বিশ্বের দ্রুততম মাছ

পৃথিবীতে প্রায় ৩৪ হাজার ৯০০ প্রজাতির মাছ আছে। আসলে আমরা এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ মাছের প্রজাতি খুঁজে পেয়েছি। কারণ, এখনো সমুদ্রের প্রায় ৮০ শতাংশ জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। অর্থাৎ অনাবিষ্কৃত রয়েছে। না জানি সেখানে আরও কত লাখ লাখ প্রজাতির মাছ রয়েছে। কিন্তু আমরা আজ এমন ১০টি মাছের ব্যাপারে জানব, যা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী। একটা কথা জানিয়ে রাখি তোমাদের। মাছের গতি রেকর্ড করা কিন্তু খুবই দুরূহ কাজ। এ কারণে একেক গবেষণায় একেক ধরনের গতির রেকর্ড পাওয়া যায়। আমরা এখানে জনপ্রিয় বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের তালিকা অনুযায়ী তালিকা তৈরি করেছি। ছবি: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস। গ্রন্থনা: কাজী আকাশ

ব্ল্যাক মার্লিন—১২৯ কিলোমিটার

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির মাছ ব্ল্যাক মার্লিন। মার্লিন প্রজাতীর মাছটি ঘণ্টায় ১২৯ কিলোমিটার বেগে সাঁতার কাটে। সাধারণত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে এ মাছের দেখা মেলে। বিদেশে ব্ল্যাক মার্লিনের দারুণ কদর আছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রায় ২০০ কেজি ওজনের একটা ব্ল্যাক মার্লিন ধরা পড়েছিল। মাছটি বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকায়। দেশে এ মাছ জনপ্রিয় নয় বলে বেশি দাম ওঠেনি। ৭৫০ কেজি থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে মাছটি।

সেইলফিশ—১১০ কিলোমিটার

প্রায় ১০ ফুটের এ মাছটি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার বেগে সাঁতার কাটতে পারে। অনেকে মনে করেন, সেইলফিশ বিশ্বের দ্রুততম মাছ। মাছটির ঠোঁট লম্বা এবং চোয়ালে দাঁত আছে। ওজন হতে পারে ৯০ কেজি পর্যন্ত। এ মাছটি খাওয়ার উপযোগী হলেও বাংলাদেশে প্রচলন নেই। প্রায়ই দেশের জেলেদের জালে ধরা পড়ে সেইলফিশ। দেখতে অনেকটা টুনা মাছের মতো বলে অনেকে সেইলফিশকে টুনা মাছ বলে চালিয়ে দেন।

স্ট্রিপড মার্লিন—৮০ কিলোমিটার

মার্লিন প্রজাতির মাছ সবচেয়ে গতিশীল। পানির ১০০ মিটারের মধ্যে থাকে এগুলো। তাই সহজেই শিকার করা যায়। প্রায় ১০ ফুট ওজনের এ মাছটি ২২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। স্ট্রিপড মার্লিনের জীবন ১০ বছরের। নারী স্ট্রিপড মার্লিন প্রজনকালে কয়েক দিনের মধ্যে ১২ কোটি ডিম ছাড়তে পারে।

ওয়াহু—৭৮ কিলোমিটার

মাছটি ওনা নামেও পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটাকে বলে হু। বাংলাদেশে এটি তেমন পরিচিত নয়। ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে এদের দেখা মেলে। ৮ ফুটের এই মাছটির ওজন হতে পারে ৮৩ কেজি পর্যন্ত।

শর্টফিন মকো শার্ক—৭৪ কিলোমিটার

সবচেয়ে দ্রুতগামী হাঙর হিসেবে এটি পরিচিত। ১৮১০ সালে প্রথম এই হাঙরের সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব শীতপ্রধান সাগরে এদের পাওয়া যায়। ১০ ফুটের এই হাঙর প্রায় ২০ বছর বাঁচে। ওজন হয় প্রায় ৫৫০ কেজি। ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার গতিতে এরা শিকারকে ধাওয়া করে।

আটলান্টিক ব্লুফিন টুনা—৭০ কিলোমিটার

পূর্ব ও পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের পাশাপাশি ভূমধ্যসাগরেও পাওয়া যায় এই ব্লুফিন টুনা। ১৫০ কেজি ওজনের এই মাছ ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। তবে এটি ৬৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। জাপানে এ মাছ প্রচুর জনপ্রিয়। আপাতত মাছটি নিয়ে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও বিগত ৪০ বছরে এর সংখ্যা কমেছে।

ব্লু শার্ক—৬৯ কিলোমিটার

হলিউডের বিভিন্ন সিনেমায় নিশ্চয়ই হাঙরকে মানুষের পেছনে ধাওয়া করতে দেখেছ। রক্তের গন্ধ পেলেই দূর থেকে অতি দ্রুত ছুটে আসে হাঙর। তবে মানুষকে ধাওয়া করে হত্যা কররা ব্যাপারটা মিথ্যা হলেও গতির ব্যাপারটা কিন্তু সত্য। ঘণ্টায় ৬৯ কিলোমিটার গতিতে এরা ছুটতে পারে। এদের প্রধান খাবার স্কুইড। বিশ্বের সব নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাগরে এদের দেখা পাওয়া যায়।

বোনফিশ—৬৪ কিলোমিটার

গতির দিক থেকে সোর্ডফিশের সমান। তবে অনেকের মতে বোনফিশের গতি আরও বেশি হতে পারে। এখন পর্যন্ত ৯ প্রজাতির বোনফিশের সন্ধান পাওয়া গেছে। আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের এদের দেখা মেলে। সর্বোচ্চ প্রায় সাত কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে এ মাছের। জীবনকাল প্রায় ২০ বছরের।

সোর্ডফিশ—৬৪ কিলোমিটার

আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে পাওয়া যায় সোর্ডফিশ। বাংলাদেশে এটি তলোয়ার মাছ নামে পরিচিত। লম্বায় প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন হতে পারে ৬৫০ কেজি পর্যন্ত। মাছগুলো চার-পাঁচ বছর বয়সে বাচ্চা দেয়। গড় আয়ু প্রায় ৯ বছর। তবে সর্বোচ্চ ১৬ বছর বাঁচার রেকর্ড আছে এ মাছের।

১০

উড়ুক্কু মাছ—৫৬ কিলোমিটার

উড়ুক্কু মাছ আসলেই উড়তে পারে। বাতাসের গতি বা ঢেউয়ের অবস্থার ওপর নির্ভর করে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৭১ প্রজাতির উড়ুক্ক মাছ রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৬ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে এরা। এ মাছ খাওয়া যায়। বাংলাদেশেও তিন প্রজাতির উড়ুক্কু মাছ পাওয়া যায়।

ফিচার থেকে আরও পড়ুন