ভ্যান গঘের স্টারি নাইট ছবিতে লুকিয়ে থাকা বিজ্ঞান
এখনো কতজনের ফোনেই ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘স্টারি নাইট’ ওয়ালপেপার হিসেবে থাকে। মডার্ন আর্টের নিদর্শন হিসেবে ছবিটি প্রচুর ব্যবহার করা হয়। শিল্পীরা এই ছবি নিয়ে অনেক সময় কাটান, অনুশীলন করেন। বিজ্ঞানীরাও এটি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এই ছবিতে প্রকৃতির এক জটিল বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া লুকিয়ে আছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই চিত্রকর্মের ঘূর্ণায়মান আকাশের রেখাগুলো বাস্তব জগতের বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহের (fluid dynamics) মতো। এর মানে হলো, এই ছবি শুধু ভ্যান গঘের কল্পনার ফসল নয়, বরং এটি বায়ুর গতিবিধির এক নিখুঁত চিত্র।
১৮৮৯ সালের জুন মাসে মানসিক অস্থিরতার কারণে দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি আশ্রমে থাকাকালে ভ্যান গঘ এই ছবি এঁকেছিলেন। তাঁর কল্পনার রূপ ক্যানভাসে হয়ে উঠেছিল ঘূর্ণমান আকাশের ছবি, যেখানে নীল ও হলুদ রঙের বিভিন্ন স্তরের মিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে এক অসাধারণ চিত্র, যেখানে ‘গতি’ আছে।
সম্প্রতি চীনের গবেষকেরা এই ছবির ঘূর্ণিপাকগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেন। ছবিটি থেকে তাঁরা বুঝতে পারেন, এগুলোর সঙ্গে বাস্তব জগতের তরল প্রবাহের অনেক মিল আছে। গবেষণায় তাঁরা দেখেন, ছবিটির আঁচড় ও রঙের বিন্যাস আসলে গ্যাসীয় প্রবাহের গতিশীলতার সঙ্গেও মিলে যায়।
এই গবেষণা ‘ফিজিকস অব ফ্লুইডস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘স্টারি নাইট’ ছবির ১৪টি স্বতন্ত্র ঘূর্ণি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, এগুলো কোলমোগোরভের সূত্র মেনে চলে। কোলমোগোরভের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে, কীভাবে বায়ুমণ্ডলের গ্যাসশক্তি প্রবাহিত হয় এবং বিভিন্ন মাত্রায় পরিবর্তিত হয়।
গবেষকেরা অবশ্য স্পষ্ট করেছেন, ভ্যান গঘ এই বিজ্ঞানের সূত্রগুলো জানতেন না। কারণ, এগুলো তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে তাঁর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি ও প্রকৃতির প্রতি গভীর সংবেদনশীলতার কারণে তিনি এমন চিত্র আঁকতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষক ইয়ংশিয়াং হুয়াং বলেন, ‘ভ্যান গঘ হয়তো প্রকৃতির বিভিন্ন ঘূর্ণিপাক ও মেঘের গতিবিধি লক্ষ করেই এই চিত্রকর্ম এঁকেছিলেন বা তাঁর মধ্যে আকাশের গতি বোঝার এক সহজাত ক্ষমতা ছিল।’
ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ শুধু বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহের সঙ্গে নয়, অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গেও বিস্ময়করভাবে মিলে যায়। ২০২০ সালে একদল গবেষক একটি নতুন প্রজাতির ময়ূর মাকড়সার নামকরণ করেছিলেন ‘স্টারি নাইট স্পাইডার’। কারণ, এই মাকড়সার পিঠের রঙিন বিন্যাসের সঙ্গে ছবির ঘূর্ণমান আকৃতির মিল পাওয়া যায়। ২০২১ সালে একদল মাইক্রোবায়োলজিস্ট লক্ষ করেন, ব্যাকটেরিয়ার এক বিশেষ প্রজাতির কলোনির বৃদ্ধি এবং ‘স্টারি নাইট’-এর মূল ঘূর্ণিগুলোর মধ্যে মিল আছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের মে মাসে নাসার জুনো প্রোব বৃহস্পতির উত্তর গোলার্ধের ঝড়ের নতুন ছবি প্রকাশ করে, যা ‘স্টারি নাইট’-এর মতোই ঘূর্ণমান ও দেখতে এলোমেলো ছিল।
এই চিত্রকর্ম থেকে বোঝা যায়, শিল্পীর সংবেদনশীল চোখও কখনো কখনো প্রকৃতির গভীর সত্য আবিষ্কার করতে পারে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স