যে ৫টি অভ্যাস আয়ত্ত করে তুমিও শার্লক হোমস হতে পারবে

‘গোয়েন্দা’ শব্দটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কাল্পনিক একটি চরিত্রের নাম। বিশেষ এই চরিত্র প্রায় সব ভাষার শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা গল্পের লেখকদের প্রভাবিত করেছে। চরিত্রটির নাম শার্লক হোমস। নিজের মুগ্ধকর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধি এবং অনুসন্ধান–পদ্ধতি দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে শার্লক হোমস। ব্রিটিশ এই গোয়েন্দা চরিত্রে জনপ্রিয়তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। প্রিয় চরিত্র শার্লক হোমসের মতো বুদ্ধিমান আর বিচক্ষণ হতে চায় অনেকেই। এমন তুখোড় বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য কিছু অভ্যাস চাইলে তুমিও অনুসরণ করতে পারো।

১৮৮৭ সালে যুক্তরাজ্যের লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সাহিত্যকর্মে প্রথম দেখা যায় শার্লক হোমসকে। এর আগে ১৮৭৭ সালে এডিনবার্গ রয়্যাল ইনফার্মারিতে কাজ করতেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। চিকিৎসক ডা. জোসেফ বেলের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বলা হয়, ডা. জোসেফ বেলের জীবনযাত্রা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শার্লক হোমসের চরিত্রটি লিখেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। অসংখ্য পুলিশ তদন্তে জড়িত ছিলেন ডা. জোসেফ বেল। একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেই ওই ব্যক্তির ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য সঠিকভাবে অনুমান করতে পারতেন তিনি। তাঁর অসামান্য পর্যবেক্ষণ দক্ষতা ছিল ঠিক শার্লকের মতো। মোদ্দাকথা, শার্লক হোমসকে নিয়ে লেখা স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের ৪টি উপন্যাস এবং ৫৬টি ছোটগল্প কাল্পনিক হলেও মানুষ হিসেবে শার্লক হোমসের মতো বিচক্ষণ হওয়া অসম্ভব নয়। তাই এই অসাধারণ চরিত্রের পাঁচটি অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নেওয়াই যায়।

১. চোখ–কান খোলা রাখা

যেকোনো কাজে শার্লক হোমসের তীক্ষ্ণ নজর দেখে তুমি অবাক হবেই। একজন মানুষের জামা–জুতা দেখেই তার পেশা কিংবা জীবনের গল্প বলে দিতে পারে শার্লক। এর মানে যেকোনো পরিস্থিতি সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে অনেক অজানা তথ্য চোখে ধরা দেয়। শার্লক হোমসের বইয়ে তার চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া পড়লে মনে হয়, এটা বোঝা তো খুব সহজ! একদম যেন চোখের সামনেই আছে! মানুষ হিসেবে আমরা যা কিছু দেখে তোয়াক্কাই করি না, তা–ও ধরা পড়ে শার্লকের চোখে। নিজের সব ইন্দ্রিয় সতর্ক রেখে চলাফেরা করলে শার্লকের মতো জাদুকরি পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায়।

২. যতটুকু জানা প্রয়োজন, ততটুকুই জানা

শার্লকের স্রষ্টা আর্থার কোনান ডয়েল
ছবি: ব্রিটানিকা

শার্লকের প্রিয় সঙ্গী ডা. জন ওয়াটসনের সঙ্গে তার প্রথমবার দেখা হওয়ার কথা উল্লেখ আছে, আ স্টাডি ইন স্কারলেট উপন্যাসে। শুরুতে শার্লককে কাছে থেকে বিস্মিত ছিল দেখে ডা. জন ওয়াটসন। এর কারণ, শার্লক কিছু বিষয়ে অসম্ভব জ্ঞানী হলেও অনেক সাধারণ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ ছিল। এমনকি পৃথিবী যে সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, এটা ওয়াটসনের কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারে শার্লক। জানার পর তৎক্ষণাৎ সেই তথ্য ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। কারণ, এই তথ্য তার কাজে কোনো সহায়তা করে না। যা জেনে কোনো লাভ নেই, তা সে জানতে চায় না শার্লক। বোঝাই যাচ্ছে, কোনো অপ্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে মাথা ঘামানো একদম বোকামি হিসেবে গণ্য করে সে।

৩. ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ

একজন গোয়েন্দার কাজ কিন্তু খুব জটিল। শার্লক হোমস যেমন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার কাজ করে, তেমনি করে নির্দোষ লোকেদের রক্ষা করার কাজও। মানে এই কাজে ভুল করার সুযোগ খুব কম। শার্লক যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রকমের সম্ভাবনার কথা মাথায় রাখে। কারণ, তার ভুলের জন্য একজন অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে। শুধু গোয়েন্দাদের নয়, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় সবাইকেই। আর এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় শার্লকের মতো নিজের আবেগ–অনুভূতি দূরে রাখা জরুরি। অবচেতনে পক্ষপাত করা যেকোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

৪. বাস্তবতা অস্বীকার না করা

শার্লক হোমস মিউজিয়াম

গোয়েন্দা হিসেবে শার্লক হোমসের জয়জয়কার এত বেশি যে মনে হয় সে সব তদন্ত সফলভাবে শেষ করতে পারবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মতো শার্লক হোমসের কাজেও ব্যর্থতা আছে। আ স্ক্যান্ডাল ইন বোহেমিয়া নামের ছোটগল্পে শার্লকের ব্যর্থ হওয়ার একটি কাহিনি আছে। সেই কাহিনিতে আইরিন অ্যাডলার নামের একজন নারীকে ধরার কেস পায় শার্লক। কিন্তু নিজের বুদ্ধি দিয়ে শার্লককে বোকা বানিয়ে পালায় আইরিন। এর পর থেকে শার্লকের মনে আইরিনের জন্য এক অদ্ভুত মুগ্ধতা কাজ করত। এ থেকে আমরা বুঝলাম, হার–জিত জীবনের অংশ। কোথাও পরাজিত হলে মনঃক্ষুণ্ন না হয়ে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৫. জীবন মানেই আনন্দ

নিঃসন্দেহে শার্লক হোমস নিজের কাজকে ভালোবাসে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তদন্তের কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না সে। শার্লকের কাছে প্রতিটি তদন্ত যেন একটি নতুন খেলা। আর সব খেলায় তার উত্তেজনা কাজ করে। আনন্দ নিয়ে কাজ করলে অনেক জটিল সমস্যা সহজ হয়ে আসে। শার্লক হোমসের সামনে যত বড় সমস্যা আসত, সে যেন তত উৎসাহী হয়ে উঠত। কাজ শুধু তার নিজস্ব উদ্দীপনার উৎস ছিল না, বরং অসংখ্য মানুষের মঙ্গলের কারণও ছিল। ক্ষণস্থায়ী জীবনে অর্থবহ কোনো কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজে বের করার থেকে ভালো আর কী হয়?

ছোটবেলা থেকে অনেকেই শার্লক হোমস হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু শার্লক হোমসের মতো হওয়ার জন্য গোয়েন্দাগিরি কি করতেই হবে? স্যার আর্থার কোনান ডয়েল দারুণভাবে তৈরি করেছেন শার্লকের ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হতে পারলেও কিন্তু শার্লক হোমসের মতো হওয়া যায়। গোয়েন্দা শার্লকের মতো অনন্য হতে চাইলে তার ভালো অভ্যাসগুলো আয়ত্ত করে ফেলতে পারো!