ইউরোপীয় বর্ষবরণে অদ্ভুত ছয় প্রথা

বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশিরা মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। পান্তা-ইলিশ খাওয়া হয়। রীতি আর ঐতিহ্য মিলে জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে নববর্ষ। একইভাবে ধুমধাম করে ইউরোপের দেশগুলোতে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। ইউরোপে ‘নিউ ইয়ার’ মানে শুধু সশব্দ আতশবাজি ফোটানো নয়। ইউরোপের ৫০টি দেশের সব কটির আছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য। তাই ইউরোপজুড়ে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপনে বাহারি সব প্রথা ও আয়োজন দেখা যায়। ২০২৪ সাল শুরু হচ্ছে। চলো দেখি ইউরোপীয় বর্ষবরণের কিছু অদ্ভুত প্রথা!

১. আঙুর খেয়ে বছর শুরু হয় স্পেনে

স্পেনবাসী আঙুর ফল খেয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন শুরু করে। খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের রাত, অর্থাৎ থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগমুহূর্তে স্পেনের বাসিন্দারা ১২টি আঙুর ফল গুনতে ব্যস্ত থাকেন। স্পেনের শহর মাদ্রিদে ঠিক রাত ১২টার সময় একটি ঘণ্টা বাজে। সেই ঘণ্টা বাজার খবর স্পেনের সব প্রান্তে পাওয়া যায়। ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে গুনে রাখা আঙুর ফল মুখে দিতে হয়। ধারণা করা হয়, এই প্রথা শুরু হয়েছে ১৯০৯ সালে স্পেনের অ্যালিক্যান্টে শহরে। সে বছর আঙুরের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তাই চাষিরা আঙুরের বিক্রি বাড়ানোর জন্য এই প্রথা শুরু করেন।

২. জার্মানিতে নববর্ষের দিন গলানো হয় ধাতু

জার্মানিসহ ফিনল্যান্ডেও নববর্ষের দিন সিসা গলানোর একটি রেওয়াজ আছে। প্রথমে মোমবাতির ওপর ছোট্ট একটি টিন কিংবা সিসার টুকরা গলিয়ে নেওয়া হয়। পরে গলানো ধাতু ঠান্ডা পানির পাত্রে ঢালা হয়। ঠান্ডা পানিতে গলানো ধাতু নতুন আকার ধারণ করে। জার্মানদের বিশ্বাস, যাঁর গলানো ধাতু যত ভালো আকৃতি ধারণ করবে, তাঁর নতুন বছর তত ভালো যাবে।

৩. গ্রিসের বর্ষবরণে পেঁয়াজের কদর

একসময় গ্রিসের খেলোয়াড়েরা প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ খেতেন। তাঁরা ভাবতেন, পেঁয়াজ খেলে শক্তি বাড়বে। এখনো গ্রিসে পুনর্জন্ম আর উন্নতির প্রতীক পেঁয়াজ। তাই নতুন বছর শুরুর দিনে গ্রিসের মানুষ নিজ বাড়ির সামনে পেঁয়াজ টাঙিয়ে রাখেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বাড়ির মানুষের সমৃদ্ধি কামনা করেন।

৪. রোমানিয়ার নববর্ষে হ্যালোইনের ছোঁয়া

ইউরোপে হ্যালোইন উৎসবের সঙ্গে সবাই পরিচিত। হ্যালোইন উদ্‌যাপিত হয় অক্টোবরের শেষ দিন। সেদিন খারাপ আত্মাদের দূরে রাখতে সবাই বিভিন্ন রকম সাজ নেন। রোমানিয়ায় নববর্ষ উদ্‌যাপনের নিয়ম একেবারেই আলাদা। এ দেশের বাসিন্দারা জানুয়ারির প্রথম দিন রকমারি সাজ নেন (কস্টিউম) খারাপ আত্মাদের দূরে রাখতে। নববর্ষের দিন মুখোশ পরে, নকল চুল লাগিয়ে আয়োজনে (পার্টিতে) যান। এভাবে তাঁরা মৃত্যু ও পুনর্জন্ম উদ্‌যাপন করেন।

৫. ডেনমার্কের বর্ষবরণে হয় ভাঙচুর

কারও যদি রাগের মাথায় প্লেট-বাটি ছুড়ে মারার অভ্যাস থাকে, তাহলে তাঁর খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্‌যাপনে ডেনমার্ক ঘুরে আসা উচিত। থার্টি ফার্স্ট নাইটে বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রতিবেশীদের বাড়ির সামনে প্লেট-বাটি ছুড়ে মারা ডেনমার্কের একটি পরম্পরা। ডেনিশদের বিশ্বাস, নববর্ষের পরের দিন সকালে যাঁর বাড়ির সামনে ভাঙা বাসনকোসনের স্তূপ যত বড় থাকবে, তাঁর নতুন বছর তত ভালো হবে।

৬. ডাচদের আছে নববর্ষের বিশেষ খাবার

নববর্ষের দিন অলিবোলেন নামে একটি সুস্বাদু মিষ্টি খাবার খাওয়া ডাচদের ঐতিহ্যের অংশ। অলিবোলেন দেখতে বলের মতো। খেতে ডোনাটের মতো। এই খাবার শুধু নেদারল্যান্ডসেই জনপ্রিয়, এমন নয়। অলিবোলেন বেশ পুরোনো খাবার। একসময় জার্মানরাও অলিবোলেন খেত। কারণ ছিল অদ্ভুত। জার্মানরা অলিবোলেন খেয়ে পার্চটা নামের এক কাল্পনিক দেবীর আক্রোশ থেকে বাঁচার চেষ্টা করত।