খুব শীতে মৌমাছিরা কী করে বাঁচে?

মৌমাছি খুব সামাজিক ও সুশৃঙ্খল প্রাণী।ছবি: সংগৃহীত

প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এই পৃথিবীটা শীতে বেশ ঝিমিয়েই পড়ে। বৈরী আবহাওয়ায় বেঁচে থাকার জন্য কত কিছুই তো অদলবদল করে নিতে হয়, কিছু ক্ষেত্রে প্রস্তুতিও নিতে হয় আগেভাগে। সাপের শীতনিদ্রার কথা নিশ্চয়ই জানো তোমরা, জানো পিঁপড়ের ‘শীতের সঞ্চয়’-এর কথাও। তীব্র শীতের দেশ থেকে আমাদের দেশে উড়ে আসা অতিথি পাখিদের কথাও তোমাদের অজানা নয়। কখনো কি ভেবে দেখেছ, শীতে মৌমাছিরা কী করে? তীব্র শীতে কীভাবে বেঁচে থাকে তারা?

তাপ ধরে রাখার ‘বিশেষ’ মৌচাক

মৌচাক সংগ্রহ করছেন একজন মৌয়াল
ছবি: সাদিক খান

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এলে মৌমাছিরা তৈরি করে ‘বিশেষ’ ধরনের মৌচাক। এটাও শীতনিদ্রার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গায় লুকিয়ে থাকার মতো ব্যাপার। তবে ঘুমিয়ে পড়লে চলে না তাদের। কর্মী মৌমাছিরা তাদের শরীরের কাঁপুনি আর নড়াচড়ার সাহায্যে তাপ ধরে রাখে মৌচাকে। এই সময়ে একে অপরের খুব কাছে থাকে তারা। একেবারে গায়ে গায়ে লেগেই থাকে বলা যায়। মৌমাছিদেরও পিঁপড়ের মতো ‘শীতের সঞ্চয়’ থাকে। বুঝতেই পারছ, তাদের সঞ্চয় হলো মধু। আগেভাগে সঞ্চয় করে রাখা এই মধুই শীতের সময়টায় তাদের কাজে আসে। তবে সঞ্চিত মধু পর্যন্ত পৌঁছতে মৌচাক ঘিরে হামাগুড়ি আর মৌচাক বেয়ে ওঠার মতো কাজগুলোও তাদের করতে হয় দলবেঁধে, একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বজায় রেখে। এতসব প্রচেষ্টার ফলাফলটা হয় দারুণ। পরিবেশের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলেও মৌচাকের একেবারে ভেতরের তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ৩২-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। কেন্দ্রে অবধারিতভাবেই থাকে রানি মৌমাছি। শীতের মৌচাক গ্রীষ্মের মৌচাকের চেয়ে আলাদা। শীতের মৌচাকে এমন মৌমাছির প্রয়োজন হয়, যারা বেশ হৃষ্টপুষ্ট।

তবু ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

ছেলে মৌমাছিরা কিন্তু তীব্র শীতে মারা যায়। আর মৌচাকের ভাগ্যে কী ঘটবে, সেটাও নিশ্চিত নয়। কর্মীদের আয়ু, তাদের শীত সামলানোর ক্ষমতা, মৌচাকে সঞ্চিত মধুর পরিমাণ এবং মৌচাকটি নিরাপদ স্থানে আছে কি না, সেই সব কিছুর ওপর নির্ভর করে মৌচাকটির ভবিষ্যৎ।

শেষকথা

মৌচাকে মৌমাছি।
ছবি: সংগৃহীত

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, তীব্র শীতের ভয়াবহ দিন পেরিয়ে গেলে এরপর এই বিশেষ মৌচাক থেকে মুক্তি মেলে তাদের। পরিবেশের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে সেই মৌচাক ছেড়ে চলে যায় মৌমাছিরা। আমাদের দেশের সব জায়গাতে অবশ্য তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে না। তবে কোথাও কোথাও তো নামে। আর শীতপ্রধান দেশগুলোতে তো তাপমাত্রা নেমে যায় আরও নিচে। ভেবে দেখো, তীব্র শীতে বেঁচে থাকতে দিনরাত কী শ্রমটাই না দিতে হয় মৌমাছিদের। টিকে থাকার লড়াইটা সত্যিই ভীষণ কঠিন তাদের জন্য।

সূত্র: ব্রিটানিকা