কিন্তু দিনের পর দিন চলে যায়, আদিলাং তো উদ্ধার পায় না, তাকে তো কেউ বাঁচাতে আসে না! এভাবেই কেটে যায় আদিলাংয়ের ৪৯টি দিন! এই ৪৯ দিনে ১০টি জাহাজ পার হয়ে যায় আদিলাংয়ের আশপাশ দিয়ে, কিন্তু একটিবারের জন্যও কারও নজর যায়নি তার দিকে। বিশাল সমুদ্রে নিঃসঙ্গ আদিলাং গেয়েছে খ্রিষ্টীয় গান, পাঠ করেছে তার সঙ্গে থাকা বাইবেল, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করেছে উদ্ধার পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এমনকি একটা সময় আদিলাং একাকী বিষণ্নতায় সমুদ্রের অতলে ডুব দিয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়েও যেতে চেয়েছিল।

তবে ৪৯ নম্বর দিন তথা ৩১ আগস্ট সে দেখতে পায় এক কয়লা বহনকারী জাহাজ। নিজের অজান্তে ইন্দোনেশিয়া থেকে ভাসতে ভাসতে প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়ামে পৌঁছে যাওয়া আদিলাং সেই জাহাজ দেখেই নিজের সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে ‘হেল্প হেল্প’, আর হাত উঠিয়ে ঘোরাতে থাকে তার জামা। কিন্তু এবারও যে তারা তাকে দেখতে পাচ্ছে না! কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পেরে আদিলাং ইমার্জেন্সি রেডিও সিগন্যাল পাঠায়। এবার ভাগ্য ফেরে আদিলাংয়ের। তাকে অতিসত্বর উদ্ধার করে সেই জাহাজ আর জাহাজের ক্যাপ্টেন যোগাযোগ করেন গুয়াম কোস্টগার্ডের সঙ্গে। যেহেতু সেই জাহাজের গন্তব্য ছিল জাপান, তাই ঠিক হয় জাপান পৌঁছে আদিলাংকে দূতাবাসে হস্তান্তর করা হবে। শেষমেশ ৬ সেপ্টেম্বর জাপানে পৌঁছায় ও ৮ সেপ্টেম্বর আদিলাং প্লেনে চড়ে পৌঁছায় নিজের বাড়িতে।

সমুদ্রের অজানায় হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর আদিলাং আর এ পেশায় ফেরত যায়নি। আদিলাংয়ের এমন নিরুপায় ও অসহায়ভাবে সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা কিন্তু এটিই প্রথম নয়। একবার নয়, দুবার নয়, তিন–তিনবার সে দড়ি ছিঁড়ে রমপংয়ে ভেসে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল। প্রথমবার যদিও তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে আর দ্বিতীয়বার দুই দিনের মাঝে, কিন্তু তৃতীয়বারের অভিজ্ঞতা তাকে বাধ্য করেছে এ পেশা ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে।