অলরাউন্ডার অদিতি

২০১১ সালে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের এক কোচ হাজির হলেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। উদ্দেশ্য, খুদে টেনিস খেলোয়াড় খুঁজে বের করা। একে একে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম দিল ট্রায়ালে। সবার সঙ্গে নিজের নামটাও লিখে দিল দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট্ট অদিতি সওদাগর। সবাইকে অবাক করে প্রথমবারেই ট্রায়ালে নির্বাচিত হয়ে গেল সে। অ্যাথলেট হিসেবে অদিতির যাত্রা শুরু এখান থেকেই।

খেলার গল্প

২০১১ সালের পর ১১ বছর পার হয়ে গেছে। ছোট্ট অদিতি বড় হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে এখন সে। ছোটবেলায় টেনিস দিয়ে খেলাধুলা শুরু করলেও আরও বিভিন্ন খেলায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে সে। যেহেতু শুরুটা টেনিস দিয়ে, তাই টেনিসের গল্পটাই আগে বলি।

অল্প বয়সেই স্কুলের টেনিস টিমে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল অদিতি। স্কুলের হয়ে অংশ নিয়েছে বিভিন্ন স্কুলভিত্তিক টেনিস টুর্নামেন্টে। জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পাঁচটি টেনিস টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন অদিতি। রানার্সআপ হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে। অদিতি ২০১৫ সালে টেনিসের অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিল। এই টুর্নামেন্টে তার নামের পাশে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। একই বছর ইন্টারন্যাশনাল টেনিস ফেডারেশন ও এশিয়ান টেনিস ফেডারেশনের উদ্যোগে থাইল্যান্ডে ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং ক্যাম্পের অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশের চারজন বয়সভিত্তিক টেনিস খেলোয়াড়। অদিতিও ছিল সেই দলে। অদিতি তখন পড়ছে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে।

তত দিনে স্কুলের সবাই অ্যাথলেট হিসেবে চিনতে শুরু করেছে অদিতিকে। তাই দেরি না করে সে ট্রায়াল দেয় স্কুলের হ্যান্ডবল দলে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্কুলের হ্যান্ডবল টিমে সিলেক্ট হয়ে যায় অদিতি। বিভিন্ন হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে জিততে থাকে একের পর এক ট্রফি। ডাক আসে ন্যাশনাল ক্যাম্পের। ক্যাম্প শেষে অনূর্ধ্ব-১৮ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিল অদিতি। টেনিসের পাশাপাশি হ্যান্ডবলেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে সে। ২০১৬ সালে জার্মানির উলজবার্গ কাপে স্কুল টিমের হয়ে অংশ নেয় অদিতি।

স্কুলজুড়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অদিতি। শিক্ষকদের কথায় স্কুলের প্রায় সব স্পোর্টসে অন্তত একবার করে ট্রায়াল দেয় সে। প্রায় সব জায়গায় নির্বাচিত হলেও সেখান থেকে সে বাস্কেটবলকে বেছে নিয়েছিল। জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টের বাস্কেটবলে বিভিন্ন পর্যায়ে ছয়বার দলের সঙ্গে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি ছুঁয়েছে অদিতি।

স্কুল শেষ করে কলেজে ওঠার পর ফুটবল ও ভলিবলে চোখ পড়ে অদিতির। অল্প সময়েই জায়গা করে নেয় কলেজের ফুটবল ও ভলিবল টিমে। দুই টিমের হয়েই ঢাকা মহানগরী আন্তকলেজ প্রতিযোগিতায় হয়েছে রানার্সআপ।

খেলার বাইরের অদিতি

এত এত খেলা একসঙ্গে সামাল দিতেই বেশ কষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা অদিতির। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা আরও অবাক করার মতো। সব খেলা সামলে আরও অনেক কিছুই করে সে। সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াড’-এ জাতীয় পর্বে প্রতিযোগিতার পর আন্তর্জাতিক পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়েছে অদিতি। একই সময়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল আইকিউ অলিম্পিয়াড’-এ সে জাতীয় পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

পড়ালেখায়ও অদিতি বেশ ভালো। পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে পেয়েছে জিপিএ-৫। ক্লাসের রেজাল্টও সব সময়ই ভালো। সবকিছুতেই পরিবারের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পায় অদিতি। তবে শর্ত একটাই—পড়ালেখাটা ঠিক রাখতে হবে, ধরে রাখতে হবে ভালো রেজাল্ট। সব শর্ত মানে বলেই হয়তো বিভিন্ন টুর্নামেন্টে গ্যালারিতে পরিবারকে পায় অদিতি।

অদিতির আছে আরও গুণ। আবৃত্তি ও আঁকাআঁকি তার খুব পছন্দ। লেখালেখি, বই পড়া ও দাবা খেলাও খুব প্রিয়। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে ভরতনাট্যম নাচ শেখে অদিতি। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সঙ্গে। একদম অলরাউন্ডার!

অদিতির সবকিছুজুড়ে খেলা থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ভাবনাটা অন্য রকম। বাংলাদেশে এখনো কোনো নারী সেনাপ্রধান হননি। তাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সে হতে চায় এ দেশের সেনাপ্রধান। স্বপ্ন পূরণ হোক বা না হোক, ছোটবেলার মতো বড়বেলাতেও আলো ছড়াক অদিতি।