স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিংয়ের এ টু জেড

স্ক্র্যাচ এ হলো একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। ব্লক সাজিয়ে ছবির মতো করে তৈরি হয় এই ভাষা। সব বয়সের মানুষের জন্য সহজে করার প্রোগ্রামিং স্ক্র্যাচ। তোমার মনের ভাবনাকে আরও সৃজনশীল করতে এই প্রোগ্রামিং দারুণ কার্যকরী। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশে, বাংলাসহ ৭০টির বেশি ভাষায় স্ক্র্যাচ ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রোগ্রামিং হল কম্পিউটারকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি। কম্পিউটার বড় সমস্যা বা কাজ ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে। সেই ছোট ছোট কাজগুলো ধাপে ধাপে সমাধানের মাধ্যমেই বড় কাজটি সম্পন্ন করা হয়ে যায়।

যে কোন একটি কাজ প্রোগ্রাম লিখে সমাধান করার জন্য কীভাবে চিন্তা করতে হবে এবং স্ক্র্যাচ ব্যবহার করে কীভাবে তা সমাধান করা যাবে তা নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। একটি প্রোগ্রামিং সমস্যা একাধিক পদ্ধতিতে কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে তার উদাহরণও দেখানো হবে। প্রথমে আমরা সাধারণ সহজ প্রোজেক্ট দিয়ে তৈরির মাধ্যমে স্ক্র্যাচ শেখা শুরু করবো। ধীরে ধীরে আমরা বিভিন্ন অ্যানিমেশন গল্প, সায়েন্স প্রোজেক্ট ও গেম তৈরির প্রোজেক্টের উদাহরণ দেখব। ড্রয়িং-ডিজাইন, অডিও রেকর্ড, ও প্রোগ্রামিং - এই সবগুলো কাজই স্ক্র্যাচের মাধ্যমে করা যায়। আমরা জটিল কিছু প্রোজেক্ট তৈরি করার চেষ্টা করবো। স্ক্র্যাচ রোবোটিক্স ও ড্রোন প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। প্রাথমিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করার পরে আমরা সেগুলো শেখার চেষ্টা করব।

প্রোগ্রামিং একটি সৃজনশীল কাজ। নিজের কল্পনা ও চিন্তাগুলো প্রোগ্রামিং করে তৈরি করা সম্ভব। প্রতিদিনের অনেক কাজ আরও সহজেই করার উপায় হতে পারে প্রোগ্রামিং। এখানে আমরা প্রোগ্রামিং-এর মাধ্যমে নতুন কিছু তৈরি ও সেগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আনন্দকে প্রাধান্য দিতে চাই।

চ্যাটজিপিটি, ডিপসিক-সহ অন্যান্য আরও বিভিন্ন এআই ইঞ্জিনগুলোর জনপ্রিয়তা দেখে মনে হতে পারে, প্রোগ্রামিং শেখার কোন দরকার নাই। মনে রাখতে হবে যে, মূল বিষয়ের জ্ঞান না থাকলে অপরের বলে দেওয়া সমাধানগুলো সবসময় কাজে নাও লাগতে পারে। আর এই ইঞ্জিনগুলোও কিন্তু কেউ না কেউ তৈরি করছে, প্রোগ্রামিং করেই। তাই প্রোগ্রামিং শেখার গুরুত্ব কমে যায়নি। বরং নতুন নতুন বিষয় শেখার জন্য আরও বেশি উৎসাহিত হতে হবে।

সবখানেই এখন কম্পিউটারের ছড়াছড়ি। বিভিন্ন কাজে এখন কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। তবে কম্পিউটার ব্যবহারের সব থেকে আনন্দের দিক হলো যখন এটি তোমার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তুমি এটি প্রোগ্রাম করে দিতে পারবে। প্রোগ্রামিং-এর দক্ষতা থাকলে তোমার সামনে একটি সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের এক বিশাল জগৎ উন্মুক্ত হবে।

কোডিং বা প্রোগ্রামিং যাই বলি না কেন, এর মূল বিষয় হলো কম্পিউটারকে কোন নির্দেশনা প্রদান বা কম্পিউটারকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া। কম্পিউটারকে দিয়ে কাজ করাতে হলে তোমাকে কম্পিউটারের মতই চিন্তা করতে শিখতে হবে।

এই কাজটি একেবারেই সহজ! কম্পিউটারের নিজস্ব কল্পনা শক্তি নাই। এটি আগে থেকে বলে দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে। বড় বা জটিল কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য ছোট ছোট অনেকগুলো কাজে ভাগ করে থাকে। সেই সাথে এই ছোট কাজগুলো কীভাবে সমাধান করতে হবে এবং কোনটির পর কোনটি করতে হবে, সেটি আগে থেকেই উল্লেখ থাকতে হবে। আর এই ছোট ছোট কাজ বা ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করতে পারলে মূল বড় কাজটি সম্পন্ন করা যাবে। এই যে ধারাবাহিক নির্দেশনাগুলো উল্লেখ করার কথা বলছি, এটিই হলো কোডিং বা প্রোগ্রামিং।

কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং/কোডিং নিয়ে আলোচনা করতে হলে এখন এআই এবং এর ব্যবহার নিয়ে কিছুটা হলেও বলা উচিত! সামনের দিনগুলোতে মানুষের অনেক কাজ এআই করবে। করার মত তেমন কাজ থাকবে না। কারণ এআই বা বট সব কিছু করে ফেলবে! এমন একটা কথা গত কয় বছর থেকেই এআই নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আছে। এখন এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে। প্রায় সব ধরনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই। তবে এটি নিজে থেকে চিন্তা করে সব কিছু করে ফেলবে এমন পর্যায়ে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মানুষের মত চিন্তা করার দক্ষতা সহজেই অর্জন করে ফেলবে এমনও বলা যাচ্ছে না!

এআই ইঞ্জিনগুলো কিন্তু এক একটা প্রোগ্রাম। এগুলো মানুষই তৈরি করছে। প্রতিনিয়ত এগুলোর মান উন্নয়ন হচ্ছে। নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জিনগুলোকে।

একেবারেই সহজ এবং বারবার করতে হয় এমন কাজগুলো অনেক আগে থেকেই আমরা কম্পিউটারকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছি। ধীরে ধীরে আমরা এই কাজগুলো করিয়ে নেওয়ার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। প্রোগ্রামিং জানা থাকলে এবং দক্ষতা থাকলে আমরা নিজেরাই হয়তো অনেক টুল তৈরি করে নিতে পারবো। প্রোগ্রামিং জানলে এগুলোর জন্য অন্যদের তৈরি করার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে না।

চলবে…