পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ কীভাবে এল
আজকাল আমরা কিছু কেনার আগে পণ্যের মেয়াদ আছে কিনা যাচাই করে দেখি। মেয়াদ থাকলে আমরা পণ্যটি কিনি। সাধারণত সুপারশপ বা দোকান মেয়াদ না থাকলে পণ্য শেলফে রাখে না।
প্যাকেটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়। এই মানদণ্ড অনুযায়ী প্যাকেটে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকা আবশ্যক, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বা ইংরেজিতে যাকে এক্সপায়ারি ডেট বলা হয়।
এর অর্থ হলো, এই নির্দিষ্ট তারিখের পর এই পণ্য বা উপাদান খাওয়া বা গ্রহণ করা স্বাস্থ্যগত বা পরিবেশগত কারণে অনুচিত। খাদ্য, ঔষধ, মেডিকেল সাপ্লাই এবং গৃহস্থালি পণ্য, যেসবের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগাযোগ আছে, সেগুলোতে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
মূলত মার্কেটিংয়ের কারণেই এই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানো শুরু হয়। এই আইডিয়া যে দারুণ কাজে লেগেছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ বা লেবেলিংয়ের ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো নয়। প্রায় একশো বছর আগে সঠিক প্রক্রিয়ায় লেবেলিং করা শুরু হয়। সে সময় অনেকেই খাবারের গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিল কাপোন পরিবার নামে একটি খাদ্য উৎপাদনকারী পরিবার।
কাপোন পরিবারের ছিল ডেইরি বা দুগ্ধজাত খাবার উৎপাদনের ব্যবসা। ১৯৩০ সালে একদিন তাঁদের পরিবারের বেশ কয়েকজন দুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে এই পরিবারের একজন সদস্য আল কাপোন আবিষ্কার করেন যে, দুধ বেশি পুরোনো হলে তা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তখন তিনি বোতলে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানোর কথা বলেন। যদিও সে সময় বিষয়টি অন্য কেউ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেনি।
তবে, ইতিহাসের পাতায় আল কাপোন এই কারণে বিখ্যাত হননি। তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন অন্য কারণে। তিনি ছিলেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নামকরা অপরাধীদের একজন এবং নিউইয়র্ক ও শিকাগোর অন্যতম গ্যাংস্টার। অনেকে এটাকে নিছক গল্প ভাবলেও অনেকে মনে করেন এটা সত্যি। কাপোনদের কিন্তু দুধের ব্যবসা ছিল; তিনি আর তার ভাই রালফ বোতলে দুধ বিক্রি করতেন।
প্যাকেটে প্রথম মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানোর কৃতিত্ব মার্ক অ্যান্ড স্পেনসার নামের একটি চেইন স্টোরের। এটি ব্রিটেনের এক নামকরা চেইন শপ। প্রথমে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানোর উদ্দেশ্য কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা ছিল না। সালটা ছিল ১৯৭২।
মার্ক অ্যান্ড স্পেনসারের বিভিন্ন খাদ্যজাত পণ্যের মধ্যে একটি ছিল কেক। প্রতিষ্ঠানটি নানান ধরণের কেক বিক্রি করত। কেকের বিক্রি ক্রমশ কমে আসতে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ভাবল, যদি এর গায়ে উৎপাদনের মেয়াদের সঙ্গে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখও বসানো যায়, তাহলে আবার কেকের বিক্রি বেড়ে যাবে। মূলত মার্কেটিংয়ের কারণেই এই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বসানো শুরু হয়। এই আইডিয়া যে দারুণ কাজে লেগেছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়টি আইনে পরিণত করে। যার ফলে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীতে উৎপাদনের তারিখের সাথে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকা এখন বাধ্যতামূলক।
এখন সারা বিশ্বে আদর্শ প্যাকেজিংয়ের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, সেখানে অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকতেই হবে। না হলে পণ্য কেবল শেলফে জায়গা পাবে না। আর যদি ভুল করেও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ পার হওয়ার পরও কোনো পণ্য শেলফে থাকে, তাহলে সেই পণ্য উৎপাদনকারী ও বিক্রেতার কপালে জুটবে শাস্তি।