যে ৯টি কাজ করলে কোনো খাবারই আর নষ্ট হবে না

বিপর্যয় ঠেকাতে এবং এড়াতে যা করা যেতে পারে, সেটা স্পষ্ট—খাবার নষ্ট না করা! কথাটা অনেক সরল হয়ে যায়, তাই আমরা ৯টা আলাদা কাজের কথা চিন্তা করতে পারি। পৃথিবীর সবাই যদি এই ৯টা কাজ করতে শুরু করে, তাহলে প্রায় কোনো খাবারই আর ‘নষ্ট’ হবে না!

কাজ ১: অল্প দিয়ে শুরু করো

হতেই পারে, তুমি আস্ত একটা ঘোড়া খেতে পারবে। কিন্তু একবারে পুরো ঘোড়াটা প্লেটে নিয়ো না, অল্প করে করে নাও। খিদে না মিটলে আরেকটু চাইতেই পারবে তুমি।

কাজ ২: যেটা বেঁচে যাবে, সেটাকে ভালোবাসো

যদি এমনটা হয়েই যায় যে আধপ্লেট খেয়ে বাকিটুকু আর খেতে পারলে না, তাহলে সেটা ফেলে না দিয়ে ফ্রিজে রেখে দাও। চাইলেই পরের বেলায় খাবারটুকু খাওয়া যাবে।

কাজ ৩: চিন্তা করে বাজার করো

বলা হয়, খালি পেটে বাজারে না যেতে! খিদের জ্বালায় ইচ্ছা করতেই পারে, একরাশ জিনিসপত্র কিনে ফেলি। একই ঘটনা ঘটে যখন পরিকল্পনা ছাড়া বাজার করা হয়। বাসায় কোন জিনিস কতটুকু আছে আর আমার কতটুকু দরকার, সেটা ভেবে বাজার করো। তাহলে অতিরিক্ত জিনিস জমে আর নষ্ট হবে না।

কাজ ৪: ‘কুৎসিতদর্শন’ সবজিটা কেনো

গাজরটা দেখতে কেমন যেন বিদঘুটে? কোনো সমস্যা নেই। যতক্ষণ সেটা টাটকা আছে, খাওয়া যাবে। আমি-তুমি যদি না কিনি, হয়তো কেউই আর কিনবে না এবং দিনশেষে আমরা জানি, কী হবে।

কাজ ৫: ফ্রিজকে জিজ্ঞেস করো, কী অবস্থা

বাসার ফ্রিজের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা জরুরি। তার ভেতর কী অবস্থা চলছে, কে প্রায় শেষ হয়ে এল, কে অতিরিক্ত আছে—এসব জানা থাকলে খাবার নষ্ট করা কমানোটা সহজ হয়ে আসে।

কাজ ৬: ‘আগে এলে আগে’ ভিত্তিতে খাও

ধরো, বাসায় আগে থেকেই আপেল ছিল; আজ আরও কিছু আপেল আনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরোনো আপেলগুলো আগে খাও। নতুনগুলো খেতে শুরু করলে পুরোনো আপেল একসময় পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

কাজ ৭: খাবারের মেয়াদ সম্পর্কে ঘেঁটে দেখো

মোড়কের গায়ে যে মেয়াদ লেখা আছে, সেটার পর কি আসলেই খাবারটা খাওয়া যাবে না? ইন্টারনেটের যুগে এসব জানা এখন সহজ। সুতরাং গুগলে যাও, ঘেঁটে দেখো—ওই নির্দিষ্ট খাবারটার মেয়াদ দিয়ে কী বোঝায়। যদি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দুদিন খাওয়া যায়, খাও। আর যদি না যায়, চেষ্টা করো আগেই খেয়ে ফেলতে।

কাজ ৮: নষ্ট হওয়া খাবারকে সার বানানোর চেষ্টা করো

যদি কোনো কারণে খাবার নষ্ট হয়েই যায়, চেষ্টা করো সেটাকে যেন অন্তত সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তোমাদের কারও যদি বাড়িতে গাছ লাগানোর শখ থাকে বা প্রতিবেশী কারও থাকে বা আশপাশে খেতখামার থাকে, সেখানে খাবারটাকে সার হিসেবে কাজে লাগানো যায় কি না, দেখো। এখানে মজার ব্যাপারটা বলে রাখা জরুরি। খাবার যখন আলো–বাতাস পেয়ে পচে যায়, তখনো গ্রিনহাউস গ্যাস বের হয় বটে। কিন্তু সেটা একটু কম ভয়ংকর গ্যাস।

কাজ ৯: যার দরকার, তাকে খাবার দাও

যে মুহূর্তে তুমি এই লেখা পড়ছ, শহরে হোক কিংবা গ্রামে—তোমার খুব কাছাকাছি কিছু মানুষ আছে, যারা আজ আধপেটা খেয়ে থাকবে। বাসায় যে খাবার দুদিন বাদে নষ্ট হয়ে যাবে, রেস্তোরাঁয় ভুলে যেটুকু খাবার বেশি নিয়ে ফেলেছ, বিয়ের আসরে যে খাবারটুকু কেউ খাচ্ছে না—চেষ্টা করো, সেটা যেন সেই মানুষটার হাতে পৌঁছায়, যার আসলেই খাবারের অভাব। একটা ভালো উপায় হতে পারে এমন—তোমার বা আশপাশের বাসায় যে মানুষটা রোজ কাজ করতে আসেন, তাঁর হাতে খাবারটা দেওয়া।

আমার কেন যেন মনে হয়, কোথাও খুব ভালো কিছু একটা ঘটবে। কেউ কেউ আসলেই এই ৯টা কাজ করবে। আর কেউ কেউ হবে তারও বড়—তারা আরও ৯ জনকে ধরে এই ৯টা কাজ করাবে।

ইউনিসেফ যখন পরেরবার এই দেশে আসবে শিশুদের পুষ্টির তথ্য বা এমন কিছু একটা নিয়ে গবেষণা করতে, তারা আবিষ্কার করবে, পৃথিবীর এই কিনারায় আশ্চর্য কিছু মানুষ আছে, যেখানে একজন মানুষ যদি খেতে পায়, তার চারপাশের মানুষেরাও খেতে পারে।

তথ্যসূত্র: ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ইউনিসেফ, নিউইয়র্ক টাইমস এবং বিল গেটস