্রাপথে আশ্চর্য সুন্দর কিছু দৃশ্যের মুখোমুখি হতে পারো। সমুদ্র উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করে সমুদ্রের খানিকটা পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় এই দ্বীপে। চোখজুড়ানো নীল সমুদ্র দেখতে পাবে। এ ছাড়া অর্কনি হেলিকপ্টার মিউজিয়াম দেখার সুযোগ আছে। আকাশে উড়লেই মনে হবে, পুরোপুরি নতুন জগতে তুমি চলে এসেছ। নীল জল আর বড় একটা এলাকা ওপর থেকে দেখা যাবে। এই যাত্রায় খরচও খুব বেশি হবে না। স্বল্প দামে এই ভ্রমণ শেষ করতে পারবে। এখানে টিকিটের দাম জনপ্রতি প্রায় ২৩ ইউরো। ওয়েস্ট্রে এবং পাপা ওয়েস্ট্রে অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের অংশ। এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। ৬০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই ফ্লাইটে চড়ে সেসব জায়গায় গবেষণা করতে যান। দ্বীপে বাস করে প্রায় ৯০টি পরিবার। তারাও এই ফ্লাইটে চড়ে। বিকল্প পথ হিসেবে তুমি ফেরিও ব্যবহার করতে পারো। প্রতিদিনই ফেরি চলে। গাড়ি নিয়ে ফেরি চলাচল করে সপ্তাহে দুই দিন। দূরত্ব পাড়ি দেয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সময় লাগে ২৫ মিনিট।

এত স্বল্প দূরত্বে বিমান কেন? সেতু করে দিলেই তো হয়, তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। ২০১৪ সালে অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের কাউন্সিল দ্বীপগুলোকে একসঙ্গে যুক্ত করার কাজ শুরু করে, যার মধ্যে ওয়েস্ট্রে এবং পাপা ওয়েস্ট্রের মধ্যে সেতু তৈরির পরিকল্পনা ছিল। ২০২১ সালে শুরু করার কথা থাকলেও এখনো প্রকল্পটি শুরু হয়নি।

তোমার বাকেট লিস্টে এই ভ্রমণ যুক্ত করতে পারো। কারণ, এই ফ্লাইট নেওয়ার একটি কারণ হলো, এত ছোট দূরত্বের বিমানভ্রমণ করেছে, এমন মানুষ খুব বেশি নেই। মনে রেখো, উত্তর স্কটল্যান্ডের প্রত্যন্ত এলাকায় ভ্রমণ করা পর্যটকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই এই বিমানযাত্রা তোমার বাকেট লিস্টে থাকতেই পারে।