যে শহরে সবাই এক ছাদের নিচে বাস করে

১৪ তলা ভবনে বাস করে শহরের সব মানুষছবি: এনপিআর

মাঝেমধ্যে মনে হয়, ইশ্‌, সব বন্ধু যদি একসঙ্গে এক বাসায় থাকতে পারতাম! আবার মনে হয়, কাজিনরা মিলে একসঙ্গে এক ছাদের নিচে থাকলে নিশ্চয়ই খুব মজা হতো।

কিন্তু পৃথিবীতে এমন এক শহর আছে, যেখানে শুধু বন্ধুরা নয়, এমনকি শুধু কাজিনরাও নয়, গোটা শহরের সবাই থাকে এক বিল্ডিংয়ে। সব বাসিন্দা, তাদের সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠানও একই ভবনে। এ ভবনে একটি হাসপাতাল, একটি স্কুল, একটি পুলিশ স্টেশন, একটি মুদিদোকান, একটি গির্জা, একটি ডাকঘর এবং এমনকি নগর সরকারও রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য আলাস্কার ছোট্ট শহর হুইটিয়ারে বসবাসকারী ৩০০ জনের সবাই আসলে এক ছাদের নিচে বাস করে! যদিও একটি ছাদ বললে ভুল হবে, আসলে বেগিচ টাওয়ার নামের একটি বিশাল ১৪ তলা বিল্ডিং এটা। ভবনটি আগে মানুষ বসবাসের উপযোগী ছিল না। এখন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কাঠামো হয়ে উঠেছে বেগিচ টাওয়ার। বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু রয়েছে এই টাওয়ারে।

হুইটিয়ার আলাস্কার বৃহত্তম শহর অ্যাঙ্কোরেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। অ্যাঙ্কোরেজ থেকে এ শহরে যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। তবে হুইটিয়ারে পৌঁছানো এত সহজ না যে বাসে বা গাড়ি চালিয়ে হুট করে চলে গেলে। শহরে শুধু একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে যাওয়া যায়। সুড়ঙ্গের ভেতরে থাকে তুষারস্রোত। আগে শীতকালে হুইটিয়ারে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় ছিল ট্রেন। এখন গাড়িও সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। গাড়িতে চেপে যেতে হলে মানতে হবে কিছু নিয়ম। বরফ ও তুষারের কারণে নিয়মগুলো তৈরি করা হয়েছে। সুড়ঙ্গের দুই দিকে ঘণ্টায় মাত্র একবার যাতায়াত করতে পারে গাড়ি। রাত সাড়ে ১০টায় বন্ধ করে দেওয়া হয় সুড়ঙ্গটি। হুইটিয়ারে যেতে চাইলে দেখে নিতে হবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।

হুইটিয়ারে বসবাস করা ঠিক আর দশটা শহরে থাকার মতো না। যেমন এই শহরের বাসিন্দা এরিকা ফিটজেরাল্ড। তিনি মনে করেন, সুড়ঙ্গের কারণে নিজেদের কিছুটা বিচ্ছিন্ন লাগে অন্যান্য শহর থেকে। আবার এই শহরে যারা ঘুরতে যায়, তাদের বোঝানো কঠিন যে সুড়ঙ্গ বন্ধ হওয়ার আগে তাদের চলে ফিরে যেতে হবে। অথবা সুড়ঙ্গ বন্ধ হয়ে গেলে তারা হুইটিয়ারে প্রবেশ করতে পারবে না। তা সত্ত্বেও অ্যাডভেঞ্চারের আশায় অনেক মানুষ এ শহরে বসবাসের জন্য চেষ্টা করে। বেগিচ টাওয়ারে বসবাস করতে কেমন লাগে, তা ভিডিও করে টিকটকে ভাইরাল হয়েছিলেন হুইটিয়ারের বাসিন্দা জেনেসা লরেঞ্জ।। বাকনার বিল্ডিং নামে একটি পরিত্যক্ত ভবন দেখিয়েছিলেন জেনিসা। একসময় এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভবন ছিল সেটা।

হুইটিয়ারে বসবাস করা কারও কারও কাছে অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। তবু এর বাসিন্দারা এটি উপভোগ করেন। এখানে স্কুলে আছে প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী। যাদের বাসা হয়তো একে অপরের থেকে মাত্র একতলা দূরে। এভাবে শহরের সবাই এক পরিবারের মতো। আমরা যা স্বপ্ন দেখি, হুইটিয়ারে তা বাস্তব।

আরও পড়ুন

হুইটিয়ার হলো অ্যাঙ্কোরেজের মূল বন্দর। আলাস্কার ব্যস্ততম বন্দরগুলোর মধ্যে একটি বন্দর হুইটিয়ার। ভ্রমণকারীরা আলাস্কা উপসাগরে ভ্রমণের জন্য হুইটিয়ার বন্দর ব্যবহার করে।