ইতিহাসের দীর্ঘতম এভারেস্ট আরোহণ
বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রায়াথলন শেষ করেছেন প্রাক্তন রয়েল মেরিন অফিসার মিচ হাচক্রাফ্ট। ট্রায়াথলন একটি বহু ক্রীড়াবিষয়ক প্রতিযোগিতা, যেখানে একজন প্রতিযোগী সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়ের মাধ্যমে দীর্ঘ একটি পথ অতিক্রম করেন। মিচ ট্রায়াথলন শুরু করেন আট মাস আগে যুক্তরাজ্য থেকে এবং শেষ করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে।
মিচ হাচক্রাফ্ট ইংল্যান্ডের কেমব্রিজশায়ার শহরের বাসিন্দা। গত ১১ মে রবিবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের আগে সাঁতার, সাইক্লিং, দৌড়ানো এবং হেঁটে, মোট ২৪০ দিনে ১৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি ট্রায়াথলন শুরু করেন গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি ডোভার প্রণালি সাঁতরে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। ৩২ বছর বয়সী এই অভিযাত্রী প্রথমে ইংলিশ চ্যানেলের ৩৪ কিলোমিটার সাঁতরে ফ্রান্সে পৌঁছান। এরপর সাইকেলে চেপে ১১ হাজার ৯২৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারত পর্যন্ত যান। ভারত থেকে নেপালের কাঠমুন্ডু পর্যন্ত ৯০০ কিলোমিটার পথ দৌড়ে অতিক্রম করেন। সবশেষে, ১৬ এপ্রিল তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর জন্য ৩৬৫ কিলোমিটার পথ ট্রেকিং করেন।
গত ১১ মে, নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তিনি ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার বা ২৯ হাজার ৩২ ফুট ট্রেকিং করে এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছান। ট্রায়াথলন শেষে তিনি বলেছেন, ‘ইতিহাসের দীর্ঘতম এভারেস্ট আরোহণ এটি’। তিনি আরও বলেন, ‘মুহূর্তটা আমার ধারণার চেয়েও বেশি অসাধারণ ছিল। আমি ১১ বছর আগে আমার বাবাকে হারিয়েছি, তবুও মনে হয়েছে তিনি প্রতিটি পদক্ষেপে আমার পাশে ছিলেন। এটা কঠিন ছিল, সত্যিই খুব কঠিন। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ। কিন্তু এই বিশাল অভিযান শেষ করতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।’
এভারেস্ট জয়ে মিচ হাচক্রাফ্টের সঙ্গে ছিলেন নেপালের অভিজ্ঞ গাইড ও পর্বতারোহী গেলজে শেরপা। মিচের এই দুঃসাহসিক অভিযানের মুহূর্তগুলো ডকুমেন্টারির জন্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন ‘প্রজেক্ট লিমিটলেস’ নামের একটি টিম। মিচ অভিযান শেষে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন সবাইকে। ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এখানে পৌঁছানোর পথটি ছিল দীর্ঘ, কঠিন এবং অবিশ্বাস্য, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি।’
মিচের বাবার মৃত্যুর পর, ২১ বছর বয়সে ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে (রয়েল মেরিন) যোগদান করেন তিনি। ছয় বছর সফলভাবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ২০২১ সালে অবসর নেন। তিনি স্যাভসিম (SAVSIM) নামক একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। লন্ডন ভিত্তিক এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দাতব্য সংস্থা জন্য ৫ লাখ পাউন্ড তহবিল সংগ্রহ করার আশায় তিনি এই অভিযানটি করেছেন। এই সংস্থাটি অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও সহায়তা করে থাকে।
এভারেস্টের বেস ক্যাম্প ত্যাগ করার আগে, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, এই পর্বত আরোহণের ঝুঁকি নেওয়াটা সফল হয়েছে। তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আট বছর বয়স থেকেই এভারেস্টে ওঠার স্বপ্ন দেখেছি, যখন একটি বইতে এর ছবি দেখেছিলাম। আমি কখনো ভাবিনি এভাবে এখানে পৌঁছাবো। বছরের পর বছর প্রস্তুতি, দীর্ঘ আট মাসের শারীরিক সহনশীলতার পরীক্ষা, ইংলিশ চ্যানেল সাঁতরে পাড় হওয়া, আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলো, ১৯টি দেশ সাইকেলে ভ্রমণ, ৯০০ কিলোমিটার দৌড়ানো এবং বেস ক্যাম্পে পৌঁছানোর জন্য প্রথম এভারেস্ট অভিযাত্রীদের পথ অনুসরণ করে হেঁটে যাওয়া—এ এক দুঃসাহসিক ভয়াবহ সুন্দর যাত্রা ছিল।’
মিচ এই দীর্ঘ অভিযানে বহু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিল একটি ট্যাক্সির ধাক্কায় সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়া, বুনো কুকুরের তাড়া খাওয়া এবং সার্বিয়ায় বন্দুকের মুখে পড়া। ফ্রান্স থেকে তুরস্কে সাইকেল চালানোর সময় তাঁর সঙ্গী হয়েছিল তিন বছর বয়সী গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর।
গত ১৯ মে ‘সি টু সামিট’ নামে অভিযানে কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে হেঁটে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। ইকরামুলের যাত্রা শুরু হয় ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে তিনি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড় হয়ে বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতে ঢোকেন। জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং অতিক্রম করে ৩১ মার্চ তিনি পৌঁছান নেপালে। টানা ১,৪০০ কিলোমিটার হাঁটার পর তিনি ২৯ এপ্রিল পৌঁছে যান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে। আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী ইকরামুল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি