ধূমকেতুর লেজ থাকে কেন

ধূমকেতু ছুটে যায় আকাশের বুক চিরে

ধূমকেতুর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হ্যালির ধূমকেতু। পৃথিবী থেকে খালি চোখে শুধু এই ধূমকেতুকেই দেখা যায়। তাও ৭৫ বছর পরপর হ্যালির ধূমকেতু দেখতে পায় পৃথিবীবাসী। শেষবার দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। আবার এই ধূমকেতু দেখা যাবে ২০৬১ সালের মাঝামাঝি সময়ে।

আকার খেয়াল করলে দেখবে, ধূমকেতুর পেছন দিকে থাকে লেজ। গ্রহ-উপগ্রহ, গ্রহাণু বা নক্ষত্রের সঙ্গে ধূমকেতুর মূল পার্থক্য লেজ। বরফকণা, ধুলা আর পাথর দিয়ে গঠিত হয় ধূমকেতু। গ্রহের আকর্ষণে কখনো কোনো ধূমকেতু আটকে পড়ে সূর্যের চারপাশে কোনো এক কক্ষপথে। এরপরই শুরু হয় লেজ হারানো। সূর্যের তাপে নিজের উপাদান হারায় ধূমকেতু। লেজের মাধ্যমে উপাদানগুলো বাষ্প হয়ে যায়।

ধূমকেতুতে মূলত তিনটি অংশ থাকে। প্রথম অংশ নিউক্লিয়াস। এটি সবচেয়ে কঠিন অংশ। নিউক্লিয়াস ধূমকেতুর মাথার দিকে থাকে। পাথর, ধুলা আর বরফ দিয়ে তৈরি হয় নিউক্লিয়াস। ধূমকেতুর দ্বিতীয় অংশ কোমা। গ্যাস ও ধুলার তৈরি এ অংশ নিউক্লিয়াসের চারপাশ ঘিরে তৈরি হয়। সবশেষের অংশটি লেজ। ধূমকেতুর ছুটে চলার দিকের বিপরীতে এর অবস্থান। গ্যাস ও ধূলিকণা দিয়ে তৈরি এই লেজ ধূমকেতুর মূল অংশ থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে নিজের উপাদান হারিয়ে বিলীন হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

ধূমকেতুর এই বিলীন হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে সূর্য। সূর্যের কাছাকাছি গেলে প্রচণ্ড উত্তাপে ধূমকেতুর কেন্দ্রের বরফ সরাসরি গ্যাস বা বাষ্পে পরিণত হয়। এই গ্যাস ও ধূমকেতুর ধূলিকণা মিলেমিশে তৈরি করে ধূমকেতুর কোমা ও লেজ। প্রতিবার সূর্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় কিছুটা করে বরফ ও গ্যাস হারায় ধূমকেতু। এগুলোই দেখা যায় লেজ হিসেবে। অর্থাৎ ধূমকেতুর লেজ হলো ক্ষয়ে যাওয়ার চিহ্ন। সময়ের সঙ্গে সূর্যকে বারবার প্রদক্ষিণ করতে করতে ধূমকেতু হারাতে থাকে বরফ ও উদ্বায়ী উপাদান। একটা সময় আর লেজ তৈরির মতো উপাদান অবশিষ্ট থাকে না।

ধূমকেতুর উদ্বায়ী উপাদান ফুরিয়ে গেলেও সূর্যের চারদিকে ঘুরতে পারে। কোমা বা লেজ ছাড়া এসব ধূমকেতুকে বলা হয় এক্সটিঙ্কট কমেট। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী মনে করেন, গ্রহাণু আসলে এক্সটিঙ্ক কমেট বা মলিন ধূমকেতু। তবে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।

গড়পড়তা একটি ধুমকেতুর ভর হয় প্রায় ১০১৩ কেজির মতো। সাধারণ একটি ধূমকেতুর জীবনকাল শেষ হতে প্রয়োজন প্রায় ২ হাজার বছরের বেশি সময়।

ধূমকেতুর উপাদানগুলো নোংরা তুষারগোলার মতো। সূর্য থেকে দূরে থাকার সময় ধূমকেতু মহাকাশে ঘুরতে থাকা পাথরের মতো। কিন্তু সূর্যের কাছে এলে তাপ ধূমকেতুর গ্যাসকে বাষ্পীভূত করে। ফলে ধূমকেতু থেকে বের হয় ধুলা, ইলেকট্রন এবং আয়ন নির্গত হয়। যাকে আমরা লেজ হিসেবে জানি। সূর্য থেকে দূরে চলে গেলে ধূমকেতুর লেজও মিলিয়ে যায়। দূরত্বের কারণে তখন আর সূর্যের তাপ ও চাপ তেমন প্রভাব ফেলে না।