ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে জানতে হবে এই ৭টি সহজ উপায়

এআই দিয়ে তৈরি

এখন জীবনের প্রায় সবখানে দরকার ইংরেজি। অফিস, স্কুল এমনকি সাধারণ কথাবার্তাতেও আমরা ইংরেজির ব্যবহার করি। পরিসংখ্যান বলে, পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ৬৭টি দেশের দাপ্তরিক ভাষা এটি। তাই বলাই যায়, আজকের দিনে ইংরেজি জানাটা খুব দরকারি। ভালো ইংরেজি বলতে পারলে ভালো চাকরি পাওয়া যায়, বিদেশে পড়ার সুযোগ মেলে এবং বাড়ে নিজের আত্মবিশ্বাসও।

তুমি যদি সাধারণ ইংরেজিও জানো, তবুও নিজেকে আরও উন্নত করতে পারবে। এ লেখায় আমরা ধাপে ধাপে শিখব, কীভাবে সাতটি সহজ উপায়ে ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা বাড়ানো যায়।

কিন্তু তার আগে জানতে হবে, ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা মানে কী? ইংরেজিতে যোগাযোগের দক্ষতা মানে এই ভাষা ব্যবহার করে অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করার ক্ষমতা। এর মানে শুধু ইংরেজিতে কথা বলা নয়, ইংরেজিতে শুনতে হবে, পড়তে হবে ও লিখতে হবে। তবে এ কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা যারা অল্প ইংরেজি জানি, তারাও নিয়মিত ইংরেজিতে এসব কাজ করি। কয়েকটা উদাহরণ দিই—

  • অফিসের মিটিংয়ে ইংরেজিতে কথা বলি;

  • ই–মেইলের উত্তর দিই ইংরেজিতে;

  • শিক্ষকের কথা বুঝি;

  • অনলাইনে পড়ি।

ব্যাপারটা শুধু গ্রামার বা ব্যাকরণ জানা নয়; বরং নিজের কথা সহজভাবে অন্যকে বোঝানো। ধরো, কেউ তোমাকে একটা ভুল তথ্য দিল; কিন্তু তুমি ঠিক কী বলবে তা বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলে। এটিই যোগাযোগের ঘাটতি। তবে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে হলে মোট চারটি মূল ভিত্তি থাকতে হবে—বলা, শোনা, পড়া ও লেখা। এগুলো নিয়ে সংক্ষেপে একটু আলোচনা সেরে নিই।

ক. কথা বলা (Speaking): কথা বলা মানে পরিষ্কার শব্দে এবং সঠিক সুরে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা। এর মাধ্যমে তুমি প্রশ্ন করতে পারো, নিজের ভাবনা ব্যাখ্যা করতে পারো বা অংশ নিতে পারো কোনো আলোচনায়।

খ. শোনা (Listening): শোনা মানে হলো অন্যজন কী বলছে, তা মনোযোগ দিয়ে বোঝা। ভালোভাবে শুনলে আপনি সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারবেন এবং ভুল–বোঝাবুঝি হবে না।

গ. পড়া (Reading): পড়া মানে বই, ই–মেইল বা ওয়েবসাইটে লেখা ইংরেজি পড়ে তার অর্থ বোঝা। পড়ার ভালো অভ্যাস তোমার শব্দভান্ডারও বাড়াতে সাহায্য করবে।

ঘ. লেখা (Writing): নিজের চিন্তাগুলোকে লিখিতভাবে প্রকাশ করে রাখতে পারো। সেটি হতে পারে বন্ধুদের সঙ্গে কোনো স্মৃতি বা ঘুরতে যাওয়ার কোনো কাহিনি। তবে চেষ্টা করবে, লেখায় যেন কোনো ভুল না থাকে।

এবার প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ওপরের চারটি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আরও কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে ইংরেজিতে কথা বলাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সে রকম সাতটি উপায় নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

১. প্রতিদিন সহজ ও পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করো

অনেকেই ইংরেজি বলার সময় ভাঙা ভাঙা শব্দ বা অর্ধেক বাক্য ব্যবহার করে। এতে দ্বিধা বাড়ে এবং অন্যজনও ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তাই প্রতিদিন এমন ১০-১৫টি পূর্ণ বাক্য বলার অভ্যাস করো, যা প্রায় সব জায়গায় কাজে লাগে। যেমন:

‘Can I have a glass of water?’ (আমি কি এক গ্লাস পানি পেতে পারি?)

‘Sorry, I didn’t understand. Can you repeat that?’ (দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি। আপনি কি আবার বলবেন?)

এই বাক্যগুলো বারবার অনুশীলন করো যাতে সেগুলো স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে ইংরেজিতে এসব কথা বলতে পারো। চাইলে টেক্সট মেসেজেও টাইপ করতে পারো। বাক্যগুলো বারবার ব্যবহার করলে এগুলো তোমার জন্য একদম সহজ হয়ে যাবে।

২. প্রতিদিন একা একা ইংরেজিতে কথা বলো।

ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করার জন্য সব সময় অন্যের প্রয়োজন নেই। তুমি নিজেই আওয়াজ করে কথা বলতে পারো। যেমন এখন তুমি কি করছ তা ইংরেজিতে বলো:

‘I am making tea.’ (আমি চা বানাচ্ছি।)

‘I need to leave in 10 minutes.’ (১০ মিনিটের মধ্যে আমাকে বের হতে হবে।)

এই সাধারণ অভ্যাসটি তোমার মস্তিষ্ককে ইংরেজিতে চিন্তা করতে সাহায্য করবে এবং বলার সময় জড়তা কমবে।

