চাঁদের এই মজার তথ্যগুলো জানো কি

১. আমাদের পরিচিত চাঁদের নামটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘লুনা’ (Luna) থেকে। অন্যদিকে, ইংরেজিতে চাঁদকে বলা হয় ‘মুন’ (Moon)। এই ‘মুন’ শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ মোনা (móna) থেকে। এই ‘মোনা’ শব্দটি আবার প্রোটো-জার্মান শব্দ মেনন (menon) থেকে এসেছে, যার মূল উৎস হলো প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়ান শব্দ ‘মেনসিস’ (mensis)। মজার ব্যাপার হলো, মেনসিস শব্দের অর্থ হলো মাস। ইংরেজিতে বলা হয় যাবে মান্থ। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের নামটি এসেছে। 

আরও পড়ুন

২. আকাশে চাঁদ আর সূর্যকে আমরা প্রায় একই আকারের দেখি। কিন্তু চাঁদ সূর্যের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ ছোট। অথচ পৃথিবী থেকে দেখলে এদের দুটিকে প্রায় একইরকম দেখায়। এটার মূল কারণটি হলো এদের দূরত্ব। পৃথিবী থেকে হিসাব করলে, চাঁদ সূর্যের তুলনায় ৪০০ গুণ বেশি কাছে। যখন কোনো বস্তু আমাদের অনেক কাছাকাছি থাকে, তখন দূরের একই আকারের বস্তুর চেয়ে তাকে বড় দেখায়। এজন্য রাতের আকাশে আমরা যে অসংখ্য তারাকে ছোট ছোট আলোর বিন্দুর মতো দেখি, এদের মধ্যে অনেক তারকাই আসলে সূর্যের চেয়ে অনেক গুণ বড়। কিন্তু এরা এত দূরে আছে বলেই এদের ছোট দেখায়। চাঁদ ও সূর্যের ক্ষেত্রেও একই জিনিস ঘটে। যার কারণে পৃথিবী থেকে চাঁদ ও সূর্যের আকার প্রায় সমান মনে হয়।

মানুষের চাঁদে অবতরণের সত্যতা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে
ছবি: নাসা

৩. চাঁদে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। তাই সেখানে বাতাসও নেই। তবুও, অ্যাপোলো ১১ মিশনে নভোচারীরা চাঁদের এক বিশেষ ধরনের গন্ধ পেয়েছিলেন। এই গন্ধ তাঁদের স্পেসস্যুট এবং চাঁদের নমুনাগুলোর সঙ্গেও লেগে ছিল, যা পৃথিবীতে ফিরে আসার পরও তাঁরা অনুভব করেছিলেন। গন্ধটি ছিল অনেকটা ধাতব এবং পোড়া বারুদের মতো। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, চাঁদের ধূলিকণা এবং অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই এই অদ্ভুত গন্ধ তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন

৪. মজার ব্যাপার হচ্ছে, সৌরজগতে সূর্যের কাছের দুটি গ্রহের নেই কোনো উপগ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। এছাড়া বাকি সব গ্রহের আছে একাধিক উপগ্রহ। প্রতিবেশী মঙ্গলেরই আছে দুইটি উপগ্রহ। শনির আছে সবচেয়ে বেশি। ২৭৪টি উপগ্রহ।

আরও পড়ুন
চাঁদ
রয়টার্স

৫. বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় কয়েক বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি বিশাল গ্রহাণুর সংঘর্ষের ফলে চাঁদের জন্ম হয়েছিল। এই ভয়াবহ সংঘর্ষে পৃথিবী এবং সেই আঘাতকারী গ্রহাণু উভয়েরই ধ্বংসাবশেষ মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধ্বংসাবশেষগুলো ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে আমাদের প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ গঠন করে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার মাইল বা ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। সংঘর্ষের পরপরই, নবগঠিত চাঁদ ছিল গলিত অবস্থায়, অনেকটা ম্যাগমা সমুদ্রের মতো। তবে প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই চাঁদের এই বিশাল ম্যাগমা সমুদ্র জমে কঠিন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায়, কম ঘনত্বের শিলাগুলো উপরের দিকে ভেসে ওঠে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের পৃষ্ঠ বা চন্দ্রত্বক তৈরি হয়।

আরও পড়ুন

৬. ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭ মিশনে নভোচারী জিন সারনান শেষ ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে নামেন। নীল আর্মস্ট্রং থেকে জিন সারনান পর্যন্ত, মোট ১২ জন নভোচারী চাঁদের বুকে হেঁটেছেন।

চাঁদের ত্রিমাত্রিক ছবি
ছবি: নাসা

৭. আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের কেবল একটি নির্দিষ্ট পাশই দেখতে পাই। আর সেই অংশই সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, চাঁদের অন্য পাশটা পুরোপুরি অন্ধকার। আসলে, এটি আমাদের পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের অবস্থানের কারণে এমন মনে হয়। চাঁদের যে পাশ আমরা দেখতে পাই না, সেই অদেখা অংশও সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়, যেমনটা আমাদের দেখা অংশ হয়। তবে, বেশ কিছু চন্দ্রমিশনের মাধ্যমে চাঁদের এই অংশের ছবি তোলা হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এটি অন্ধকার নয়, বরং আলো-আঁধারির। চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য হতো ৬ থেকে ১২ ঘণ্টা। তাহলে পৃথিবীতে বছর হতো ১ হাজারের বেশি দিনে। কারণ, চাঁদের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে নিজ অক্ষের ওপর পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি কিছুটা কমে যায়। তাই ২৪ ঘণ্টায় এক দিন এবং ৩৬৫ দিনে এক বছর।

সূত্র: স্পেস ডটকম, নাসা, লাইভ সায়েন্স, সিএনএন

আরও পড়ুন