নারী ও গণিত

সোফিয়া কোভালেভস্কিয়া

১৮৫০ সালে রাশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন সোফিয়া কোভালেভস্কিয়া। কিছু কাগজ দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর ঘরের দেয়াল। কাগজগুলো ছিল গণিতের নোট করা খাতার পৃষ্ঠা। ঘরের দেয়ালে সেগুলো লাগিয়েছিলেন তাঁর বাবা। সেসব নোট পড়তে পড়তেই গণিতে মজে যান সোফিয়া। কিন্তু সে সময় নারীদের কলেজে যাওয়ার চল ছিল না। তাই বাসায় গণিতের শিক্ষক রেখে তাঁর কাছেই পড়া শুরু করেন সোফিয়া। খুব দ্রুত গণিত শিখতে পেরেছিলেন তিনি। আবিষ্কার করেছিলেন ঘূর্ণমান বস্তুসম্পর্কিত গণিত। এ ছাড়া শনি গ্রহের বলয় কীভাবে ঘোরে, সেটাও তাঁর আবিষ্কার। কোভালেভস্কিয়া পদার্থবিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো গণিতের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন, যাতে শীর্ষ ও অন্য ঘূর্ণমান বস্তুগুলো সঠিকভাবে বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৮৯১ সালে মারা যান সোফিয়া।

এমি নোয়েদার

জার্মান গণিতবিদ এমি নোয়েদার ১৯০৭ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নারীকে গণিত বিভাগে চাকরি দেয়নি। কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর (আলবার্ট আইনস্টাইনও ছিলেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী) সমর্থনে গোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছিলেন এমি নোয়েদার। যদিও শুরুতে তাঁর কোনো বেতনই ছিল না। ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে তাঁকে দেওয়া হতো। ১৯৩৩ সালে জার্মানি ত্যাগ করতে বাধ্য হন এমি। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে গণিতের অধ্যাপক পদে যুক্ত হন। কীভাবে বৈজ্ঞানিক সমীকরণ ব্যবহার করে নতুন তথ্য বের করা যায়, তা আবিষ্কার করেন এমি। বিমূর্ত বীজগণিতের অন্যতম প্রধান স্থপতি ছিলেন এমি নোয়েদার।

এমি নোয়েদার দেখিয়েছেন, কীভাবে অনেকগুলো প্রতিসাম্য বস্তু, যা পরমাণুসহ সব ধরনের বস্তুর জন্য প্রযোজ্য পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নিয়মগুলো প্রকাশ করে।

হাইপেশিয়া

৩৫৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে আলেকজেন্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হাইপেশিয়া। তখন আলেকজেন্দ্রিয়া রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। হাইপেশিয়ার বাবা ছিলেন গণিতবিদ ও দার্শনিক। তাই ছোটবেলা থেকেই জ্ঞানচর্চার মধ্যেই ছিলেন হাইপেশিয়া। বড় হয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে ওঠেন হাইপেশিয়া। বিখ্যাত দার্শনিকেরা প্রকৃতির রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন সেই স্কুলে। হাইপেশিয়া বিভিন্ন ধরনের বক্ররেখা তৈরি করতে একটি মোচক (কোণ) আকৃতির বস্তু নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। ধারণা করা হয়, ৪১৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এক খ্রিষ্টান পাদরি হত্যা করেন হাইপেশিয়াকে। হাইপেশিয়ার বিজ্ঞানভাবনাকে ধর্মের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করেছিলেন ওই পাদরি।

অগাস্টা আডা কিং

অগাস্টা আডা কিং ১৮১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী কবি লর্ড বায়রনের একমাত্র মেয়ে তিনি। কিন্তু তাঁর মা তাঁকে গণিত নিয়ে পড়তে উৎসাহী করেন। পরবর্তীকালে চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে দেখা করেন আডা। দুজন মিলে কম্পিউটার মেশিন নিয়ে কাজ শুরু করেন। আডাই প্রথম কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং করেন। আডার করা প্রোগ্রামিং ছাড়া ব্যাবেজের পক্ষে কম্পিউটার তৈরি করা হয়তো সম্ভব হতো না। তিনি আডা লাভলেস নামে আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। তাঁর নাম ‘আডা’ অনুসারে একটি কম্পিউটার ভাষাও আছে।

যদিও ব্যাবেজের জীবদ্দশায় কম্পিউটার নির্মিত হয়নি, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর পরিকল্পনা অনুসারেই কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল। সেটাও প্রায় দুই শতাব্দী পর। ব্যাবেজ তাঁর সময়ে কম্পিউটার নির্মাণ করলে এটি বাষ্পচালিত হতো!

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

ব্রিটিশ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৯ শতকে হাসপাতালের সেবার মান অনেক উন্নত করেছিলেন। ক্ষতের চেয়ে সংক্রমণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ—এটা কর্মকর্তাদের বোঝাতে পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছিলেন ফ্লোরেন্স। এমনকি নিজের মতো করে একটি গাণিতিক চার্টও তৈরি করেছিলেন। সেটা দেখতে অনেকটাই বর্তমানের পাই চার্টের মতো। ১৮৫৪ ও ১৮৫৫ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা বোঝানোর জন্য চার্ট তৈরি করেছিলেন নাইটিঙ্গেল। প্রতিটি অংশের মাধ্যমে একেকটি মাস বোঝানো হয়েছিল। নীল রং দিয়ে প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে মৃত্যু বোঝায়। কালো রং দিয়ে বোঝায় অন্যান্য সব মৃত্যু। গোলাপি রং দিয়ে বোঝায় ক্ষত থেকে মৃত্যুর সংখ্যা।

গ্রেস হপার

মার্কিন নৌবাহিনীর প্রথমদিককার এক সেনাপতি ছিলেন (অ্যাডমিরাল) গ্রেস হপার। তিনিই প্রথম কোনো প্রোগ্রামকে কম্পিউটার কোডে পরিণত করেছিলেন। তিনি এমন একটি ভাষা তৈরি করেছিলেন, যা একাধিক কম্পিউটারে ব্যবহার করা যেত। বিধ্বংসী ‘ইউএসএস হপার’ তাঁর নামে নামকরণ করা হয়। একবার হপারের কম্পিউটারে একটি মথ আটকে পড়েছিল। তিনি এটাকে ‘বাগ’ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। ‘বাগ’ বলতে ত্রুটিপূর্ণ কোডিং বোঝায়। শব্দটি এখন ‘বাগ’ নামেই জনপ্রিয়। ১৯৯২ সালে মারা যান গ্রেস হপার।

সূত্র: ম্যাথ জিনিয়াস