বন্যপ্রাণীর অজানা ৭
১. হাতি
হাতির মাথার দুপাশের দুটি বিশাল কান দিয়ে কী করে? উত্তর হলো নিজের বিশাল দেহ ঠান্ডা করে। হাতির শুঁড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি পেশী থাকে। এই পেশীগুলোর সাহায্যে হাতি শুঁড় দিয়ে কোনো ভারী বস্তু তোলা, খাবার মুখে পুরে খাওয়া, বাচ্চা শাবকের যত্ন নেওয়া, গন্ধ শুঁকতে পারা ছাড়াও আরও অনেক রকম কাজ করতে পারে। আফ্রিকান হাতির গড় আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর। তবে কিছু কিছু হাতি ৮০ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো হাতির মস্তিষ্ক। এরা সহজে কিছু ভোলে না।
২. নেকড়ে
নেকড়েরা খুব সামাজিক প্রাণী। দল বেঁধে বাস করে। ইংরেজিতে নেকড়ের দলকে বলে প্যাক—উলফ প্যাক। একটি প্যাকে সাধারণত ৬ থেকে ১২টি নেকড়ে থাকে। নেকড়েদের বিপাক হার অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি। এর মানে, এরা খাবার থেকে দ্রুত শক্তি উৎপাদন করতে পারে, দীর্ঘ সময়টিকে থাকতে পারে না খেয়ে। নেকড়েরা নিজেদের দেহে ঘ্রেলিন (Ghrelin) নামের একটি হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঘ্রেলিন এক ধরনের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন। এজন্য এরা না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে এক সপ্তাহেরও বেশি।
৩. শামুক
শামুক প্রচণ্ড ধীরগতির স্থলচর প্রাণী। সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে, ছায়াযুক্ত জায়গায় বাস করে। শামুকদের শরীর শক্ত খোলসে আবৃত থাকে। এই খোলস এদের শরীরকে রক্ষা করে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। শামুকদের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো দীর্ঘ সময় ঘুমানো। শামুকের কোনো কোনো প্রজাতি একটানা তিন বছর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতে পারে। এই ঘুমকে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হাইবারনেশন’। বাংলায় বলা হয় শীতনিদ্রা।
৪. প্রজাপতি
প্রজাপতির পায়ে কেমোরিসেপ্টর (Chemoreceptor) নামে এক ধরনের সংবেদনশীল রাসায়নিক কোষ থাকে। এই কোষ সরাসরি নিউরন বা স্নায়ুকোষের সঙ্গে যুক্ত। মানে, মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে পারে। কেমোরেসেপ্টর কোষের মাধ্যমে প্রজাপতি শনাক্তকৃত রাসায়নিক অণু অনুযায়ী মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। এই সংকেত বিশ্লেষণ করে খাবারটি খাওয়া যাবে কি না, তা নির্ধারণ করে এরা। এভাবে প্রজাপতি বুঝতে পারে, খাবারটি মিষ্টি, তিতা, টক, লবণাক্ত বা অন্য কোন স্বাদের; কিংবা খাবারটি পুষ্টিকর বা বিষাক্ত কি না। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, প্রজাপতির পায়ের কেমোরিসেপ্টর কোষগুলো কাজ করে অন্যান্য প্রাণীর জিহ্বার মতো।
৫. বাঘ
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের রাজা। শুধু নামেই রাজকীয় নয়, এর চলাফেরা ও ভাবভঙ্গিতেও রয়েছে রাজকীয় আভিজাত্য। সুন্দরবনের রাজা যখন গর্জন করে, তখন কেঁপে ওঠে সমস্ত বন। এর গর্জন শোনা যায় প্রায় ২ মাইল (৩.২ কিলোমিটার) দূর থেকেও। অন্য বাঘকে নিজের এলাকা জানান দিতে এভাবে জোরে গর্জন করে বাঘ।
৬. শ্লথ
শ্লথ এক প্রকার স্তন্যপায়ী বৃক্ষচারী জীব। এই শ্লথরা অনেক ধীরে নড়াচড়া ও চলাফেরা করে। এ জন্য এদের অমন নাম—শ্লথ বা অলস। এরা গাছে উলটো হয়ে ঝুলে থাকে। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায় ঘুমিয়ে। শ্লথ নিরামিষভোজী, অর্থাৎ পাতা, ফল ও ফুল খায়। বিজ্ঞানীদের মতে শ্লথের ধীরগতির পেছনের একটা বড় কারণ হলো এদের খাদ্যাভাস। শ্লথের খাবার হজম হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
৭. উটপাখি
পাখিদের সবচেয়ে বড় প্রজাতি উটপাখি। এদের উচ্চতা প্রায় ৯ ফুট (২.৭ মিটার) এবং ওজন প্রায় ৩০০ পাউন্ড (১৩৬ কেজি) হতে পারে। উটপাখি উড়তে পারে না, তবে দৌড়ানোয় অত্যন্ত দক্ষ। উটপাখির চোখ এদের শরীরের তুলনায় আকারে অনেক বড়। চোখের ব্যাস প্রায় ৫ ইঞ্চি (১২.৭ সেমি), যা আকারে একটি আপেল বা খেলার বলের সমান। অন্যদিকে, উটপাখির মস্তিষ্কের আকার প্রায় ২.৫ ইঞ্চি (৬.৩ সেমি)। অর্থাৎ মস্তিষ্কের চেয়ে এদের চোখ বড়। আর উটপাখির ডিমও বিশ্বের বৃহত্তম ডিম।