তিমি কেন শুধু ছোট মাছ খায়

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী তিমি, তথ্যটা হয়তো তুমি জানো। তিমির ব্যাপারে আরও একটু বেশি জানা থাকলে এটাও হয়তো জানবে যে তিমি শুধু ছোট প্রাণী খেতে পারে। ভাবতে পারো, এত বড় প্রাণী কেন বড় বড় মাছ বা হাঙর ধরে খায় না! আসলে ওরা বড় মাছ খেতেই পারে না। ওদের মুখের মধ্যে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ ঢুকে যেতে পারবে ঠিকই, কিন্তু খেতে পারবে না। কিন্তু কেন? এত বড় প্রাণী কেন বড় খাবার খেতে পারে না?

এ ব্যাপারটা বুঝতে হলে আগে ডাঙার প্রাণীদের দিকে তাকাতে হবে। ধরো, মশা বা পিঁপড়ার মতো ছোট পোকামাকড় খায় পাখি বা অন্য পোকা। আবার হরিণ বা জেব্রার মতো প্রাণীদের শিকার করে বাঘ বা সিংহের মতো মাংসাশী প্রাণীরা। আর হাতি বা গন্ডারের মতো বিশাল প্রাণীরা সাধারণত ঘাস–লতাপাতা খেয়েই বাঁচে।

কিন্তু কেন বড় প্রাণীরা ঘাস বা লতাপাতা খায়? কারণ, গাছপালা সব সময় কাছেই পাওয়া যায়। গাছ তো আর দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারে না। তাই বড় প্রাণীদের জন্য এটা নিরাপদ আর সহজ খাবার।

আরও পড়ুন

কিন্তু সাগরের গল্পটা একটু অন্য রকম। ওখানে চারদিকে ঘুরে বেড়ায় কোটি কোটি ছোট প্রাণী। এদের অনেক প্রাণীকে খালি চোখে দেখাই যায় না। যেমন, ক্রিল, কোপপড ও নানা রকম শামুকের বাচ্চা। এগুলোকে একসঙ্গে বলে জুপ্ল্যাঙ্কটন। এই জুপ্ল্যাঙ্কটনরা সাগরের সবখানে, সব গভীরতায় ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। আর ওদের শরীরের গঠন এমন যে একবার মুখ খুললেই লাখ লাখ ছোট প্রাণী পানির সঙ্গে ভেতরে ঢুকে যায়। কিন্তু ওরা দাঁত দিয়ে প্রাণীগুলোকে কামড় দেয় না। কারণ, দাঁত থাকলেও এত ছোট প্রাণী ধরা যেত না। ওদের মুখে দাঁতের বদলে আছে ‘বেলিন প্লেট’ নামে একধরনের ছাঁকনি। দেখতে অনেকটা চিরুনির মতো। এই বেলিন প্লেটগুলো কেরাটিন দিয়ে তৈরি। আমাদের নখ বা চুলও তৈরি কেরাটিন দিয়ে!

নীল তিমি একবারে তার মুখের ভেতর প্রায় একটা ছোট সুইমিংপুলের সমান পানি পুরে ফেলতে পারে

তিমিরা কীভাবে খায় জানো? ওরা বিশাল একটা ‘হাঁ’ করে একগাদা পানি মুখে ভরে নেয়। সেই পানিতে ভেসে থাকে লাখ লাখ চিংড়ির মতো দেখতে ক্রিল আর অন্য প্ল্যাঙ্কটন। একটা নীল তিমি একবারে তার মুখের ভেতর প্রায় একটা ছোট সুইমিংপুলের সমান পানি পুরে ফেলতে পারে! এরপর ওরা মুখটা বন্ধ করে জিব দিয়ে পানিটা বাইরে ঠেলে বের করে দেয়। কিন্তু বেলিন প্লেটের চিরুনির মতো ছাঁকনিতে সব ছোট খাবার আটকে যায়। ব্যস! এরপর তিমি মজা করে সেই খাবার গিলে ফেলে।

আরও পড়ুন

তিমিদের বুদ্ধিটা কি ধরতে পেরেছ? একটা বড় মাছ শিকার করতে তিমিকে অনেক ছোটাছুটি করতে হতো, খরচ হতো অনেক শক্তি। তার চেয়ে একবারে মুখ ভরে লাখ লাখ প্ল্যাঙ্কটন খাওয়া অনেক সহজ! কারণ, সাগরে তো প্ল্যাঙ্কটনের অভাব নেই। তিমিদের শুধু মুখ খুলে সাঁতার কাটলেই হলো। খাবার নিজেই পেটের মধ্যে চলে যাবে!

এই সহজলভ্য আর পুষ্টিকর খাবার খেয়েই তিমিরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। একটা নীল তিমি একদিনে প্রায় ৩৬ হাজার কেজি পর্যন্ত ক্রিল খেতে পারে! এই খাবারের পরিমাণ কি বুঝতে পারছ? প্রায় পাঁচটা বড় হাতির সমান ওজন! এই বিপুল পরিমাণ খাবারই তিমির বিশাল দেহকে সচল রাখে।

বুঝতেই পারছ, বড় হওয়া মানেই শুধু বড় বড় খাবার খাওয়া নয়। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট জিনিসই জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ

আরও পড়ুন