নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে ভেসে এসেছে রহস্যময় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ

কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের কেপ রে এলাকার প্রত্যন্ত উপকূলে একটি রহস্যময় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ ভেসে এসেছে। জানুয়ারির শেষে জাহাজটিকে তীরে ভাসতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। মাত্র ২৫০ জনের মতো লোক এখানে বাস করে। তাদের তোলা ছবি থেকে বিশ্বজুড়ে উৎসুক মানুষের কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জাহাজের সঙ্গে ছবি তুলে পোস্ট করছেন। একজন স্থানীয় শিকারি এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, জাহাজটি দেখে ১৯ শতকের মনে হয়। জাহাজের কাঠামো নিদর্শন হিসেবে রক্ষা করার জন্য তারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এই রহস্যময় জাহাজ কোথা থেকে এল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর মিডিয়ায় চলছে অনুমানের ঝড়।

স্থানীয় ফটোগ্রাফার কোরি পারচেস ওই এলাকা থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে থাকেন। তিনি ড্রোন ব্যবহার করে ছবি তুলে দেখিয়েছেন, সম্ভবত জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট।

লম্বা সময় ধরে এ অঞ্চলে অনেক জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ জেমি ব্রেক বলেছেন, গত ৫০০ বছরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলের আশপাশে সম্ভবত হাজার হাজার মানুষের সমাধি হয়েছে। কারণ, এ পথ ধরে দীর্ঘকাল ধরে জাহাজ চলাচল করে। কুয়াশার কারণে এলাকায় পথ দেখা যায় না। এখন জাহাজকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য এখানে একটি বাতিঘর আছে। এই বাতিঘরই নাবিকদের রক্ষা করে, জাহাজকে পথ দেখায়। কিন্তু এই বাতিঘর সব সময় ছিল না।

রহস্যময় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
ছবি: কোরি পারচেস

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেন্ট লরেন্স উপসাগরের কাছে কেপ রে কোভে এত বড় জাহাজ ভেসে আসার ঘটনা বিরল। সম্ভবত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার উপকূলে আঘাত করা হারিকেন ফিওনার তোড়ে ভেসে উঠেছে এই জাহাজ। এরপর উপকূলে ভেসে এসেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে হারিকেন ফিওনা প্রায় ১০০ বাড়ি ধ্বংস করেছিল। তবে জাহাজটি কোথা থেকে এল, তা জানতে জরিপ করার পরিকল্পনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি দেখে তাঁরা মনে করছেন, ১৮০০–এর দশকের নির্মাণকৌশলের সঙ্গে এর মিল আছে। যেমন জাহাজের বড় বড় তক্তা কাঠের পেরেক দিয়ে জোড়া দেওয়া। কাঠ আটকানোর জন্য ক্লিপগুলো বিশেষভাবে তৈরি। কাঠ শুকিয়ে সংকুচিত করে কপার লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ক্লিপ। সেই যুগের জাহাজে এ রকম ব্যবহার দেখা যেত। গত ৩০০ বছরে কেপ রে এলাকায় ডজনখানেক জাহাজ ধ্বংসের ঘটনার হিসাব আছে। তাই কাঠের ধরন দেখে কবে এই জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছিল, তা জানা যাবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।

জাহাজটিকে শেষ পর্যন্ত কী করা হবে, তা ওখানকার প্রত্নতত্ত্ব অফিসের ওপর নির্ভর করে। এর আগে সরকারিভাবে জাহাজের ধ্বংসাবশেষগুলো বালিতে পুঁতে রাখার নজির আছে, যেন পরে কেউ চাইলে খনন করে গবেষণা করতে পারেন। বালির নিচে বেশ ভালোভাবে কাঠের জাহাজ সংরক্ষিত থাকে। আর জাহাজটিকে রহস্যময় বলার কারণ, ১০০ থেকে ২০০ বছর ধরে এমন ঘটনা এ এলাকায় দেখা যায়নি। ভেসে আসেনি কোনো জাহাজ। তাই এখানকার মানুষের উৎসাহ একটু বেশিই।