এই পাখি দেখলে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করুন

ক্যাসোয়ারিএআই আর্ট

পাখি হলো আকাশে ওড়া শান্ত-সুন্দর পালকে ঢাকা প্রাণী। বিশ্বে নানা দেশে নানা প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যায়। যার প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এক একটি প্রজাতি এক এক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এই বিশাল সংখ্যক পাখিদের মধ্যে কিছু পাখি ব্যতিক্রম তো থাকবেই। তেমনি একটি পাখি ক্যাসোওয়ারি। এদের সৌন্দর্য যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে এদের দেখা মাত্র সেই এলাকা দ্রুত ত্যাগ করা।

ক্যাসোয়ারি কিন্তু আমাদের দেশের পাখি না। এদের দেখা পাওয়া যায় নিউগিনির জঙ্গলে ও অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে। অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের তথ্য অনুযায়ী, এরা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পাখিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ক্যাসোয়ারি পাখি লম্বায় ৪ থেকে ৫.৬ ফুট পর্যন্ত হয়। স্ত্রী ক্যাসোয়ারির ওজন প্রায় ৭৬ কেজি পর্যন্ত হয়। পুরুষ ক্যাসোয়ারির ওজন ৫৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

যদি কেউ পাখিটিকে কাছ থেকে দেখতে আগ্রহী হও, তবে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে ক্যাসোয়ারি দেখে আসতে পারো।

অনেকে এদেরকে উটপাখি ভেবে ভুল করে। কারণ এদের পা ও শরীর দেখতে কিছুটা উটপাখির মতো। তবে উটপাখি থেকে এরা অনেকটা আলাদা। এদের আলাদা করা যায় মাথার ওপরের শিংয়ের মতো অংশটি থেকে। অনেকে এটা দেখে ভাবতে পারে, এটা মনে হয় ওদের হেলমেট। শিং এর মতো অংশটি দেখতে হেলমেটের মতোই। এই শিংটা ঘন কেরাটিন দিয়ে তৈরি। আমাদের চুল ও নখেও এই কেরাটিন থাকে। এডিনবরা চিড়িয়াখানার তথ্য অনুসারে, জঙ্গলের মধ্যে দ্রুত চলার সময় ক্যাসোয়ারি এই শিং ব্যবহার করে। এদের মাথা থেকে গলা পর্যন্ত পুরোটাই নীল বর্ণের। আর পুরো শরীর ঘন কালো পালকে ঢাকা।

ক্যাসোয়ারির বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পাখি। এই খ্যাতি ছাড়াও এর আরও একটি পরিচয় আছে। সেটা হলো বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক পাখি। বিশ্বে হাতে গোনা যে কয়েকটি পাখির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, ক্যাসোয়ারি এদের মধ্যে একটি। শুনে কিছুটা ভয় লাগারই কথা। ক্যাসোয়ারিদের দ্রুত গতি ও শারীরিক গঠন এদেরকে এতো বিপজ্জনক করে তুলেছে। এদের শক্তিশালী পায়ের সাহায্যে এরা ঘন জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের মধ্যেও ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার বা ৩১ মাইল বেগে দৌড়াতে সক্ষম। শক্তিশালী এই পায়ের শেষ প্রান্তে ধারালো নখরযুক্ত তিনটি আঙুল আছে। মধ্যের আঙ্গুলটি ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নিজেদের রক্ষা করতে আঙ্গুলগুলো অস্ত্রের মতো ব্যবহার করে, তীব্র আঘাত করতে পারে। এদের লাথি এত শক্তিশালী, শরীরে গভীর ক্ষত হতে পারে। এমনকি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি ও তীব্র রক্তপাত হতে পারে।

ক্যাসোয়ারির বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পাখি
ছবি: সানদিয়েগো জু

অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতিতে ক্যাসোয়ারির মতো বিপজ্জনক পাখি বাস করে। কিন্তু ক্যাসোয়ারি পাখির নাম শুনলে অস্ট্রেলিয়ানরাও কিছুটা ভয় পায়। বোঝাই যাচ্ছে কতটা বিপজ্জনক এরা। বিপদ বুঝলে এরা মানুষকেও আক্রমণ করতে পিছপা হয় না। ২০১৯ সালে, ফ্লোরিডায় ৭৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার নিজের জমিতে একটি ক্যাসোয়ারি পালন করতেন। কোনো কারণে তিনি হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যান, পাখিটি তাঁকে আক্রমণ করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। এমন ঘটনা খুব কম। ঘটনাটি ঘটার পর ফ্লোরিডায় সরকার ক্যাসোয়ারিকে কুমির ও বন্য বিড়ালের মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর বিপজ্জনক প্রাণীদের সঙ্গে তালিকাভুক্ত করে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অস্ট্রেলিয়াতে অন্যান্য প্রাণীদের আক্রমণের তুলনায় ক্যাসোয়ারির আক্রমণে আহত হওয়ার সংখ্যা অনেক কম। ক্যাসোয়ারি বিপদ না দেখলে কখনোই আক্রমণ করে না। তাই এদের দেখা পাওয়া মাত্রই ওই এলাকা ত্যাগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ক্যাসোয়ারি পাখিরা সরাসরি ডাইনোসর থেকে এসেছে। ক্যাসোয়ারি পাখি শুধু এদের অদ্ভুত চেহারার জন্যই পরিচিত নয়, এরা রেইনফরেস্ট ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফলভুক পাখি। অর্থাৎ এদের প্রধান খাদ্য হলো ফল। প্রতিদিন এরা অনেক রকমের ফল খায় এবং হজম করার পর সেগুলোর বীজ এদের মলত্যাগের মাধ্যমে বনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া বনের গাছপালা পুনরায় জন্মাতে এবং জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ক্যাসোয়ারি না থাকলে অনেক গাছের বীজ ছড়ানো কঠিন হয়ে পড়ত, যা বনের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা পেত। তাই আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক হলেও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় ক্যাসোয়ারিদের অবদান অনস্বীকার্য। পাখিটি উট পাখির মতোই, উড়তে পারে না। তবে বেশ উঁচুতে লাফ দিতে পারে।

আরেকটি দিক থেকে ক্যাসোয়ারি একটি বিরল প্রজাতির পাখি। ছানাদের লালন-পালনের প্রধান দায়িত্ব পালন করে পুরুষ ক্যাসোয়ারি পাখি। স্ত্রী ক্যাসোয়ারিরা ডিম পাড়ার পরই বাসা ছেড়ে চলে যায়। এরপর পুরুষ ক্যাসোয়ারি সেই ডিমগুলো তা দিয়ে ফোটায় এবং বাচ্চা বের হওয়ার পর এদের বড় করে। পুরুষ ক্যাসোয়ারিরা এদের বাচ্চাদের প্রতি খুবই রক্ষণাত্মক স্বভাবের হয়। এদের সবুজ রঙের ডিমগুলোও দেখতে বেশ আকর্ষণীয় হয়। যদি কেউ ক্যাসোয়ারির ডিমের খুব কাছে চলে আসে, তবে পুরুষ ক্যাসোয়ারি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। ডিমগুলো রক্ষার জন্যই।

পাখিটিকে কাছ থেকে দেখতে আগ্রহী হলে সতর্কতাগুলো মেনে চলো
ছবি: সানদিয়েগো জু

যদি কেউ পাখিটিকে কাছ থেকে দেখতে আগ্রহী হও, তবে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় গিয়ে ক্যাসোয়ারি দেখে আসতে পারো। সেখানে এদের জন্য আলাদা একটি জায়গা রাখা আছে। তবে দেখতে গিয়ে ওপরের সতর্কতাগুলো মেনে চলো।

সূত্র: সিএনএন, সানদিয়েগো জু, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ

আরও পড়ুন