বোনাস টিপস: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এমনভাবে কথা বলো, যেন তুই অন্য কারও সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলছ। এতে তোমার গলার স্বর, আত্মবিশ্বাস এবং কথা বলার ভঙ্গি উন্নত হবে।

৩. ইংরেজি শো বা মুভি দেখে শব্দ ও বাক্য শেখো

ইংরেজি মুভি বা টিভি শো দেখলে বোঝা যায়, মানুষ বাস্তবে কীভাবে কথা বলে। শুরুতে পুরো মুভি না দেখে ছোট ছোট দৃশ্য দেখো। ‘ফ্রেন্ডস’ বা ‘দ্য অফিস’-এর মতো সহজ সংলাপের শো দিয়ে শুরু করতে পারো।

কীভাবে করবে:

  • প্রথমে শুধু ১-৩ মিনিটের একটি দৃশ্য দেখো।

  • দ্বিতীয়বার ইংরেজি সাবটাইটেল দিয়ে দেখো।

  • তৃতীয়বার ভিডিও থামিয়ে ছোট ছোট লাইন তাদের মতো করে বলার চেষ্টা করো।

বোনাস টিপস: ইউটিউবের স্পিড কমিয়ে ০.৭৫ গুণ করতে পারো। ভিডিওতে কীভাবে শব্দ উচ্চারণ করে বা নির্দিষ্ট শব্দে জোর দেয় সেটা শোনো। এটি তোমাকে ছন্দ, স্বর ও প্রতিদিনের অভিব্যক্তি ধরতে সাহায্য করবে। বইয়ের মাধ্যমে এটা শেখা যাবে না।

৪. প্রতিদিনের শব্দ দিয়ে একটি খাতা তৈরি করো

নতুন শব্দ শিখে তা মনে রাখতে পারলে লাভ হবে। সাত দিন আগের শেখা শব্দ মনে রাখতে না পারলে তাতে লাভ হবে না। তাই নিজের জন্য একটি শব্দভান্ডারের খাতা তৈরি করো। শুধু শব্দটিই লিখবে না, সেটি দিয়ে একটি সহজ বাক্যও লিখবে। যেমন:

শব্দ: Attend (যোগদান করা)

বাক্য: ‘I will attend the meeting at 4 PM.’ (আমি বিকেল ৪টার মিটিংয়ে যোগ দেব।)

প্রতিদিন এমন ৩-৫টি নতুন শব্দ খাতায় লেখো এবং প্রতি সপ্তাহে একবার পুরোনো শব্দগুলো পড়ো।

৫. জোরে জোরে পড়ো এবং অন্যদের নকল করো

জোরে জোরে কিছু পড়লে জিভের জড়তা কাটে এবং মস্তিষ্ক ও জিহ্বা একসঙ্গে কাজ করতে শেখে। খবরের কাগজ, ব্লগ বা নিজের লেখা মেসেজও জোরে জোরে পড়তে পারো।

কীভাবে করবে:

  • একটি গল্প বেছে নাও;

  • ধীরে ধীরে ও স্পষ্ট করে পড়ো;

  • প্রতিটি শব্দ কেমন শোনায় তা মনোযোগ দিয়ে শোনো।

৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইংরেজিতে পোস্ট করতে পারো

লেখার অভ্যাস করলে তোমার চিন্তাগুলো সুসংগত হবে এবং গ্রামারের ব্যবহারও উন্নত হবে। প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্র পাঁচলাইন ইংরেজিতে লিখতে পারো।

যেভাবে করবে:

প্রতিদিন একটা ছোট পোস্ট করতে পারো। যেমন ‘Today I had a meeting’ (আজ আমার একটি মিটিং ছিল)।

হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রামের ছবিতে ইংরেজিতে ক্যাপশন লিখতে পারো।

ইংরেজি ইউটিউব ভিডিও বা লিংকডইন পোস্টে ছোট ছোট কমেন্ট করো।

৭. অন্যদের থেকে মতামত নাও এবং অনুশীলন চালিয়ে যাও

তোমার কোথায় ভুল হচ্ছে তা না জানলে উন্নতি করা কঠিন। তাই সপ্তাহে একবার বন্ধু, শিক্ষক বা সহপাঠীকে তোমার কথা শুনতে বা লেখা পড়তে বলো। একটি এক মিনিটের ভয়েস নোট রেকর্ড করে তাদের পাঠাও এবং সৎ মতামত চাও। ভুল ধরিয়ে দিলে মন খারাপ না করে তা থেকে শেখো এবং আবার চেষ্টা করো।

আরও কিছু সহজ টিপস

১. কথা বলার সময় ‘ummm,’ ‘like’ বা ‘you know’-এর মতো অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার কমাতে হবে।

২. ধীরে এবং পরিষ্কারভাবে কথা বলার চেষ্টা করো।

৩. নিজের ভয়েস রেকর্ড করে শোনো। তাহলে ভুলগুলো ধরতে পারবে।

৪. চোখে চোখ রেখে, হাসিমুখে কথা বলার চেষ্টা করো।

৫. দিনে ১০ মিনিট একটি ভাষা শেখার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারো।

সব কথার শেষ কথা হলো, ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা তোমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। তাই লজ্জা না পেয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে প্রতিদিন একটু একটু করে অনুশীলন চালিয়ে যাও।

সূত্র: নাউকিরি ডটকম ও টপ ইউনিভার্সিটিস ওয়েবসাইট

আরও পড়ুন