সবুজ আসুক পড়ার টেবিলেও

বই-খাতায় ঠাসা পড়ার টেবিলে তো পড়ছি রোজ। ঠিকঠাক অক্সিজেন পাচ্ছি কি না নিচ্ছি কি তার খোঁজ? তাই টেবিলের ছোট্ট টবে গাছ লাগিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারো এক টুকরো ‘অক্সিজেন ফ্যাক্টরি’!

তা ছাড়া গবেষণা বলে, ঘরে অনেক কৃত্রিম দ্রব্যাদি আছে, যেগুলো সৃষ্টি করে বিষাক্ত ধোঁয়া। টিভি ও কম্পিউটার থেকে নির্গত ক্ষতিকারক রশ্মি; প্লাস্টিক পণ্য, দেয়ালের রং, কার্পেট ও চামড়াজাত পণ্য থেকে নির্গত হয় কত-কী বিষাক্ত উপাদান। যেমন, বেনজিন, ফরমালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, টলিউন, ট্রাইক্লোর ইথেন— যা ঘর তো বটেই, বিশেষ করে বায়ুরুদ্ধ বাক্সবন্দী ব্যস্ত অফিসে কাজ করা সবারই শ্বাসকষ্ট ও ত্বক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঘরে ঠাঁই দেওয়া এক চিলতে সবুজ সবাইকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! একে তো সৌন্দর্য বাড়াবে, আর্দ্রতা ছড়িয়ে ঘরের তাপমাত্রা হ্রাস করবে, এমনকি বাতাস বিশুদ্ধকারী হিসেবে কাজ করবে নির্বাক এই উপকারী বন্ধু গাছ।

চলো এবার চিনে নিই তেমনি কিছু ছায়াবান্ধব উপকারী গাছ। ঠাঁই দিই রোজকার পড়ার টেবিলে, দেয়ালজুড়ে কিংবা সিঁড়ি ঘেঁষে যেখানে সূর্যের আলো উঁকি দেওয়ার সুযোগ পায় না মোটে।

মানি প্ল্যান্ট

পড়ার টেবিলে একটা টাকার গাছ থাকলে কেমন হয় বলো তো! চলো টাকার গাছ লাগাই! বলছি মানি প্ল্যান্টের কথা। এতে করে মানি মানে টাকার সরবরাহ না বাড়লেও অক্সিজেন সরবরাহ যে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো।

মাটি বা পানি যে মাধ্যমেই রাখো, টিকে যাবে সে। গাঢ় সবুজ থেকে শুরু করে ডোরাকাটা বা ভেরিগেটেড মানি প্ল্যান্টও পাবে এখন।

লাকি ব্যাম্বু

নাম শুনেই মনে হচ্ছে বাঁশ! কেউ তোমাকে ‘বাঁশ’ দিক তা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না! তবে সেই বাঁশ যদি হয় সৌভাগ্যের বাঁশ, তাহলে ‘না’ না বলে নিয়ে নিতেই পারো! সত্যি বলছি, তখন উল্টো ধন্যবাদ দেবে বাঁশ দেওয়ার জন্য! কারণ এটা লাকি ব্যাম্বুর। অনেকের ধারণা, সৌভাগ্য বয়ে আনে গাছটি। সে জন্যই এমন নাম। পাতা ও কাণ্ড সবুজ, শিকড় লাল। কাণ্ডের নমনীয়তার জন্য সুখ্যাতি আছে এর—সহজেই কাণ্ড বাঁকিয়ে গাছকে যেকোনো আকৃতি দেওয়া যায়। এ জন্য আবার মাটি খোঁজার প্রয়োজন নেই—পানিভর্তি পাত্র বা বোতল হলেই হলো। এবার গাছটাকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পানিতে দিতে পারো নুড়িপাথর। নুড়িপাথর পাবে অ্যাকুরিয়াম বিক্রির দোকানে, কেজিপ্রতি ২০ টাকা। নতুন চারা দরকার? মাতৃগাছের বাড়তি কাণ্ড কেটে পানিতে রেখে দাও। সপ্তাহ না যেতেই শিকড় গজাবে তাতে।

পিস লিলি

বদ্ধঘরের মৃদু আলোতে বেড়ে ওঠে, এমনকি স্নিগ্ধ সাদা ফুলও ফোটে তাতে। গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফোটে, স্থায়ী হয় এক সপ্তাহ। ফুল বিবর্ণ হয়ে এলে বোঁটাসহ ফুল কেটে ফেলতে হয়। যদি ফুল না ফোটে তবে কিছুটা উজ্জ্বল আলোতে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি সূর্যালোকে নয়। পাতা চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। লম্বায় এটি ৩ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। সতর্কতা: গাছটি কিছুটা বিষাক্ত, তাই ফুল বা পাতা ছাঁটাইয়ের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিয়ো। প্রয়োজনে হাতে গ্লাভস পরে নিতে পারো।

ক্যাকটাস

গায়ে কাঁটা থাকলেও ক্যাকটাসের আছে চোখজুড়ানো সৌন্দর্য। আকারে গোলাকার ও লম্বাটে হয়। গ্রীষ্মে আবার ফুলও ফোটে। ক্যাকটাসই একমাত্র উদ্ভিদ, যার আছে খরা সহ্য করার ক্ষমতা। ফলে দীর্ঘদিন বাসার বাইরে থাকলেও এতে পানি দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মাতৃগাছের মূলে অফসেট বা শাখা জন্মে, ছুরি দিয়ে সাবধানে কেটে তা অন্যত্র লাগানো যায়। মাতৃগাছের কাটা অংশ শুকাতে দুই দিন সময় দিতে হবে, এ সময় পানি দিতে হয় না। নাহয় তাতে পানি লেগে গাছে পচন ধরতে পারে।

