যদি বছর ১২ মাসে না হয়ে ১৩ মাসে হতো, তবে কী ঘটত?

পরীক্ষার আগে পড়া রিভাইস করার সময় মনে হয়, ইশ্‌ আরেকটু যদি সময় পাওয়া যেত। কাজের চাপ থাকলে আমরা চাই, এত দ্রুত সময় চলে গেল! আরেকটু সময় পেলে কাজ সেরে ফেলতে পারতাম। এই আরেকটু সময় সত্যি পাওয়া গেলে কেমন হতো! আরেকটু সময় পেতে হলে তো দিনের ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বছরে ১২ মাস না হয়ে ১৩ মাস হবে। সত্যিই যদি বছর ১২ মাসে না হয়ে ১৩ মাসে হতো, তবে কী ঘটত? ১৩ মাসে বছর হওয়া কি সম্ভব?

একটু পেছনে ফেরা যাক। বহু আগে যখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়নি, তখন সময়ের হিসাব রাখার জন্য নানা উপায় ব্যবহার করত মানুষ। জনপ্রিয় একটি উপায় ছিল চান্দ্রপঞ্জিকা ব্যবহার করা। মাস পার হতো চাঁদের চক্রের ওপর ভিত্তি করে। এই পঞ্জিকায় মাস ছিল প্রায় ২৯.৫ দিনে। তাই তখন ১২ মাসের পরিবর্তে ১৩ মাসে হতো বছর।

মিসরীয় এবং মায়ান—এ দুই প্রাচীন সভ্যতায় ১৩ মাসের চান্দ্রপঞ্জিকা ব্যবহার করা হতো। মিসরীয়রা একে বলত ‘থিবিসের চান্দ্রপঞ্জিকা’। নিজস্ব সংস্করণ ছিল মায়ানদের দিনপঞ্জিকাতেও। ‘জোলকিন ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত ছিল সেটা।

১৩ মাসের দিনপঞ্জিকার দারুণ কিছু সুবিধা রয়েছে। একটি বড় সুবিধা হলো, প্রতিটি মাস একটি সম্পূর্ণ চান্দ্রচক্রের সঙ্গে মিলে যাবে। এর মানে চাঁদ ও এর পর্যায়ের সঙ্গে দিনপঞ্জিকাটির মিল থাকবে। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও কৃষির জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সমাজেই চাঁদের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহ্য পালন করা হয়।

আরেকটি সুবিধা হলো, ১৩ মাসের দিনপঞ্জিকা গ্রেগরিয়ানের তুলনায় সহজে ব্যবহার করা যায়। বর্তমান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে কোনো মাস ২৮ দিনে আবার কোনোটা ২৯, ৩০ বা ৩১ দিনে। চার বছর পরপর ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনে হয়। যাকে বলে অধিবর্ষ। কিন্তু ১৩ মাসের দিনপঞ্জিকায় প্রতি মাসে একই সংখ্যক দিন থাকে। কাজের পরিকল্পনা করা এবং সময়ের দিকে খেয়াল রাখা সহজ করে তোলে।

হুট করে ১২ মাসের দিনপঞ্জিকা ১৩ মাসে পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি মাসে দিন বাড়লেও সময় কিন্তু বাড়ছে না। বর্তমান সময়ে সবকিছুই চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে কর্মীদের মাসিক বেতন, সবকিছুই চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে। এটি পরিবর্তন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এই পরিবর্তনকে বাতিল করে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ, এখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে সবাই অভ্যস্ত।

বর্তমান ক্যালেন্ডারটি ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত, তাই যখন এটি পরিবর্তন করা হবে, সেই অনুশীলনগুলো ব্যাহত করতে পারে। সঙ্গে কিছু মানুষ বর্তমান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আসা ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগগুলো ছেড়ে দিতে চাইবেন না।

১৩ মাসের দিনপঞ্জিকার ধারণা খুব প্রাচীন। নতুনভাবে বিশেষজ্ঞরা নতুন কয়েকটি দিনপঞ্জিকা ব্যবস্থার প্রস্তাব করছেন। এই দিনপঞ্জিকায় চাঁদের চক্র, ঋতু ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। বিকল্প দিনপঞ্জিকার লক্ষ্য হলো, প্রাকৃতিক অবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সমাজের চাহিদা পূরণ করা।

আমরা ১৩ মাসের দিনপঞ্জিকা কল্পনা করতে পারি। এই কল্পনার হাত ধরেই কোনো এক সময় আসবে একটা নিখুঁত দিনপঞ্জিকা।