আবহাওয়াবিদেরা কেমন করে জানেন কখন শীত পড়বে?

আবহাওয়া অধিদপ্তরছবি: সংগৃহীত

কোভিডের সময়ের কথা কেউ আর মনে করতে চান না। প্রায় সবারই পরিচিত কেউ না কেউ সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ স্বজন হারিয়েছেন। কারও আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। ছোটরা ঘরে বন্দী থাকতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। আমাদের বেশ কিছু অভ্যাস কোভিডের কারণে বদলে গিয়েছিল। এই যেমন, আমাদের কখন বৃষ্টি হবে, কখন আসবে শৈত্যপ্রবাহ, এসবের ভাবনা তখন ছিল না। ঘরের ভেতরে থাকার সময় বাইরে বৃষ্টি হলে আমাদের কী?

তবে কোভিড–পরবর্তী সময়ে পুরোনো অভ্যাসগুলো ফিরে এসেছে। এখন আমরা আবহাওয়াবার্তার খোঁজ রাখি। ঠিক কখন বৃষ্টি হবে, সন্ধ্যা সাতটায় কত ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকবে, শীতের কাপড় পরে বাইরে বের হব কি না জানার জন্য আবহাওয়ার খবর রাখতেই হয়।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস স্বাভাবিক সময়ে যেমন কাজে লাগে, জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে ঘন ঘন ঝড়-বন্যার খবর রাখার জন্যও দরকার হয়। ধরা যাক, ভারী বৃষ্টি হবে, তলিয়ে যাবে কৃষিজমি। কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য এ তথ্য জানা দরকার। দেখা যায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা সময়েই বৃষ্টি আসে। তাপমাত্রা নেমে আসে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আমাদের খুব শীত লাগে। এভাবে আবহাওয়াবিদেরা ঠিক সময়টা বলেন কীভাবে? তাঁরা তো জাদুবিদ্যা জানেন না।

আরও পড়ুন

হাজার বছর আগে আবহাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো পর্যবেক্ষণ থেকে। মেঘের ধরন দেখে কেউ কেউ বলতেন, বৃষ্টি আসছে। কখন সূর্য ওঠে, কখন ডুবে যায়, কোন ফুল কখন ফোটে—এসব ছিল বিচক্ষণ মানুষের পর্যবেক্ষণের ফলাফল। দিন বদলে গেছে। এখনো এমন মানুষ আছে। তবে এখন আর আকাশের মেঘ দেখে আবহাওয়াবিদেরা পূর্বাভাস দেন না। বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্যের (সংরক্ষণ করা উপাত্ত) ওপর নির্ভর করে বায়ুমণ্ডলের অবস্থা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন। বলতে পারেন, কখন কতটুকু পরিবর্তন হবে।

ভবিষ্যদ্বাণী করার আগে বিশেষজ্ঞ আবহাওয়াবিদেরা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করেন। বায়ুমণ্ডলের বর্তমান অবস্থা জানার জন্য আবহাওয়া স্টেশন, উপগ্রহ এমনকি বিমান থেকে ধারণ করা তথ্যভান্ডার থেকে পাঠ (রিডিং) নেন। সংগ্রহ করা তথ্য থেকে পাওয়া যায় আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা। নির্দিষ্ট সময় পর এই অবস্থা বায়ুমণ্ডলে কীভাবে প্রভাব ফেলবে? এটি জানার জন্য আবহাওয়াবিদেরা বায়ুমণ্ডলের প্রক্রিয়া বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান প্রয়োগ করেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বায়ুর দিক বোঝা যায় এই যন্ত্র থেকে।
ফাইল ছবি

অস্ট্রেলিয়ান ক্লাইমেট কমিউনিটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী মডেল ব্যবহার করে, যার নাম আর্থ সিস্টেম সিমুলেটর (ACCESS)। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি আবহাওয়া সংস্থা ব্যুরো অব মিটিওরোলজি এই ACCESS থেকে আপডেট করা পূর্বাভাসের তথ্য পায়। বিজ্ঞানীরা এ রকম নানা আবহাওয়া মডেলের সঙ্গে তুলনা করে প্রতিদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেন।

আর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও আবহাওয়াবিদেরা আবহাওয়ার পূর্ভাবাস দেন। ঢাকার আগারগাঁও-এ অবস্থিত আবহাওয়া অফিস থেকে বিষয়টি পরিচালনা করা হয়।

মূলত আবহাওয়াবিদেরা বিভিন্ন উৎস থেকে আবহাওয়াসংক্রান্ত তথ্য গ্রহণ করেন। প্রযুক্তির সাহায্যে পাওয়া তথ্য আবহাওয়া অনুমানকারী মডেলের সাহায্যে বিশ্লেষণ করেন। এখান থেকে আসে সিদ্ধান্ত। এভাবে আমরা জানতে পারি, বাইরে বের হওয়ার সময় শীতের পোশাক পরে বের হব, নাকি হাতে ছাতা নিতে হবে! নাকি বের হওয়াই ঠিক হবে না? বাইরে ঝড়-বৃষ্টি যে।

আরও পড়ুন

স্টকহোম ইউনিভার্সিটি একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তারা বলেছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াবিদদের জন্য নির্দিষ্ট করে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন হয়ে উঠছে। অনেক জলবায়ুবিশেষজ্ঞ মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত, দাবানল, ঘূর্ণিঝড়সহ সামনে আরও তীব্র আবহাওয়ার ঘটনা ঘটবে।