বর্গ করার সহজ নিয়ম

অঙ্ক করতে অনেকেই ভয় পায়। কেন যেন গণিতের নাম শুনলেই অনেকের বুকে কাঁপন ধরে। সেই ভয় যদি তোমার না থাকে, তাহলে বলতে হয় তুমি একজন গণিতপ্রেমী। কিন্তু কথা হলো অধিকাংশ শিক্ষার্থী কেন গণিতকে ভয় পায়? একটা কারণ হতে পারে, গণিত মুখস্থ করা যায় না। একটু বুঝে, চিন্তাভাবনা করে সমাধান করতে হয়। তুমি কি জানো, সব অঙ্ক করতে চিন্তাভাবনার দরকার হয় না। কিছু অঙ্ক আছে, যা খাতা–কলম ছাড়াই শুধু মনে মনে সমাধান করা যায়? বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? চলো, আজ তাহলে সে রকম সহজ গণিতের একটি বিষয় দেখানো যাক।

আজ আমরা দেখব কীভাবে সহজে বর্গ করা যায়। বর্গ সহজে করতে হলে আগে তো জানতে হবে বর্গ জিনিসটা কী? তোমরা নিশ্চই জানো বর্গ কী। না জানলেও সমস্যা নেই। বর্গ মানে কোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়েই গুণ করা। যেমন ধরো, ৬-এর বর্গ মানে (৬) বা ৬×৬=৩৬। এটাকে বলে এক অঙ্কের বর্গ। শুধু নামতা মুখস্থ থাকলেই এক অঙ্কের বর্গ নির্ণয় করা যায়। কিন্তু দুই বা তিন অঙ্কের বর্গ নির্ণয় করতে হলে? অঙ্ক এবং সংখ্যার পার্থক্য জানো তো? ০-৯ পর্যন্ত অঙ্ক, বাকি সব সংখ্যা। অর্থাৎ সংখ্যা লিখতে হলে কমপক্ষে দুটি অঙ্ক লিখতে হবে। যেমন ১৫ লিখতে দুটি অঙ্ক লাগে, ১ ও ৫। যাহোক, এবার বর্গে ফিরে যাই। প্রথমে একটি দুই অঙ্কের সংখ্যা দেখা যাক। ধরো, ৫৫–এর বর্গ করতে চাও তুমি। হুট করে কি বলতে পারবে ৫৫× ৫৫= কত? না, সম্ভব নয়। তবে আজকের এই সমাধান দেখার পরে কিন্তু তুমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর বলতে পারবে। এ জন্য আছে একটি শর্ত। কী সেই শর্ত? যে সংখ্যাটির বর্গ করতে চাই, তার শেষে অবশ্যই থাকতে হবে ৫। এই শর্ত মেনে সংখ্যা বাছাই করলে আরও দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

১. দুই সংখ্যার প্রথম অঙ্কটিকে তার পরের অঙ্ক দিয়ে গুণ করতে হবে (যেমন ৫ থাকলে ৬ দিয়ে এবং ৭ থাকলে ৮ দিয়ে গুণ)।

২. গুণফলের পাশে ২৫ বসিয়ে দিতে হবে।

শর্ত কঠিন মনে হচ্ছে? তাহলে একটা উদাহরণ দিয়েই দেখা যাক।

ধরি, ৫৫–এর বর্গ নির্ণয় করতে হবে।

তাহলে, ৫×৬=৩০ (কারণ ৫–এর পরবর্তী সংখ্যা ৬)

এবার গুণফল ৩০–এর সঙ্গে ২৫ পাশাপাশি বসিয়ে পাই, ৩০২৫।

সুতরাং (৫৫)= ৫৫×৫৫= ৩০২৫

আচ্ছা, আরেকটা উদাহরণ দেই। তাহলে আর বুঝতে সমস্যা হবে না।

(৭৫)= কত?

৭×৮=৫৬ (কারণ ৭–এর পরবর্তী সংখ্যা ৮)

সুতরাং, ৭৫×৭৫=৫৬২৫। অর্থাৎ গুণফল যা–ই হোক, সেটার পাশে ২৫ বসিয়ে দিলেই পাওয়া যাবে উত্তর।

তাহলে এবার তুমি বলো তো, ৯৫ বর্গ করলে কত হবে?

তোমার উত্তর কি ৯০২৫ হয়েছে? তাহলে তো শিখেই ফেললে। দারুণ মজার অঙ্ক না?

এবার নিজেই নিচের বর্গগুলো করো তো।

(১৫)= ?
(২৫)= ?
(৩৫)= ?
(৪৫)= ?
(৬৫)= ?
(৭৫)= ?
(৮৫)= ?

আচ্ছা, এবার এই একই কৌশল ব্যবহার করে দুই সংখ্যার গুণ করাও সম্ভব। তবে সেখানেও কিন্তু আছে দুটি শর্ত।

১. দুই সংখ্যার প্রথম অঙ্কটি হতে হবে একই। অর্থাৎ, যে সংখ্যা দুটি তুমি গুণ করতে চাও, তার প্রথম অঙ্কটি একই হতে হবে। (যেমন ৫৬×৫৪, এখানে দুটি অঙ্কের শুরুতেই ৫ আছে)

২. দ্বিতীয় অঙ্ক দুটির যোগফল হতে হবে ১০ (যেমন ৫৬ ও ৫৪ গুণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অঙ্ক দুটির যোগফল ৬+৪=১০)।

এবার ওপরের শর্ত মেনে তুমি যদি সংখ্যা পাও, তাহলে মনে রাখতে হবে আর মাত্র দুটি জিনিস।

১. দুই সংখ্যার প্রথম অঙ্কটিকে তার পরের অঙ্ক দিয়ে গুণ করতে হবে (৩ থাকলে ৪ দিয়ে, ৭ থাকলে ৮ দিয়ে গুণ)।

২. যে অঙ্ক দুটি যোগ করলে ১০ হবে, সেই অঙ্ক দুটি গুণ করে পাশে বসিয়ে দিতে হবে। (যেমন ৫৬×৫৪ তে ৬×৪=২৪)

বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে? একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ধরি, আমাদের ৪২ ও ৪৮ গুণ করতে হবে। শর্ত কিন্তু ঠিক আছে। (প্রথম অঙ্ক ৪ এবং ২ ও ৮ যোগ করলে হয় ১০)

তাহলে, ৪×৫=২০ (৪–এর পরের অঙ্ক ৫)

এবং ২×৮=১৬

সুতরাং, ৪২×৪৮= ২০১৬

এবার তুমি করে দেখো তো, ৯৭ ও ৯৩ গুণ করলে কত হয়?

উত্তর ৯০২১ হয়েছে? (৯×১০=৯০ এবং ৭×৩=২১। উত্তর: ৯০২১)

একইভাবে, ৮৪×৮৬= ৭২২৪

এবার তোমরা নিজেরা এ রকম প্রশ্ন তৈরি করতে পারো? না পারলে সমস্যা নেই। আমি প্রশ্ন করে দিচ্ছি। তুমি বাসায় বসে একা একা সমাধান করো।

৩১×৩৯=?
৩২×৩৮=?
৩৩×৩৭=?
৩৪×৩৬=?

এগুলোর উত্তর বের করো। তারপর নিজে এ রকম আরও কয়েকটি প্রশ্ন তৈরি করে সেগুলোর উত্তর বের করতে পারো।