রাখতে পারো পেনসিল ক্যাকটাস! পেনসিল বক্সের পাশে পেনসিল ক্যাকটাস দারুণ মানায়! কোনো পাতা নেই। শুধুই সবুজ কাণ্ডের ঝোপালো হয়ে বেড়ে ওঠা।

স্পাইডার প্ল্যান্ট

একে উড়োজাহাজ বা উড়ুক্কু উদ্ভিদও বলে। স্পাইডারের মতোই ডগার ছোট ছোট চারা লাফিয়ে চলে, মাটির স্পর্শ পেলেই শিকড় ডুবিয়ে চারা আবার মাতৃগাছ হয়ে ওঠে। আর এর সৌন্দর্যও টিকে থাকে বছরের পর বছর।

হেয়ারলিফ ফিলোডেন্ড্রন

বাহারি লতানো গাছ। চকচকে পাতা হালকা তামাটে থেকে সবুজ রঙের হয়। আকারে ডিম্বাকার থেকে পানপাতার মতো। লম্বায় ৫-১০ সেমি। লিকলিকে লতা লম্বায় ৪ ফুট বা তার বেশিও হয়। এর আছে অত্যধিক অন্ধকার সহ্য করার ক্ষমতা, তাই অনায়াসে রাখতে পারো ঘরে। শুধু টবের মাটিতেই নয়, বোতলের পানিতেও দিব্যি টিকে থাকে দিনের পর দিন। চার-পাঁচ দিন অন্তর বোতলের পানি বদলে দিলেই হলো। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত লম্বা লতা ও মরা পাতা ছেঁটে ফেলতে হয়।

সোনালি পত্থোজ

দেখতে অনেকটা হেয়ারলিফ ফিলোডেন্ড্রনের মতোই লতানো। লতা লম্বায় আট ফুটের অধিক বাইতে পারে। পাতা সবুজ, তাতে আবার ডোরা ডোরা সোনালি হলুদ দাগের উপস্থিতি। বই পড়ার মতো কৃত্রিম মৃদু আলো হলেই এর যথেষ্ট। এটি বাতাসে ভাসমান ফরমালডিহাইড দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে। এটি আবার আর্দ্র বা ভেজা মাটি পছন্দ করে না, তাই দুবার পানি দেওয়ার মাঝে টবের মাটি শুকাতে দিতে হয়। কাণ্ড কেটে বোতলের পানিতে রাখলে সহজেই তাতে শিকড় গজায়।

রাবার প্ল্যান্ট

পাতার গাঢ় সবুজ রঙের জন্য এটি আকর্ষণীয়। অন্দরেই এটি আট ফুট পর্যন্ত বেড়ে ওঠে, তবে আকারে ছোট রাখতে চাইলে লম্বা ডালপালা নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেটে দিলেই হলো। আর দুবার পানি দেওয়ার মাঝে মাটি শুকাতে দিতে হবে।

এরেকা পাম

ডেস্ক, টেবিল থেকে শুরু করে স্তম্ভের পাশে ও সিঁড়ির গোড়ায় দারুণ মানায় এরেকা পাম। আকারে প্রায় সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়! তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই—গাছের আকার ছোট রাখতে চাইলে শুধু টবের আকারটা ছোট হলেই চলবে। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই যথেষ্ট।

স্নেক প্ল্যান্ট

সাপের মতো পেঁচিয়ে ওঠা ঊর্ধ্বমুখী এই উদ্ভিদের পাতা বড়ই বিচিত্র। পাতার কিনারে আছে আবার সাদা বা হলুদ শাড়ির পাড়। কদাচিৎ ফুলও ফোটে এতে। মাটি বা পানি—দুই মাধ্যমেই লাগাতে পারো।

পেপেরোমিয়া

উজ্জ্বল ও বর্ণিল পাতার এক সারি পেপেরোমিয়া ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। খুব কম খরচে বৈচিত্র্য আনতে বেগুনি, সবুজ, লাল রঙের কিনারা, তরমুজের ডোরাকাটা দাগ আর ঢেউ খেলানো পাতার পেপেরোমিয়া অতুলনীয়। দুবার পানি দেওয়ার মাঝে টবের মাটি শুকাতে দিতে হয়।

অ্যান্থুরিয়াম

সাদা, লাল, কমলা, পিঙ্ক আর পার্পল রঙের ফুল উপহার দেবে এই অ্যান্থুরিয়াম। অতি শুষ্ক বা অতি আর্দ্র কোনোটাই এর পছন্দ নয়, চাই এ দুইয়ের মাঝামাঝি।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরার ঔষধি গুণ কার-ইবা অজানা। লাগাতে পারো তাও। কোমল কাঁটায় ঘেরা ফাঁপা সবুজ ডগা বেশ আকর্ষণীয় বটে।

অন্যান্য

এ ছাড়া আছে নানা ধরনের অর্কিড, ফাইকাস, দ্রাসিনা, রেড পাম, অ্যালকেশিয়া, ডামকেন, ম্যারান্টা, অ্যাগ্লাওনেমা, চায়নিজ এভারগ্রিন ইংলিশ আইভিসহ নানা পাতাবাহার উদ্ভিদ। লাগাতে পারো সাদা ফুলের স্পাইডার লিলি, রঙিন ফুলের এমিরাস লিলিও। ঘরের মৃদু আলোতেও এরা ফুল দিতে ওস্তাদ!