সম্প্রতি আর্জেন্টিনায় একটি মৃত হাঙরের পেট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিখোঁজ এক ব্যক্তির দেহাবশেষ। তিনি যেখানে নিখোঁজ হয়েছিলেন, তার কাছাকাছি এলাকায় জেলেদের জালে হাঙরটি ধরা পড়ে। ফলে গণমাধ্যমে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়, হাঙরটি মানুষটিকে হত্যা করতে পারে। তবে পুলিশ ও হাঙরবিশেষজ্ঞ সন্দেহ করছেন, হাঙরটি খাওয়ার আগেই লোকটি মারা গিয়েছিল।
ডিয়াগো বারিয়া। বয়স ৩২ বছর। বাস করেন আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়ার চুবুত শহরে। স্পেনের সংবাদপত্র এল পাইসের রিপোর্ট অনুসারে, তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় চার দিন পর স্থানীয় পুলিশ বারিয়ার গাড়ি ও হেলমেট খুঁজে পান নিকটবর্তী সৈকতে। তবে বারিয়ারের মৃতদেহ সেখানে ছিল না। ফলে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়।
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় জেলেদের জালে তিনটি স্কুল হাঙর ধরা পড়ে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘গ্যালিওরহহিনাস গ্যালিয়াস’। হাঙরগুলোকে কাটা হলে একটির পেটে পাওয়া যায় মানুষের হাত ও পা। উল্লেখ্য, হাঙরের মাংস, পাখনা ও লিভারের জন্য বিশ্বব্যাপী হাঙর শিকার করা হয়। যাহোক, হাঙরের পেটে মানুষের হাত পা দেখে জেলেরা চমকে ওঠেন। তাঁরা সন্দেহজনক সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হস্তান্তর করেন পুলিশের কাছে। পুলিশ নেমে পড়ে তদন্তে। বারিয়ার হাতে যে ট্যাটু আঁকা ছিল, সে রকম একটি ট্যাটু পাওয়া যায় হাঙরের পেটে পাওয়া হাতেও। পুলিশ ধরেই নিল, এই দেহাবশেষ বারিয়ারের। কিন্তু শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
এবার মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আগেই বলেছি, মানুষকে সাধারণত আক্রমণ করে না হাঙর। তাহলে এখানের ঘটনাটি কী? কীভাবে বারিয়ার পৌঁছে গেলেন হাঙরের পেটে? পুলিশ বলছেন, হাঙরের আক্রমণে বারিয়ারের মৃত্যু হওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা সম্পূর্ণ ঘটনাটি সাজিয়েছেন এভাবে যে গাড়ি চালানোর সময় হয়তো কোনো পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা গিয়েছিলেন বারিয়া। তারপর তাঁর মৃতদেহ ভেসে ওঠে সমুদ্রে। মূলত সেই মৃতদেহটিই খেয়েছিল হাঙরটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী এবং ম্যাসাচুসেটস মেরিন ফিশারিজের হাঙর প্রোগ্রামের প্রধান গ্রেগরি স্কোমাল বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আমি একমত। হাঙরটি বারিয়ারকে হত্যা করেছে, এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।’
গ্রেগরি স্কোমাল আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মাঝারি থেকে বড় আকারের স্কুল হাঙর পাওয়া যায়। জেলেদের জালে যে হাঙর ধরা পরেছিল, সেগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ ফুট। এরা সাধারণত সমুদ্রের নিচের স্তরের খাবার খায়। কিন্তু এগুলো সমুদ্রের বড় মাছ ও স্কুইডও খায়। এদের পক্ষে জীবিত মানুষ খাওয়া প্রায় অসম্ভব।’
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী গ্যাভিন নেইলরের মতে, ‘স্কুল হাঙর কোনো মানুষকে আক্রমণ করতে পারে না। এই প্রজাতির হাঙর মানুষ শিকার করেছে, এমনটি আগে শোনা যায়নি।’
হলিউডের সিনেমার বদৌলতে কমবেশি সবাই আমরা হাঙর চিনি। তাই এদের স্বভাবও আমাদের অজানা নয়। মানুষ পেলেই আক্রমণ করে। জাহাজ বা নৌকা ডুবলেই মানুষগুলোকে যেতে হয় হাঙরের পেটে। আর রক্ষা নেই। নিশ্চিত মৃত্যু। তবে এসব সিনেমার গল্প। বাস্তবের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে হাঙর পেট পূজা করার জন্য কখনোই মানুষকে আঘাত করে না।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ক্রিস লো। তিনি দুই বছর সাদা হাঙরের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন, মানুষকে আক্রমণ করার কোনো আগ্রহই ওদের নেই। তবে অন্য হাঙরেরা যে একেবারে আক্রমণ করে না, তা নয়। ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইন্টারন্যাশনাল শার্ক অ্যাটাক ফাইল অনুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হাঙরের কামড় খেয়েছে ৪১ জন এবং এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বারিয়ার কপালে কী ঘটেছিল, তা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব নয়। এখানে দুটি সম্ভাবনা দেখলাম। হয় বারিয়ার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, তারপর হাঙরে খেয়েছে, নয়তো হাঙর তাঁকে আক্রমণ করে খেয়েছে। এর বাইরে আরও একটি সম্ভাবনা থাকতে পারে। বারিয়ারের কোনো শত্রু ছিল। সে বারিয়ারকে সমুদ্রের কাছে মেরে সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। তারাপর হাঙর তাঁকে খেয়ে ফেলেছে। কী, থ্রিলার গল্পের মতো লাগছে? চাইলে তুমি কল্পনার ডানা মেলে খুঁজে বের করতে পারো আরও অনেক সম্ভাবনা।