এই সময়ে জ্বর থেকে বাঁচতে কী করব

বছরের এই সময়ে হুট করে জ্বর আসতে পারে। ভয় না পেয়ে জ্বর মোকাবিলা করতে হবে।মডেল: সূচনা, ছবি: অধুনা

বর্ষাকাল কী দারুণ একটা সময়, তাই না? গরমের হাঁসফাঁস ভাবটা নেই, শীতের বাড়তি কষ্ট নেই। ঝুপঝাপ বৃষ্টি আর কাদাজলের ঝক্কি থাকলেও বর্ষাকাল অনেকেরই পছন্দ। তা তোমার পছন্দ হোক আর না হোক, সময়টা কিন্তু জ্বরেরও। সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বর থেকে শুরু করে ডেঙ্গু জ্বর, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগও ছড়ায় এ মৌসুমে। ওদিকে আবার বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণও। নানান কারণে অনেকেরই জ্বর হচ্ছে এই সময়। কী করলে ভালো থাকবে বর্ষায়, তা জানা আছে তো?

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির একটুআধটু ছাঁট গায়ে লাগবেই। কখনো হয়তো ইচ্ছা করবে এক ছুটে রাস্তায় বা ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে। হয়তো সঙ্গে থাকবে বন্ধুরা, ছুট লাগাবে ফুটবলটা নিয়ে। কিংবা কাটবে একাকী এক দারুণ সময়। ভিজে একাকার হয়ে বাড়ি ফেরার পর হয়তো জুটবে মায়ের বকুনিও। তবে বৃষ্টিই যে জ্বরের কারণ, তা কিন্তু অধিকাংশ সময়ই সত্যি নয়। বরং সুস্থ থাকতে তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে বেশ কিছু বিষয়। আর অসুস্থ হলে সুস্থতার জন্য কী করতে হবে, তাও জানা থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে বলছিলেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।

আরও পড়ুন

বৃষ্টিকথন

বৃষ্টি
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগলেও খুব বেশি সময় ভেজা যাবে না। খেয়াল করেছো নিশ্চয়ই, বৃষ্টির পানি বেশ ঠান্ডা। বৃষ্টিতে ভেজার পর দ্রুত পোশাক বদলে ফেলতে হবে। কাদা বা ময়লা পানির ছিটা লাগলে কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীরের ওই অংশ ধুয়ে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নেওয়া যেতে পারে। তবে সবই করতে হবে খুব দ্রুত। যত জলদি পারো মাথা এবং শরীর মুছে ফেলবে ভালোভাবে। হালকা গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখতে পারো খানিকটা সময়ের জন্য। বৃষ্টিতে ভেজার পর একটু গরম পানীয়ও খাওয়া যেতে পারে। এসব বিষয় মেনে চললে ঠাণ্ডা-জ্বরের ঝুঁকি কমে যায়। তবে কারও যদি ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকে, মানে ধরো আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হলেই কিংবা ঠান্ডা কিছু খেলেই হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হয়, তাদের বৃষ্টিতে না ভেজাই ভালো।

আরও পড়ুন

আরও যা খেয়াল রাখতে হবে

প্রায়ই দেখা যায়, মশা শরীরের যে স্থানে কামড়ায়, সেই স্থানে ক্ষত ও চুলকানির সৃষ্টি হয়
ছবি: সংগৃহীত

মশা থেকে সাবধান। ডেঙ্গু জ্বর আর চিকুনগুনিয়া ছড়ায় মশার মাধ্যমে। আরও ছড়ায় জিকা ভাইরাস। পাহাড়ি এলাকায় ম্যালেরিয়াও ছড়ায় মশার কামড়েই। মনে রেখো, মশারি তোমার বন্ধু। দিনে বিশ্রাম নিলেও মশারি ব্যবহার করা উচিত। ফুলহাতা জামা আর ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরা ভালো বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী মৌসুমে। নিয়ম মেনে মস্কিউটো রিপেল্যান্টও ব্যবহার করতে পারো। ঘরে মশা তাড়াতে ভ্যাপোরাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করবে ঠিকঠাক। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবে না। খাওয়ার আগে এবং মলত্যাগের পরেও হাত পরিষ্কার করবে। এই সাধারণ অভ্যাসেই বেঁচে যাবে বহু রোগ থেকে।

বাসি বা পচা খাবার খাবে না। পথের ধারের খাবার এবং পানীয় না খাওয়াই ভালো।

মৌসুমি ফলমূল এবং টাটকা শাকসবজি খাবে রোজ।

আরও পড়ুন

অসুস্থ হলে

অসুস্থ হলে বিশ্রাম নিতে হবে কয়েকটা দিন। জ্বর হলে পানি খাবে একটু বেশি। কিংবা অন্য কোনো তরল খাবার। জ্বরের সময় গোসল করলে ক্ষতি হয় না। গোসলের পানিতে সামান্য গরম পানি মিশিয়ে নেওয়া ভালো। জ্বর কিংবা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ সেবন করবে না। জ্বরের সঙ্গে জয়েন্টে ব্যথাও হতে পারে কোনো কোনো রোগে। ব্যথা বেশি হলে ব্যথার জায়গায় গরম সেঁক দিতে পারো মিনিট কুড়ি সময়ের জন্য। এভাবে দু বেলা সেঁক দিলে অনেকটা আরাম পাবে। নাক বন্ধ হয়ে গেলে নরমাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করতে পারো। বাজারে এই ড্রপ কিনতে পাওয়া যায়। গরম পানির ভাপ নিলেও উপকার মিলবে। কাশি হলে উষ্ণ পানীয় খেতে পারো। দু-তিন দিনের মধ্যে জ্বর না কমলে কিংবা প্রথম থেকেই খুব বেশি জ্বর থাকলে বা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসা নিতে দেরি করো না। চিকিৎসক ছাড়া কারও পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবে না কখনোই। পাতলা পায়খানা বা বমি হলে স্যালাইন খেতে ভুলো না।

আরও পড়ুন